বিকল্প খুঁজুন, দলের দুই নেতাকে কংগ্রেস সভাপতি

SHARE

কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী কি পদত্যাগ করবেন? রাজনৈতিক মহলের কাছে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন এখন এটাই। গত শনিবার কংগ্রেসের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে ইস্তফার ইচ্ছা প্রকাশ করেন তিনি। কিন্তু সর্বসম্মতিতে সেই প্রস্তাব খারিজ হয়ে যায়। এরপর দুটো দিন পেরিয়ে গেছে। কিন্তু এখনও নিজের অবস্থানে অনড় কংগ্রেস সভাপতি। এ দিন কংগ্রেসের দুই নেতা আহমেদ প্যাটেল এবং কে কে বেনুগোপালের সঙ্গে বৈঠক করেন রাহুল। সেখানে তিনি বলেন, আমার বিকল্প খুঁজে বের করুন। তা ছাড়া সোমবার দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর মৃত্যু দিবসে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়েও এ কথাই লেখেন রাহুল।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি থেকে শুরু করে গোটা দেশের রাজনৈতিক মহলের অনেকেই নিজেদের শ্রদ্ধা নিবেদন করছেন। কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীও সে পথে হেঁটেছেন। আর তাঁর এই টুইট ঘিরে নতুন করে জল্পনা শুরু হয়েছে। তিনি লিখেছেন, ভারতের মতো একটি তরুণ গণতন্ত্রের ক্ষেত্রে স্বৈরাচারী ব্যবস্থা যত তাড়াতাড়ি মুক্ত হয় ততই ভালো। নেহেরুজির মৃত্যু দিবসে আমাদের তাঁর কথা মনে করা উচিত। তিনি যে ভাবে স্বাধীন ভারতের বিভিন্ন সংস্থাকে তৈরি করেছিলেন সেগুলো আমাদের দেশে গণতন্ত্রকে এই ৭০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে সাহায্য করেছে।

নিজের ট্যুইটারের বায়ো অবশ্য এখনও পরিবর্তন করেননি রাহুল। সেখানে লেখা রয়েছে ‘সভাপতি, ভারতের জাতীয় কংগ্রেস’। এর আগে শনিবারই পদ ছেড়ে দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন তিনি। কিন্তু কংগ্রেসের কার্যনির্বাহী কমিটি সর্বসম্মতিতে তা খারিজ করে দেয়। এরপর দুই দিন ধরে কংগ্রেসের বিভিন্ন নেতা তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন পদ ছেড়ে দেওয়ার কোনো মানে হয় না। তিনি যে পদে আছেন সেখান থেকেই তাঁর কাজ করে যাওয়া উচিত। কিন্তু তাতেও রাহুলের নিজের চিন্তা-ভাবনার তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি বলেই তার ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গিয়েছে।

রাহুলের ইস্তফার বিষয়ে সম্মতি দিয়েছেন মা সোনিয়া এবং বোন প্রিয়াঙ্কাও। প্রাথমিকভাবে দলের অন্য নেতাদের মতো তাঁরাও বিরোধিতা করেছিলেন। কিন্তু শেষমেশ নিজেদের মত পরিবর্তন করেছেন সোনিয়া এবং প্রিয়াঙ্কা। শেষমেশ রাহুল কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন কি-না তা এখনও স্পষ্ট নয়। কংগ্রেসের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকের পর দলের জাতীয় মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা সাংবাদিকদদের বলেন, সভাপতি ইস্তফা দিতে চেয়েছিলেন কিন্তু তা সর্বসম্মতিতে খারিজ হয়েছে। দলের নেতারা চান নিজের পদে থেকেই কাজ করে যান রাহুল।

ওই বৈঠকে হাজির ছিলেন দেশের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদাম্বরম। তিনি বলেন, রাহুল যদি এমন কিছু করেন তাহলে দক্ষিণ ভারতের সাংসদরা চূড়ান্ত কিছু করে ফেলতে পারেন। এ কথা বলার সময় তাঁর গলা ধরে এসেছিল, তিনি কেঁদে ফেলছিলেন।

শুধু তাই নয় বৈঠকে রাহুল যখন নিজের পদত্যাগ নিয়ে অনড় তখন কেউ কেউ বোন প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর কথা বলেছিলেন। কিন্তু রাহুল বলেন, কংগ্রেসের সভাপতি যে গান্ধী পরিবার থেকেই হতে হবে এমন কোনো মানে নেই।

বৈঠকে আরেকটি বিষয় সরব হন রাহুল। সেটি হলো দলের কিছু নেতার আচরণ। তিনি বলেন, নিজেদের ছেলেদের প্রার্থী করতে বা দলীয় সুবিধা পাইয়ে দিতে কিছু নেতা তৎপর ছিলেন। তাদের পরাজয়ের ফলে দলের ক্ষতি হয়েছে বলেও তিনি মনে করেন।

কারো অবশ্য নাম করেননি রাহুল। তবে এই ভোটে রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলতের ছেলে বৈভব গেহলত, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী যশোবন্ত সিংয়ের পুত্র মানবেন্দ্র সিং, মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন নেতা প্রয়াত মাধব রাও সিন্ধিয়ার পুত্র জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সন্তোষ মহোন দেবের মেয়ে সুস্মিতা দেব নির্বাচনে হেরেছেন।

এর আগে ফলাফল প্রকাশের দিনই হারের দায় নিয়েছিলেন রাহুল। তিনি বলেন, এই হারের জন্য আমি এক শ শতাংশ দায়ী। এবার দেশে শোচনীয় ফল করেছে কংগ্রেস। ২০১৪ সালের পরে ২০১৯ সালেও বিপুল জয় পেয়েছে বিজেপি। দেশের ১৭টি রাজ্যে খাতাই তুলতে পারেনি কংগ্রেস। পাশাপাশি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ফল অত্যন্ত খারাপ হয়েছে কংগ্রেসের। কয়েক মাস আগে মধ্যপ্রদেশ রাজস্থান এবং ছত্তিশগড় বিধানসভা নির্বাচনে জিতে আসে কংগ্রেস। সেখানেও তাদের ফল খারাপ হয়েছে এই নির্বাচনে।

এদিকে দীর্ঘদিন ধরে কংগ্রেসে নেহেরু এবং গান্ধী পরিবারের প্রভাব যথেষ্ট বেশি। এমতাবস্থায় রাহুল ইস্তফা দিতে চান কিন্তু তা খারিজ হয়ে যায়। তবে পরপর দুইবার ফলাফল এত খারাপ হওয়ায় কংগ্রেসের অন্দরে গান্ধী-নেহেরু পরিবারের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে বলে মনে করে রাজনৈতিক মহল।
সূত্র : এনডিটিভি