আগামী বছরের সেপ্টেম্বর থেকে পদ্মা সেতুতে গাড়ি-ট্রেন চলবে

SHARE

মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের মাওয়ায় পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকার জেটি থেকে স্পিডবোটটি ছুটে চলেছে পদ্মা নদীর ঢেউ ভেঙে ভেঙে। গন্তব্য মাদারীপুরের শিবচরের কাঁঠালবাড়ী। অন্যান্য নৌযানের যাত্রীরা দেখছে বদলে যাওয়া পদ্মার ওপরের অংশ। অনেকেই মোবাইল ফোনে ভিডিও করছে, ছবি তুলছে। ঘণ্টার আগেই কাঁঠালবাড়ী ঘাটে পৌঁছা গেল। ঘাটে যাওয়ার আগে জাজিরায় নজর কাড়ল এক কিলোমিটারের বেশি দীর্ঘ পদ্মা সেতুর অংশ।

গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে এ পর্যন্ত পর পর সাতটি স্প্যান বসানো হয়েছে পদ্মা সেতুর জাজিরা অংশে। এতে এ অংশে সেতুর অবয়ব ধরতে শুরু করেছে। স্প্যানের নিচের দিকে মধ্যাংশে রেলপথের জন্য স্ল্যাবও বসানো হচ্ছে। কাঁঠালবাড়ীতে সেতুর দৃশ্য দেখতে দেখতেই শ্রমিক নজির শাহ বললেন, ‘কাম চলতাছে, ট্রেইনও চলব বিরিজ (সেতু) দিয়া।’

দেখা গেল, প্রকল্প এলাকায় ড্রোন উড়ছে। চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর একাধিক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে জানান, ড্রোনের সাহায্যে ছবি সংগ্রহ করে তা নিয়ে তাঁরা প্রকল্পের সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে পর্যালোচনা করেন। নিরাপত্তার বিষয়ও তদারকি করা হয়। চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেড পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের কাজ করছে। মূল পদ্মা সেতুর কাজ করছে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর গ্রুপ কম্পানি লিমিটেড। আর নদীশাসনের কাজ করছে চীনা প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো লিমিটেড।

গত বুধবার স্পিডবোট থেকে নেমে গাড়িতে উঠে চলতে চলতে দেখা গেল, ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের (মহাসড়ক) কাজ চলছে। কোথাও সেতু হচ্ছে, কোথাও পিচের কাজ শেষ হয়েছে। শিবচরের পাচ্চরে ২০টি ড্রাম ট্রাকে মাটি ফেলা হচ্ছে। এই উঁচু করা মাটির বাঁধের ওপর দিয়ে বসানো হবে রেলপথ। সঙ্গে ছিলেন রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন ও প্রকল্পের কর্মকর্তারা। রেলমন্ত্রী জানালেন, ২০২০ সালে পদ্মা সেতু যেদিন চালু হবে সেদিন থেকেই মাওয়া-ভাঙ্গা অংশে রেলপথ চালু হবে। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত পদ্মা সেতু ও পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখা গেছে, রেলপথের জন্য মাটি ভরাট, সেতুতে রেলপথের স্ল্যাব বসানোসহ নানা কাজের মুখরতা।

প্রকল্পের কেরানীগঞ্জের পানগাঁও অংশে মাটি ভরাট করে লোড টেস্টের কাজ চোখে পড়ে। পদ্মা সেতুতে পিলার হবে ৪২টি। একটি থেকে অন্য পিলারের দূরত্ব ১৫০ মিটার। সেতুটি হবে দোতলা। ওপরে চলবে সড়কযান, নিচে ট্রেন। মাওয়া থেকে জাজিরা পর্যন্ত ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ মূল পদ্মা সেতুর কাজ চলছে বাংলাদেশ সেতু বিভাগের অধীনে। এতে ব্যয় হবে ৩৩ হাজার কোটি টাকা। আর ঢাকা থেকে মাওয়া-ভাঙ্গা হয়ে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের কাজ চলছে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অধীনে। এতে ব্যয় হবে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা। মূল সেতুর কাজ এগিয়েছে ৬৫ শতাংশ। রেল সংযোগ প্রকল্পের কাজ এগিয়েছে ১৭ শতাংশ।

বাংলাদেশ সেতু বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আগামী বছরের জুনের মধ্যে মূল পদ্মা সেতুর কাজ শেষ হবে। আনুষঙ্গিক সব প্রক্রিয়া শেষে সেতু চালু করা সম্ভব হবে সেপ্টেম্বর মাসে। পদ্মা সেতু প্রকল্পের বিশেষজ্ঞদলের প্রধান ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, আগামী বছরের প্রথমার্ধেই পদ্মা সেতুর কাজ শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। কারণ মূল নদীতে মাওয়া অংশে ২২টি খুঁটির অবস্থান নিয়ে জটিলতা নিরসন হয়েছে।

পদ্মা সেতুর জাজিরা অংশে গত ২০ ফেব্রুয়ারি বসানো হয় অষ্টম স্প্যান (৩৫ ও ৩৬ নম্বর পিলারে)। এর আগে জাজিরায় ৪২ থেকে ৩৬ নম্বর পিলারের মধ্যে ছয়টি স্প্যান বসানো হয়। মাওয়া প্রান্তে ৪ ও ৫ নম্বর পিলারের ওপর বসানো হয়েছে একটি স্প্যান। আগামী ২০ মার্চ নবম স্প্যান বসানোর প্রস্তুতি চলছে জাজিরায়। ৪১টি স্প্যান ও ৪২ খুঁটিতে (পিলার) পূর্ণাঙ্গতা পাবে মূল পদ্মা সেতু। সেতুর কাজ আগের চেয়ে দ্রুতগতিতে চলছে।

স্থানীয় প্রকৌশলী ও কর্মকর্তারা জানান, মূল পদ্মা সেতু প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৬৫ শতাংশ। পানির ওপরে ও নিচে পাইল বসানো হয়েছে ১৮৮টি। শুধু পাইলের নিচের অংশ বসানো হয়েছে ১১টির। ২২০টি পাইল বানানো শেষ হয়েছে। ১৬টি পিয়ারের পূর্ণাঙ্গ কাজ শেষ হয়েছে।

এ অবস্থায় পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের কাজ চলছে কমলাপুর-গেণ্ডারিয়া, গেণ্ডারিয়া-মাওয়া, মাওয়া-ভাঙ্গা জংশন অংশে। এ প্রকল্পে প্রথমবারের মতো দেশে ব্যালাস্টহীন রেলপথ নির্মাণ শুরু হয়েছে। ১৭২ কিলোমিটার রেলপথের ২২ কিলোমিটার হবে উড়াল রেলপথ। ইস্পাতের পরিবর্তে সিমেন্টের ব্যবহারের মাধ্যমে রেলপথ নির্মাণ করে যন্ত্রের মাধ্যমে বসিয়ে দেওয়াকে ব্যালাস্টবিহীন পদ্ধতি বলা হয়।