মমতার সঙ্গে বৈঠক করে ধর্মঘট তুলে নিলেন চিকিৎসকরা

SHARE

চিকিৎসকদের ধর্মঘটে কলকাতাসহ ভারতজুড়ে চিকিৎসাসেবায় যে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছিল, তার অবসান ঘটেছে। গতকাল সোমবার পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকের সময় ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন চিকিৎসকদের প্রতিনিধিরা।
চিকিৎসকদের টানা এ ধর্মঘট শুরু হয় গত ১০ জুন। ওই দিন রাতে কলকাতার নীলরতন সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এক রোগীর মৃত্যু হয়। ওই ঘটনায় চিকিৎসকদের হামলা চালায় রোগীর স্বজনরা। তাতে আহত হন হাসপাতালের দুই চিকিৎসক। এ ঘটনার প্রতিবাদে এবং নিরাপত্তার দাবিতে ধর্মঘটের ডাক দেন চিকিৎসকরা। সেই ডাকে সাড়া দেন অন্যান্য রাজ্যের চিকিৎসকরাও। এতে করে কলকাতাসহ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে চিকিৎসাসেবা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।
আলোচনার জন্য চিকিৎসকদের একাধিকবার ডেকে পাঠান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু নিরাপত্তাহীনতার যুক্তি দেখিয়ে চিকিৎসকরা তাঁর সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন।
এ ছাড়া মুখ্যমন্ত্রী আন্দোলনকারীদের ‘বহিরাগত’ বলায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন চিকিৎসকরা। এ জন্য তাঁরা মমতাকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে বলেন। কিন্তু মমতা ক্ষমা না চাইলে অচলাবস্থা তৈরি হয়। এ অবস্থায় গত রবিবার মমতার সঙ্গে বৈঠকে বসতে রাজি হন চিকিৎসকরা।
বৈঠকটি শুরু হওয়ার কথা ছিল গতকাল বিকেল ৩টায়। কিন্তু শুরু হয় ঘণ্টাখানেক দেরিতে। রাজ্যের সচিবালয়ের পাশের একটি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত বৈঠকটি সরাসরি সম্প্রচার করা হয় একাধিক টেলিভিশন চ্যানেলে।
বৈঠকে আন্দোলনকারীরা ১২ দফা দাবি তুলে ধরেন। মুখ্যমন্ত্রী নিজেও বেশ কয়েকটি প্রস্তাব তুলে ধরেন। বৈঠকের একপর্যায়ে ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের প্রতিনিধি অর্চিষ্মান ভট্টাচার্য।
বৈঠকে মমতা প্রতিশ্রুতি দেন, ‘ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে, সেদিকে নজর রাখব আমরা। আর যদি ঘটেও থাকে, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ’ মুখ্যমন্ত্রী পুরো রাজ্যের জন্য একটি জরুরিভিত্তিক নম্বর এবং ই-মেল আইডি চালু করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। ওই সময় চিকিৎকরা দাবি তোলেন, নিরাপত্তাসংক্রান্ত ব্যাপারে পদক্ষেপ না নিলে পুলিশের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে। তাঁদের এ দাবির প্রতি সম্মতি জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
চিকিৎসকরা অভিযোগ করেন, অনেক সরকারি হাসপাতালে ফটক নেই। ফলে রোগী ও স্বজনদের চাপ সামলানো যায় না। অনেক সময়ই উত্তেজনা তৈরি হয়। রাজনৈতিক দলের নেতারাও ব্যাপক ঝামেলা করেন।
গত সোমবারের ঘটনার জন্য পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তোলেন চিকিৎসকরা। ওই সময় বৈঠকে উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে মমতা বলেন, ‘নিষ্ক্রিয় থাকলে হবে না। এ ধরনের ঘটনায় তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিতে হবে। ’
এদিকে গতকাল দেশটির সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছেন, চিকিৎসকদের নিরাপত্তা চেয়ে যে আবেদন করা হয়েছিল, সে বিষয়ে আজ মঙ্গলবার শুনানি হবে। গত ১০ জুন দুই চিকিৎসক আহত হওয়ার পর আবেদনটি করা হয়। সূত্র : এনডিটিভি, আনন্দবাজার পত্রিকা।