নীরবে শক্তি সঞ্চয় করেছে আল-কায়দা, হামলা চালাতে প্রস্তুত

SHARE

আল কায়দার প্রতিষ্ঠাতা ওসামা বিন লাদেনের মৃত্যু হয়েছে আট বছর আগে। যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশেষ বাহিনীর অভিযানে পাকিস্তানের আবোটাবাদ শহরে তিনি নিহত হন।

আল কায়দাকে মনে করা হতো বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ জিহাদি গ্রুপগুলোর একটি, যাদের কয়েক হাজার যোদ্ধা রয়েছে।

এই গ্রুপটির ব্যাপক আর্থিক তহবিল রয়েছে বলেও মনে করা হতো।

কিন্তু দলটির নেতার মৃত্যু আর ইসলামিক স্টেট গ্রুপের উত্থানের পর আল-কায়দার শক্তি সামর্থ্য অনেক কমে গেছে।

তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় আইএস যখন বিশ্বের সংবাদ মাধ্যমগুলোর হেডলাইন হয়েছে, তখন আল-কায়দা নীরবে নিজেদের শক্তি সঞ্চয় আর বিদেশী জঙ্গি গ্রুপগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্সের সর্বশেষ প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে যে, জ্যেষ্ঠ আল-কায়দা নেতারা ‘সংগঠনের আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক শক্তিশালী করে তুলছে এবং পশ্চিমা দেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে হামলা চালাতে উৎসাহিত করছে।’

যুক্তরাজ্যের ইন্টেলিজেন্স প্রধান অ্যালেক্স ইয়াং ফেব্রুয়ারিতে আল-কায়দার পুনরায় শক্তি সঞ্চয়ের ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছেন।

বিভিন্ন দলের জোট
যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত ড্রোন অভিযানে নেতাদের মৃত্যু আর ইসলামিক স্টেট গ্রুপের চ্যালেঞ্জের মুখে আল-কায়দা নতুন কৌশল বেছে নিতে বাধ্য হয়েছে।

তারা সফলতার সঙ্গে আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য আর দক্ষিণ এশিয়ায় বিভিন্ন গ্রুপের সঙ্গে জোট তৈরি করেছে।

এসব গ্রুপ হচ্ছে স্থানীয় ছোট ছোট জঙ্গি গ্রুপ, যারা সেখানকার সম্প্রদায়ের ভেতরে থেকে কাজ করে। এখন তারা আল-কায়দার প্রতি তাদের আনুগত্য প্রকাশ করছে। আইএসের মতো আল-কায়দা স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে এড়িয়ে চলার নীতি নেয়নি।

তাদের নতুন কৌশল হচ্ছে – স্থানীয়ভাবে সহযোগীদের নেটওয়ার্ক তৈরি করা এবং সেখানকার মানুষজনের মধ্যে নিজেদের ভিত্তি গড়ে নেয়া।

‘জিহাদের জন্য সাধারণ নির্দেশনা’ নামে ২০১৩ সালে সংস্থার একটি নীতিমালা প্রকাশ করে আল-কায়দা, যেখানে গ্রুপটিতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার দেখা যায়।

সেই নির্দেশনায় গ্রুপটি নিজেদের আরো সংহত আর স্থানীয় সম্প্রদায়ের ওপর নির্ভরের কৌশল নিয়েছে। যোদ্ধাদের এমনভাবে কাজ করতে বলা হয়, যাতে স্থানীয় মানুষজন বিপ্লবী হয়ে ওঠে।

‘স্থানীয় নানা সমস্যাকে পুঁজি করার কৌশল নিয়েছে আল-কায়দা, যেমন দুর্নীতি বা অবহেলার মতো বিষয়, এবং সেটিকে কেন্দ্র করে জিহাদের এজেন্ডা তৈরি করছে,’ বলছেন অক্সফোর্ডের পেমব্রোক কলেজেরে জ্যেষ্ঠ ফেলো ড. এলিজাবেথ কেন্ডাল।

‘এটা করার জন্য তারা স্থানীয়ভাবে উদ্ধারকর্তার ভূমিকা নিতে চায় এবং আইএসের নিষ্ঠুরতার বিপক্ষে গিয়ে ভালো জিহাদের আদর্শ হিসাবে নিজেকে তৈরি করার চেষ্টা করছে,’ তিনি বলছেন।

