গৃহঋণে আরো সুবিধা সরকারি চাকুরেদের

SHARE

একের পর এক বিশেষ সুবিধা পেয়ে চলেছেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বেতন-ভাতা প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি, পদোন্নতি, গাড়ি কেনায় সুদমুক্ত ঋণ এবং ৫ শতাংশ সরল সুদে গৃহ নির্মাণ ঋণ ইতিমধ্যে তাঁরা পেয়েছেন। এখন আবার তাঁদের প্রাপ্তির ঝোলায় আরেক সুবিধা যোগ হতে যাচ্ছে গৃহ নির্মাণ ঋণে। ঋণের বিপরীতে বন্ধকি জামানতের পাওয়ার অব অ্যাটর্নি (আমমোক্তারনামা) ব্যাংকের কাছে জমা রাখার যে নিয়ম রয়েছে, সেটা মানতে হবে না সরকারি কর্মচারীদের, এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে গৃহ নির্মাণ ঋণ প্রদান সংক্রান্ত ওয়ার্কিং কমিটি। সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদনসাপেক্ষে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করার কথাও বলা হয়েছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ওই সভার সিদ্ধান্ত গত সপ্তাহে চিঠি দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে জানানো হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এত দিন প্রচলিত রীতি বা আনুষ্ঠানিকতা হিসেবে বাড়ি বা ফ্ল্যাটের আমমোক্তারনামা ব্যাংকগুলো ঋণ গ্রহীতার কাছ থেকে নিয়ে আসছে। এটা নেওয়ার কারণ— গ্রহীতা ঋণ পরিশোধ না করতে পারলে ব্যাংকগুলো পাওয়ার অব অ্যাটর্নির ক্ষমতাবলে জামানত নেওয়া সম্পত্তি বিক্রি করে পাওনা আদায় করতে পারবে। সেই রীতি থেকে সরকারি চাকরিজীবীদের রেহাই দেওয়া হচ্ছে আইনে না থাকার দোহাই দিয়ে।

কিন্তু এমন সিদ্ধান্ত হলে ব্যাংকগুলোর ক্ষমতা খর্ব হবে এবং ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে ঝুঁকি তৈরি হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

সূত্র জানায়, সরকারের অতিরিক্ত সচিব (বাজেট-১) ও ওয়ার্কিং কমিটির সভাপতি মো. হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি অর্থ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে ওই সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় গৃহঋণ বাস্তবায়নকারী ব্যাংকের প্রতিনিধি ও সম্ভাব্য কয়েকজন ঋণগ্রহীতা উপস্থিত ছিলেন। সভায় উপস্থিত ঋণগ্রহীতাদের যুক্তি ও অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের প্রতিনিধিরা বলেন, গ্রহীতারা সময়মতো ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলেই কেবল টাকা আদায়ের সর্বশেষ উপায় হিসেবে এই আমমোক্তারনামা ব্যবহার করা হয়। তবে আইনগত বাধ্যবাধকতা না থাকায় সরকারি কর্মচারীদের আমমোক্তারনামা থেকে অব্যাহতি দেওয়া যেতে পারে। তবে সে জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন প্রয়োজন হবে।

৫ শতাংশ সরল সুদে সরকারি চাকরিজীবীদের গৃহ নির্মাণ ঋণ দিতে গত বছরের ৩১ জুলাই প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। ঋণ দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত চারটি ও একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরকারের চুক্তি হয় একই বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর। ব্যাংকগুলো হলো—সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী। আর একমাত্র আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি হলো বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন (বিএইচবিএফসি)। সবগুলো প্রতিষ্ঠানই ঋণ বিতরণের কার্যক্রম শুরু করেছে।

জানতে চাইলে জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আব্দুছ ছালাম আজাদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ওই ব্যবস্থা হলে ঋণের অর্থ আদায়ে তেমন সমস্যা হবে না। কারণ, ঋণগ্রহীতাদের বেতন অ্যাকাউন্ট থেকে কিস্তির টাকা কেটে রাখার নিয়ম করা হয়েছে। তা ছাড়া আদায় বাকি থাকলে ঋণগ্রহীতার পেনশন থেকে কিস্তির টাকা কাটা হবে। একই অভিমত জানিয়ে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক উবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বলেন, যাঁদের বেতন অ্যাকাউন্ট সম্পূর্ণ অটোমেটেড, কেবল তাঁরাই এ ঋণ পাবেন। আর ওই অ্যাকাউন্ট থেকেই কিস্তির টাকা কাটা হবে বলে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি না নিলেও পাওনা আদায়ে সমস্যা হবে না।

তবে অগ্রণী ব্যাংকের এমডি মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা পাওয়ার অব অ্যাটর্নি ছাড়া গৃহ নির্মাণ ঋণ দিই না। তবে কোনো সিদ্ধান্ত হলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে সেটা করতে হবে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এ ধরনের সিদ্ধান্ত মানে তাঁদের একচেটিয়া সুবিধা দেওয়া। এতে ঋণ ফেরত না আসার ঝুঁকি ও শঙ্কা দু-ই রয়েছে। এ ধরনের সিদ্ধান্ত যথার্থ হয়নি বলে আমি মনে করি।’

রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংকের এমডি আতাউর রহমান প্রধান বলেন, ‘ব্যাংকগুলো পাওয়ার অব অ্যাটর্নি তখনই ব্যবহার করবে যখন ঋণের টাকা আদায় হবে না। এটা ব্যাংকের হাতে না থাকলে সমস্যা হবে। কারণ লিগ্যালি ব্যাংক তখন কোথায় যাবে? তিনি বলেন, ওই সভায় ঠিক কী সিদ্ধান্ত হয়েছে তা আমি জানি না। হয়তো পাওয়ার অব অ্যাটর্নির বিকল্প কিছু সরকার ভেবেছে।’

ওই সভায় উপস্থিত ঋণগ্রহীতারা আরো জানান, জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ কিংবা রাজউকের ফ্ল্যাটের জন্য ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে শুরুতেই ফ্ল্যাট বন্ধক দেওয়া যায় না। তাই সভায় বরাদ্দপত্রের বিপরীতে ত্রিপক্ষীয় দলিলের মাধ্যমে ঋণের ৫০% টাকা বিতরণ করা যাবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। অবশিষ্ট টাকা বন্ধক দেওয়ার পর ব্যাংক বা বাস্তবায়নকারী সংস্থাকে দিতে হবে।