কৌশলী আন্দোলনের সিদ্ধান্ত বিএনপির

SHARE

bnp logoসরকার পতন আন্দোলনে জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে জেলা সফরের ধারাবাহিকতায় আজ নারায়ণগঞ্জ যাচ্ছেন ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। কাঁচপুরের বালুমাঠে ২০ দলীয় জোট আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেবেন তিনি। ডিসেম্বরের পরেই ইতিমধ্যে আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। তবে এবারের আন্দোলনে কৌশলী সিদ্ধান্ত নেবেন তিনি। আগেভাগেই ঘোষণা করা হবে না চূড়ান্ত কোন কর্মসূচি। রাজধানীতে আন্দোলন সফলে আগাম কাউকে দায়িত্বও দেয়া হবে না। তাৎক্ষণিকভাবে কর্মসূচি ঘোষণা করবেন তিনি। সেই কর্মসূচি বাস্তবায়নে দলের নেতাকর্মীদের সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন। দলের অঙ্গসংগঠনের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠকে এমন নির্দেশনা দিয়েছেন খালেদা জিয়া। বৃহস্পতিবার রাত ৯টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত চেয়ারপারসনের গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ে যুবদল নেতাদের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ বৈঠকে করেন তিনি। বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, ২৯শে ডিসেম্বর ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’তে দলের নেতাকর্মীরা রাজপথে বের না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন খালেদা জিয়া। যুবদল নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আগে তো মোবাইল ছিল না। তারপরও দলের নেতাকর্মীরা নিজেরা সংগঠিত হয়ে স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে। কিন্তু তো যোগাযোগের জন্য মোবাইল রয়েছে। আধুনিক যুগে যোগাযোগের এতসব মাধ্যম থাকার পরও দলের নেতাকর্মীরা রাজপথে নামেনি। আমার বাসার সামনে বালুর ট্রাক দিয়ে রাস্তা বন্ধ করে দিলেও দলের কোন নেতা আসেনি। এবার আগেভাগে কাউকে দায়িত্ব দেয়া হবে না মন্তব্য করে খালেদা জিয়া বলেন, গত ৫ই জানুয়ারি নির্বাচন ঠেকানোর আন্দোলনে রাজধানীকে ৮টি জোনে ভাগ করে ৮ সিনিয়র নেতাকে দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু ওইসব নেতা কেউই দায়িত্ব পালন করেননি। আমি ফোন করেও কাউকে পাইনি। এবার আগেভাগে কাউকে দায়িত্ব দেয়া হবে না। এছাড়া আগাম কোন সিদ্ধান্তও নেয়া হবে না। যুবদলের নেতাদের উদ্দেশে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, সাধারণ মানুষ আমাদের সঙ্গে রয়েছে। আপনারা নিজেরা সংগঠিত হোন। নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ান। থানা ও ওয়ার্ডগুলোর নেতাকর্মীদের সংগঠিত করুন। দলের নেতারা সবাই প্রস্তুত থাকবেন। যখনই কর্মসূচি ঘোষণা করবো তখনই ঐক্যবদ্ধ হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বেন। সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে থাকতে হবে। খালেদা জিয়া বলেন, কোন ধরনের গুজবে কান দেবেন না। দলের মধ্যে কোন ধরনের বিভেদ সৃষ্টি করবেন না। সর্বাত্মক আন্দোলন প্রস্তুতি নিন। বৈঠকে যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম নীরব, ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি মামুন হাসান, সাধারণ সম্পাদক এসএম জাহাঙ্গীর, মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হামিদুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম মজনুসহ ঢাকা মহানগরের প্রতিটি থানার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকরা উপস্থিত ছিলেন। এরআগে ১০ই ডিসেম্বর রাতে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাদের সঙ্গে ম্যারাথন বৈঠক করেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
বর্ণিল সাজে কাঁচপুর