বিভিন্ন শাখা ও জোট গ্রুপের মাধ্যমে নিজেদের হামলার সংখ্যাও বৃদ্ধি করছে আল-কায়দা।

আর্মড কনফ্লিক্ট লোকেশন এন্ড ইভেন্ট ডাটা প্রজেক্টের তথ্য মতে, ২০১৮ সালে বিশ্ব জুড়ে ৩১৬টি হামলা চালিয়েছে আল-কায়দা।

ভবিষ্যৎ নেতা
আল-কায়দার বর্তমান নেতা আইমান আল-জাওয়াহিরি ২০১৫ সালে একটি বক্তৃতায় এক তরুণকে পরিচয় করিয়ে দেন ‘লায়ন ফ্রম দ্য ডেন’ নামে।

ওই তরুণের নাম হামজা বিন লাদেন, ওসামা বিন লাদেনের পুত্র। তাকে বিন লাদেনের সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক আল-কায়দার ভবিষ্যৎ নেতা হিসাবে দেখা হচ্ছে।

হামজাকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী হিসাবে তালিকাভুক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র এবং তাকে ধরিয়ে দেয়ার তথ্যের জন্য ১০ লাখ ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছে।

আল-কায়দা পন্থী ওয়েবসাইটগুলোয় ৩০ বছরের এই যুবককে ‘উদীয়মান তারকা’ হিসাবে দেখানো হচ্ছে। তরুণ জিহাদিদের তিনি তিনি আকর্ষণ আর দলটিকে নতুন করে গোছাতে পারবেন বলে তারা আশা করছেন।

সাম্প্রতিক বছরগুলোয় তিনি অডিও আর ভিডিও বার্তা ছেড়ে অনুসারীদের আহবান জানিয়েছেন যেন তার পিতার মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে তারা যুক্তরাষ্ট্র আর পশ্চিমা দেশগুলোয় হামলা করে।

মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার চাথাম হাউজের প্রধান লিনা খতিব বলছেন, ‘আইএস খিলাফতের অবসানের কারণে আরো বেশি সতর্ক আর কৌশলী হয়েছে।’

‘আল-কায়দা এখন তাদের কৌশলগত নেতার ওপর আরো বেশি নির্ভরশীল হয়েছে। ফলে পিতার স্থানে নিজের অবস্থান করে নিতে তা হামজা বিন লাদেনকে আরো সহায়তা করবে।’

আল-কায়দার শাখাগুলো
আল-কায়দা ইন দি ইসলামিক মাঘরেব (একিউআইএম): আলজেরিয়া ভিত্তিক জঙ্গি গ্রুপটি ২০১৬ সালে আল-কায়দার সাথে সংযুক্ত হয়। আলজেরিয়ার নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানের পর তারা সাহেল এবং পশ্চিম আফ্রিকার দিকে সরে যায়।

আল-কায়দা ইন অ্যারাবিয়ান পেনিনসুলা (একিউএপি): ইয়েমেন ও সৌদি আরবের বড় দুইটি আঞ্চলিক বাহিনী একত্রে মিলে ২০০৯ সালে আল-কায়দার একটি সহযোগী জোট দলে পরিণত হয়।

আল-কায়দা ইন ইন্ডিয়ান সাবকন্টিনেন্ট (একিউআইএস): আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ভারত, মিয়ানমার ও বাংলাদেশে এই গ্রুপটি কাজ করে, যারা ২০১৪ সালে গঠিত হয়েছে।

জামাত নুসরাত আল ইসলাম ওয়াল-মুসলিমিন(জেএনআইএম): এটি আল-কায়দা স্বীকৃত একটি সংস্থা, যারা মালি ও পশ্চিম আফ্রিকার বেশ কয়েকটি ছোট ছোট জিহাদি গ্রুপ মিলে গঠিত হয়েছে।

আল শাবাব: সোমালিয়া ও পূর্ব আফ্রিকায় এই দলটি সক্রিয় রয়েছে। তারা ২০১২ সালে আল কায়দার প্রতি তাদের একীভূত হওয়ার কথা স্বীকার করে।

হায়াত আহরির আল-শাম (এইচটিএস): সিরিয়ার কয়েকটি জিহাদি জঙ্গি গ্রুপের একটি জোট, যাদের আল-কায়দার সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। বর্তমানের সিরিয়ার ইদলিব প্রদেশ নিয়ন্ত্রণ করছে এইচটিএস।

আল-কায়দা ইন মিশর: মিশরের আল-কায়দা ঘেঁষা গ্রুপগুলোর একটি জোট, যারা সাইনাই পেনিনসুলায় সক্রিয় রয়েছে।

সূত্র: বিবিসি বাংলা