সেই ফাইনালের পর আবার রংপুর-ঢাকা

SHARE

ক্রীড়া প্রতিবেদক : টি-টোয়েন্টি ম্যাচের প্রথম ১০ ওভারে কারো ২৮ বলে দুই ছক্কায় ৩৪ রান করাটা এমন বড় কিছু নয়। বিশেষ করে এই ফরম্যাটে যখন ১৫ বা ১৭ বলে ফিফটি হরহামেশাই হয়। তবে মারদাঙ্গা ব্যাটিংয়ের শ্রেষ্ঠতম বিজ্ঞাপন বলে যাঁকে ধরা হয়, সেই ব্যাটসম্যানের এমন গুটিয়ে থাকাও ছিল ভীষণ যুক্তিপূর্ণ। কারণ মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের উইকেটের অনিশ্চিত চরিত্র অজানা ছিল না তাঁরও।

তাই প্রথম ১০ ওভারে খেললেন বেশ রয়েসয়ে। ওই সময়টা পার করে উইকেটে থিতু হয়ে যেতেই নিজের চিরচেনা চেহারায় দেখা দিয়েছিলেন ক্রিস গেইল। ঢাকা ডায়নামাইটসের বিপক্ষে বিপিএলের গত আসরের ফাইনালে প্রথম ১০ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে ৬৩ রান তোলা রংপুর রাইডার্স এই ক্যারিবীয়র বিস্ফোরক ব্যাটিংয়েই ২০ ওভার শেষে পৌঁছেছিল ২০৬ রানে। নিজের খেলা পরের ৪১ বলে গেইল ১১২ রান করতে মেরেছিলেন ১৬টি ছক্কা। নিজেরই গড়া রেকর্ড ভেঙে সব মিলিয়ে হাঁকিয়েছিলেন কোনো টি-টোয়েন্টি ইনিংসের সর্বোচ্চ ১৮ ছক্কা। ৬৯ বলে তাঁর অপরাজিত ১৪৬ রানের ইনিংসে গতবারের ফাইনালটি একতরফাও বানিয়ে ফেলেছিলেন।

সেই ফাইনালের পর আজ আবার গেইলের সামনে ঢাকা ডায়নামাইটস। দুপুর ২টায় শুরু হতে যাওয়া ম্যাচটি তাই গতবারের রানার্স-আপদের জন্য পুরনো হিসাব কিছুটা চুকানোর ম্যাচও। আগেরবারের দুই ফাইনালিস্ট সেই মিরপুরেই মুখোমুখি হচ্ছে। তিন ম্যাচ খেলে দুই জয়ে রংপুরের পয়েন্ট ৪। সমানসংখ্যক পয়েন্ট ঢাকারও, তবে তারা ম্যাচ খেলেছে একটি কম। নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচেই তারা হারিয়েছে রাজশাহী কিংস ও খুলনা টাইটানসকে। অন্যদিকে বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা অবশ্য চিটাগং ভাইকিংসের কাছে হারেই শুরু করেছিল আসর। তবে খুলনা ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিপক্ষে টানা দুই জয়ে তারা ঘুরেও দাঁড়িয়েছে। কাজেই চলতি আসরে দারুণ ছন্দেই আছে গতবারের ফাইনালিস্টরা। যে কারণে দর্শকদের জন্যও দারুণ এক টানটান উত্তেজনার ম্যাচেরই অপেক্ষা।

দারুণ লড়াইয়ের প্রতিশ্রুতি মিলল রংপুরের দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটসম্যান রাইলি রুশোর কথায়ও। যদিও গতবারের ফাইনাল প্রসঙ্গকে তিনি খুব গুরুত্ব দিতে চাইলেন না এ জন্য যে, ‘বিপিএলের কোনো ম্যাচই সহজ নয়। প্রতিটি দলই শক্তিশালী। আগামীকালের (আজ) চ্যালেঞ্জটি নিতে যাচ্ছি। আশা করছি সেটি খুব ভালোভাবেই নেব। আর এটা ফাইনালও নয়। আমরা জেতার জন্য খেলব। তবে সেটিও খুব চ্যালেঞ্জিং কাজই হবে।’ ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ড থেকে গেইলের অনাপত্তিপত্র সময়মতো এসে না পৌঁছানোয় খুলনা টাইটানসের বিপক্ষে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে রংপুর ওপেন করতে পাঠিয়েছিল রুশোকে। নিজের গত আসরের দলের বিপক্ষে পুরো ২০ ওভারই ব্যাটিং করে ৭৬ রানের হার না মানা ইনিংস খেলা রুশো কুমিল্লার বিপক্ষেও অপরাজিত ছিলেন ২০ রানে। অবশ্য সেই ম্যাচে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার টি-টোয়েন্টি সেরা বোলিংয়ে ব্যাটসম্যানদের বিশেষ কিছু করার দরকারও ছিল না। কারণ প্রতিপক্ষের লম্বা ব্যাটিং অর্ডারও যে গুটিয়ে গিয়েছিল মাত্র ৬৩ রানেই।

ব্যাটিং গভীরতা কম নয় ঢাকা ডায়নামাইটসেরও। গেইলকে আদর্শ মেনে বড় হওয়া তাদের আফগান ওপেনার হজরতউল্লাহ জাজাইও বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে কারো চেয়ে কম যান না। গত অক্টোবরে আফগানিস্তান প্রিমিয়ার লিগের (এপিএল) এক ম্যাচে ওভারের ছয় বলে ছয় ছক্কা মারা এই ব্যাটসম্যান সেই আসরেই পেয়েছিলেন নিজের প্রথম টি-টোয়েন্টি সেঞ্চুরির দেখা। তাই বিপিএলের প্লেয়ার্স ড্রাফটের আগেই তাঁর সঙ্গে সরাসরি চুক্তি করে ফেলার সুফল পাচ্ছে ঢাকাও। আসরের প্রথম দুই ম্যাচেই ফিফটি জাজাইয়ের ব্যাটে। ঢাকার ব্যাটিং লাইনে এমন বারুদ আছে আরো। সুনীল নারিনও এখন ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে প্রতিপক্ষের বোলিং এলোমেলো করতে জানেন। সেই সঙ্গে কিয়েরন পোলার্ড ও আন্দ্রে রাসেলদের মতো ব্যাটিং দানবরা তো আছেনই। গত আসরের ফাইনালে গেইলের দানবীয় ব্যাটিংয়ের ছবি নিজেদের ব্যাটেও ফুটিয়ে তোলার সক্ষমতা আছে তাদের প্রত্যেকেরই। কাজেই ‘জয়ের লড়াই’য়ে রংপুরকে পেছনে ফেলতে এঁদের কারো না কারো ব্যাটেও বিস্ফোরণ চাই ঢাকার। আর বর্তমান চ্যাম্পিয়নরাও চাইবে গত আসরের ফাইনালের মতোই প্রতিপক্ষের বোলিং পুড়ে ছারখার হয়ে যাক গেইলের ব্যাটে। আজ এ রকম পাল্টাপাল্টি হলে রানোৎসবও হবে। কিন্তু মিরপুরের উইকেট কি সেই সুযোগ দেবে? সুযোগটা করে নিতে আগে একটু রয়েসয়ে খেলা চাই। গত আসরের ফাইনালে যেমন খেলেছিলেন গেইল। সেই ফাইনাল থেকে তাই আজ শিক্ষা নেওয়ার আছে দুই দলেরই।