জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিনী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের ৮৮তম জন্মবার্ষিকী আগামীকাল।
১৯৩০ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে তিনি জাতির জনকের হত্যাকারীদের হাতে নির্মম মৃত্যুবরণ করেন।
এবারও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের জন্মবার্ষিকী জাতীয়ভাবে উদযাপিত হবে। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় দিবসটি জাতীয়ভাবে উদযাপনের লক্ষ্যে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
জন্মদিন উপলক্ষে এদিন সকালে ঢাকায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলোচনাসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা । অনুষ্ঠানে বঙ্গমাতার ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হবে।
বঙ্গমাতার ৮৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী প্রদান করেছেন।
দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারসহ অন্যান্য ইলেকট্রনিক মিডিয়া এ উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করবে। দিবসটি উপলক্ষে একটি স্মরণিকাও প্রকাশ করা হবে।
জন্মদিন উপলক্ষে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে বনানী কবরস্থানে শহীদ ফজিলাতুন্নেসার সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ শেষে কোরানখানি, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল।
যুবলীগ, ছাত্রলীগ এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগও বনানী কবরস্থানে বেগম ফজিলাতুন্নেসার কবরে শ্রদ্ধা জানাবে।
বঙ্গমাতা পরিষদ আগামীকাল বিকাল ৪টায় জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে আলোচনা সভা এবং গুণীজনদের মধ্যে পুরষ্কার বিতরণের আয়োজন করেছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ।
ইতিহাসে বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব কেবল একজন প্রাক্তন রাষ্ট্রনায়কের সহধর্মিনীই নন, বাঙালির মুক্তি সংগ্রামে অন্যতম এক নেপথ্য অনুপ্রেরণাদাত্রী।
বাঙালি জাতির সুদীর্ঘ স্বাধীকার আন্দোলনের প্রতিটি পদক্ষেপে তিনি বঙ্গবন্ধুকে সক্রিয় সহযোগিতা করেছেন। ছায়ার মত অনুসরণ করেছেন প্রাণপ্রিয় স্বামী বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে । এই আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য অবদান রেখেছেন। জীবনে অনেক ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করেছেন, এজন্য অনেক কষ্ট-দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে তাকে।
সংসদ উপনেতা এবং আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী বঙ্গমাতাকে নিয়ে বলেন, তাঁর স্মৃতিশক্তি অত্যন্ত প্রখর ছিল। মনেপ্রাণে তিনি একজন আদর্শ বাঙালি নারী ছিলেন। অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তা, শান্ত ভাব , অসীম ধৈর্য্য ও সাহস নিয়ে জীবনে যে কোন পরিস্থিতি তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে মোকাবেলা করতেন। জীবনে কোন বৈষয়িক চাহিদা ও মোহ তার ছিল না।
সাজেদা চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধু জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ সময় কাটিয়েছেন কারাগারে। তাঁর অবর্তমানে মামলা পরিচালনার ব্যবস্থা করা, দলকে সংগঠিত করতে সহায়তা করা, আন্দোলন পরিচালনায় পরামর্শ দেয়াসহ প্রতিটি কাজে তিনি অত্যন্ত দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন।
শুধু তাই নয়, তিনি পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের চোখ ফাঁকি দিয়ে সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতেন এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিতেন। সংগঠনের জন্য তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। তিনি অনুপ্রেরণা, শক্তি, সাহস, মনোবল ও প্রেরণা যুগিয়েছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে।
বেগম ফলিজাতুন্নেসাকে নিতান্তই একজন সাদাসিধে নারী উল্লেখ করে সংসদ উপনেতা বলেন, কোন লোভ-লালসা তাকে স্পর্শ করতে পারেনি। তিনি স্কুল কলেজ থেকে শিক্ষা নেননি, তারপরেও তার কাছে ছিল শিক্ষার মূল উপাদান। বঙ্গমাতা বাঙালি রমণীদের জন্য যে আদর্শ রেখে গেছেন তা যুগ যুগ ধরে অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। বাসস।