আরও ১১ বছর ক্ষমতায় থাকার টিকিট নিয়ে নিলেন মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি। দেশটিতে অনুষ্ঠিত গণভোটে ২০৩০ সাল পর্যন্ত বিচার বিভাগ ও সেনাবাহিনী, এমনকি রাজনৈতিক জীবনে প্রভাব আরও বিস্তৃতির সুযোগ পেলেন এই সাবেক সেনাপ্রধান। এর মধ্য দিয়ে ওই অঞ্চলে আঞ্চলিক অস্থিরতার বারুদ আরও জ্বলে উঠবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
আজ শুক্রবার বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়, গণবিক্ষোভ আরব বিশ্বের অন্য দেশগুলোকে নাড়া দিলেও মিসরের গণভোট এই সব বিক্ষোভ থেকে প্রাপ্ত ফলের বিরুদ্ধেই গেছে। মিসরের গণভোট দেশটির প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির শাসনকে সামনের বছরগুলোর জন্য আরও মজবুত করেছে। সিসির মেয়াদ বাড়াতে সংবিধান সংশোধনে তিন দিনের গণভোট ২০৩০ সাল পর্যন্ত সিসির ক্ষমতায় থাকাকে অনুমোদন দিয়েছে। তিন দিনব্যাপী ভোট শুরু হয় ২০ এপ্রিল।
কর্মকর্তারা বলছেন, ৮৮ শতাংশ ‘হ্যাঁ’ ভোট পড়েছে। যদিও সিসির বিরুদ্ধে ব্যাপক সমালোচনা রয়েছে। বলা হয়, তিনি বিরোধী দলকে দমিয়ে রাখেন, কথা বলার স্বাধীনতা দেন না।
মধ্যপ্রাচ্য নীতি বিষয়ে তাহরির ইনস্টিটিউটের অনাবাসিক ফেলো টিমোথি ক্যালডাস বলেন, সরকার এটা নিশ্চিত করেছে যে মিসরীয়রা সিসির বিকল্প যোগ্য কাউকে দেখেন না, সিসির বাইরে অন্য কেউ মিসর শাসন করবেন, এটা তাঁরা কল্পনাও করতে পারেন না।
ক্যালডাস বলেন, বছরের পর বছর ধরে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির পর দীর্ঘ সময়ের শাসক হোসনি মুবারক ও তাঁর ইসলামি উত্তরসূরি মোহাম্মদ মুরসির অপসারণ দেখেছে মিসরীয়রা। এখনো দেশটির অনেক নাগরিকের কাছে স্থিতিশীলতাই মুখ্য বিষয়। সন্দেহ নেই, এখনো কেউ কেউ সিসিকে সমর্থন করেন এবং বিশ্বাস করেন যে প্রতিবেশী দেশগুলোর দুর্ভাগ্য বরণ করার মতো পরিস্থিতি থেকে তিনিই রক্ষা করতে পারবেন। বেশির ভাগ মিসরীয় মনে করেন, দুই প্রেসিডেন্টকে তাঁরা ক্ষমতা থেকে নামিয়েছেন। এর ফল হিসেবে দেখেছেন প্রতিবার তাঁদের জীবনযাত্রার মান আরও খারাপ হয়েছে। তাই তৃতীয় কোনো শক্তির উত্থান পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাবে, এমন ভরসা তাঁরা পান না।
গণভোটে ভোট দিয়েছেন ২ কোটি ৭০ লাখ বা ৪৪ দশমিক ৩৩ শতাংশ। সংবিধান সংশোধন অনুসারে সিসির মেয়াদ ২০২২ থেকে বাড়িয়ে ২০২৪ করা হয়েছে এবং তাঁকে পরবর্তী আরও ছয় বছর মেয়াদের জন্য ভোটে শামিল হতে অনুমোদন দিয়েছে।
ভোটের ফল প্রকাশের পর রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেখানো হয়, সিসির সমর্থকেরা তাহরির স্কয়ারে জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা নাড়াচ্ছেন। এই তাহরির স্কয়ারেই গণবিক্ষোভের মাধ্যমে অপসারণ করা হয়েছিল সিসির আগের দুই প্রেসিডেন্টকে।
মেরভাট আবদেল ফাত্তাহ (৫০) নামের এক গৃহবধূ সিসির সমর্থনে বলেন, দেশ সঠিক পথে আছে, স্থিতিশীল আছে। সিসি যেসব কাজ শুরু করেছিলেন, তা শেষ করার সুযোগ দেওয়াটাই যৌক্তিক।
২০১৩ সালে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মুরসি গণবিক্ষোভের মুখে অপসারিত হওয়ার সময় সিসি ছিলেন সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ। তাঁর নেতৃত্বে মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। ২০১৪ সালে সিসি প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। গত বছরের মার্চে ৯৭ শতাংশ ভোট পেয়ে তিনি পুনর্নির্বাচিত হন। বিরোধী রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের কঠোরভাবে দমনের কারণে সিসি মানবাধিকার সংগঠনগুলোর ব্যাপক সমালোচনার শিকার হন। দমন-পীড়নের শিকার হাজার হাজার মানুষ দেশটির কারাগারে।