সোনারগাঁও (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, খালেদা জিয়ার জনসভাকে ঘিরে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে কাঁচপুর। প্রস্তুত করা হয়েছে জনসভাস্থল কাঁচপুর বালুর মাঠ। বেলা দুইটায় আনুষ্ঠানিকভাবে জনসভা শুরু হবে। বেলা আড়াইটায় গুলশানের বাসভবন থেকে গাড়িবহর নিয়ে রওনা হবেন খালেদা জিয়া। বিকাল ৪টায় জনসভায় বক্তব্য রাখবেন তিনি। জনসভায় সভাপতিত্ব করবেন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি ও  কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-আইন বিষয়ক সম্পাদক এড. তৈমূর আলম খন্দকার। জনসভার সার্বিক প্রস্তুতি জানাতে গতকাল জনসভাস্থলে সংবাদ সম্মেলন করেন জনসভার প্রধান সমন্বয়কারী বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান। তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জের সমাবেশ সফল করতে ইতিমধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। সকল বিভেদ ভুলে এক কাতারে এসে কাজ করছেন ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা। বর্তমান সরকারের দুঃশাসন, অত্যাচার, লুটপাট, খুন, গুম ও হত্যার হাত থেকে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করতে আন্দোলনের ঘোষণা দেবেন খালেদা জিয়া।
খালেদার আগমনে মিটলো নগর বিএনপির বিভেদ
স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ থেকে জানান, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জনসভাকে ঘিরে নগর বিএনপি নেতাদের দ্বন্দ্ব-বিভেদ ও মান-অভিমানের অবসান ঘটেছে। এতদিন পাল্টাপাল্টি বিষোদগার, বক্তব্য আর বিরোধের কারণে দলের নেতাকর্মীরাও ছিল বিভক্ত। তবে তাদের নেত্রী আসার একদিন আগেই অবসান হয়েছে বিরোধের। গতকাল সকালে জেলা বিএনপির সভাপতির বাসায় ও জেলা বিএনপি কার্যালয়ে পাল্টাপাল্টি সমাবেশ শেষতক এক হয়ে গেল। এক টেবিলে নেতারা বসে তাদের ক্ষোভের কথা বললেন। ওই সময়ে নিজেকে দল আর নির্যাতিত নেতাকর্মীদের ‘অভিভাবক’ আখ্যা দিয়ে সকলের কাছে ক্ষমা চাইলেন জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমূর আলম খন্দকার। চোখ ভিজিয়েছেন নোনা জলে। আর এতেই ভাঙলো সকল অভিমান।
নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার বলেন, পানি কাটলে ভাগ হবে কিন্তু নগর বিএনপির নেতাদের সঙ্গে আমরা ভাগ হবো না। আমি বেঈমান না। আমি আপনাদের সঙ্গে বেঈমানী করবো না। আমি মরে গেলেও দলের মার খাওয়া লোকজনের সঙ্গে আছি। বেলা ১১টায় শহরের ডিআইটি এলাকায় অবস্থিত বিএনপির কার্যালয়ে নগর বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে বেগম খালেদা জিয়ার আজকের সমাবেশকে ঘিরে মত বিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তৈমুর আলম খন্দকার এসব কথা বলেন। এ সময় তৈমুর আলম খন্দকার অতীতের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন।  তিনি বলেন, আমার অনেক ভুল-ত্রুটি আছে। সব দায়দায়িত্ব আমার। নগর বিএনপি চেয়ারপারসনের সমাবেশকে নিয়ে যে ক্ষোভের কথা বলেছে সেটা কোন বিভেদ নয়। তাদের কোন দুঃখ থাকলে তারা আমার কাছেই বলবে। এতে অনেকে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চেয়েছে। সভায় নগর বিএনপির সহ সভাপতি সুরুজ্জামান বলেন, আমরা যারা শহরে রাজনীতি করি তারা আন্দোলন সংগ্রাম থেকে শুরু করে হামলা মামলার শিকার বেশি হই। যেটা অন্যান্য থানার নেতৃবৃন্দ পারে না। তাই সমাবেশে যেন মহানগর এলাকার বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দের কোন প্রকার অবমূল্যায়ন না করা হয় সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
সভায় সঞ্চালনা করেন নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামাল। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন খান, নগর বিএনপির সহ-সভাপতি সুরুজ্জামান, হাজী শাহীন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হামিদ খান ভাষানী, মহানগর যুবদলের আহবায়ক মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ, যুগ্ম আহবায়ক আনোয়ার হোসেন আনু, রানা মুজিব, আকতার হোসেন খোকন শাহ, মহানগর শ্রমিক দলের সভাপতি ফারুক  হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মনির মল্লিক, মহানগর মহিলা দলের সভাপতি রাশিদা জামাল প্রমুখ। মতবিনিময় শেষে বিএনপির আজকের সমাবেশ সফল করতে লিফলেট বিতরণ করা হয়।