ইরানের অস্ত্র ব্যবস্থাপনায় মার্কিন সাইবার হামলা!

SHARE

ইরানের কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাপনা ও গোয়েন্দা নেটওয়ার্কের ওপর সাইবার হামলা চালিয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্র দাবি করেছে। গত বৃহস্পতিবার হরমুজ প্রণালির কাছে ইরান একটি মার্কিন ড্রোন ভূপাতিত করার পর পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে এ হামলা চালানো হয়।
গত শনিবার ওয়াশিংটন পোস্ট এক প্রতিবেদনে এই দাবি করে। তবে ইরানের পক্ষ থেকে এ নিয়ে কিছু বলা হয়নি। ইরানের গণমাধ্যম বলছে, এটি মার্কিন মিডিয়ার ধাপ্পাবাজি।
এর আগে গত শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, ড্রোন হারানোর প্রতিশোধ নিতে ইরানের ওপর সামরিক হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েও শেষ মুহূর্তে তিনি তা বাতিল করেন। ধারণা করা হচ্ছে, গত বৃহস্পতিবার সাইবার হামলা করে ইরানের যুদ্ধাস্ত্র ব্যবস্থাপনা অকেজো করে দেওয়ার সঙ্গে পরদিন শুক্রবার সামরিক হামলা চালানোর পরিকল্পনার যোগসূত্র থাকতে পারে; যদিও পরদিন শেষ মুহূর্তে সামরিক হামলার পরিকল্পনা বাতিল করেন ট্রাম্প।
ওয়াশিংটন পোস্টের খবরে বলা হয়, ইরানের অভিজাত বাহিনী ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড পরিচালিত রকেট ও মিসাইল ব্যবস্থাপনা ছিল মার্কিন সাইবার হামলার টার্গেট। ওই হামলার কারণে ইরানের কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে যায়। এ ছাড়া পারস্য উপসাগরে জাহাজ ট্র্যাকিং করাও ছিল এ হামলার লক্ষ্য। মার্কিন ড্রোন নামানোর প্রতিশোধ নিতে মার্কিন সাইবার কমান্ডকে গোপনে এ হামলার অনুমতি দেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
বার্তা সংস্থা এপির খবরেও একই তথ্য দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র কয়েক সপ্তাহ ধরেই সাইবার হামলার পরিকল্পনা করে আসছিল। মূলত পারস্য উপসাগরে ট্যাংকারগুলোতে মাইন হামলার প্রতিশোধ নেওয়াই ছিল এর লক্ষ্য। ওয়াশিংটন পোস্ট ও এপি দুই গণমাধ্যমের খবরেই বলা হয়, হামলার লক্ষ্য ছিল ইরানি সমরাস্ত্র ব্যবস্থাপনাটি কিছু সময়ের জন্য অফলাইনে রাখা।
এর আগে গত শনিবার মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি দপ্তর সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, ইরান যুক্তরাষ্ট্রের ওপর সাইবার হামলার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ছাড়া ইরান মার্কিন যুদ্ধ জাহাজ ব্যবস্থাপনার ওপরও হামলা চালানোর চেষ্টা করে আসছে।
সাইবার নিরাপত্তা ও ভৌত নিরাপত্তা এজেন্সির পরিচালক খ্রিস্টোফার ক্রেবস বলেন, ইরানের বিরুদ্ধে এই সাইবার তৎপরতা আক্রোশপূর্ণ। এ কাজে তারা ধ্বংসাত্মক ‘ওয়াইপার’ অ্যাটাক ব্যবহার করে। এর মাধ্যমে নেটওয়ার্কের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়া যায়।
তবে ইরানের ফার্স সংবাদ সংস্থা এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, এই খবরের বিষয়ে ইরানের পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য করা হয়নি। এটি এখনো পরিষ্কার নয় সাইবার হামলা সফল হয়েছিল, নাকি ব্যর্থ। এটি মার্কিন মিডিয়ার ধাপ্পাবাজি, যাতে জনমত অনুকূলে আনা যায় এবং ড্রোন হারানোর পর হোয়াইট হাউসের সুনাম ফিরিয়ে আনা যায়।
উপদেষ্টাদের সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠক : প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত শনিবার ক্যাম্প ডেভিডে তাঁর উপদেষ্টাদের ভিড়ে ব্যস্ত সময় পার করেন। এ সময় প্রাথমিকভাবে মন্তব্য করতে গিয়ে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, তিনি ইরানের বন্ধু হতে আগ্রহী, যদি দেশটি তার পরমাণু অস্ত্র ত্যাগে সম্মত হয়। ট্রাম্প বলেন, ‘যখন তারা (ইরানিরা) এটিতে সম্মত হবে, তারা একটি সমৃদ্ধ দেশ পাবে। তারা অনেক সুখী হবে এবং আমি হব তাদের সেরা বন্ধু (বেস্ট ফ্রেন্ড)। ’ এরপর তিনি তাঁর নির্বাচনী স্লোগানের অনুকরণে বলেন, ‘চলুন, ইরানকে আবার মহান করে গড়ে তুলি। ’
তবে ইরান বরাবরই পরমাণু অস্ত্র তৈরির পরিকল্পনার কথা অস্বীকার করে আসছে।
তেহরানে ব্রিটিশ প্রতিমন্ত্রী : ব্রিটেনের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অ্যান্ড্রু মারিসন গতকাল রবিবার তেহরানে সফরে গেছেন। ইরান-মার্কিন চলমান উত্তেজনার মধ্যেই সফরের প্রথম দিন তিনি ইরানের পররাষ্ট্র দপ্তরের শীর্ষ কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। মারিসন ইরানের কাউন্সিল অব ফরেন রিলেশনের কৌশলগত প্রধান কামাল খারাজির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক ইস্যু এবং ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি নিয়ে কথা বলেন।
জন বোল্টনের সতর্কতা : যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন ইরানকে সতর্ক করে বলেছেন, দেশটি যেন ট্রাম্পের শেষ মুহূর্তে সামরিক হামলা বাতিল করার সিদ্ধান্তকে দুর্বলতা হিসেবে না দেখে। তিনি বলেন, ইরান হোক বা বৈরী কোনো রাষ্ট্রই হোক, তারা যুক্তরাষ্ট্রের দূরদর্শিতা ও দিকনির্দেশনাকে ভুল ব্যাখ্যা করে থাকে। তিনি বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে কেউই তাদের (ইরান) শিকার করার লাইসেন্স দেয়নি। আমাদের মিলিটারি পুনরায় আসছে এবং আমরা এগিয়ে যেতে প্রস্তুত। ’ মধ্যপ্রাচ্যে পূর্বনির্ধারিত সফরে গিয়ে গতকাল ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে এক বৈঠক শেষে জন বোল্টন এই মন্তব্য করেন।