জয়া আহসান, বাংলাদেশের পাশাপাশি কলকাতার সিনেমাতেও দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। তবে হাল-আমলে ওপার বাংলার প্রচুর সিনেমায় নানা চরিত্রে এখন বেশি দেখা যায় তাকে।
আগামী ১০ আগস্ট কলকাতায় মুক্তি পেতে যাচ্ছে জয়া অভিনীত নতুন সিনেমা ‘ক্রিসক্রস’। ছবিটি পরিচালনা করেছেন বিরসা দাশগুপ্ত। এছাড়া মুক্তির অপেক্ষায় আছে সৃজিত মুখার্জি পরিচালিত ‘এক যে ছিল রাজা’।
এদিকে ‘দেবী’ সিনেমা নিয়েও ৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে হাজির হবেন এই জনপ্রিয় অভিনেত্রী। নতুন সিনেমা ও নিজের কাজের নানা বিষয় নিয়ে সম্প্রতি খোলামেলা কথা বলেছেন ভারতের প্রাচীন একটি বাংলা পত্রিকার সঙ্গে।
পাঠকদের সেই কথোপকথনের চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো
প্রশ্ন: ক’দিন পরই মুক্তি পাচ্ছে ‘ক্রিসক্রস’। সেখানে আপনার ভূমিকা মিস সেন আসলে এটা কেন?
জয়া: ছবিতে অন্যদের থেকে মিস সেনের ডেফিনিটলি ডিফারেন্স আছে। এটুকু বলতে পারি। কিন্তু অত ডিটেলে তো দেখানোর সুযোগ নেই। মূল হিরো কিন্তু গল্প। এখানে রয়েছে পাঁচটি মেয়ের গল্প, আর সবাই খুব ভালো করেছে।
প্রশ্ন: ‘ক্রিসক্রস’-এ আপনি কি কোনো রেফারেন্স থেকে মিস সেনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন?
জয়া: এতে রেফারেন্স হিসাবে কাউকে ভাবার সুযোগই হয়নি। এত কম প্রস্তুতিতে কোনো কাজ করি না আমি। এটা করবো-করবো না, হচ্ছে-হচ্ছে না করে শেষ পর্যন্ত হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি আমার উপর চরিত্র ভর করে। অভিনয় আসলে আধ্যাত্মিক বিষয়। না হলে সম্ভব নয়। অভিনয় করার জায়গাটাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমার সেটে সেজন্য আমি শুটিংয়ের আগে একবার ঘুরে নিই। জিনিসগুলো ধরে দেখি, ওটা আমার তা বিশ্বাস করার চেষ্টা করি। এটাই আমার স্টাইল।
প্রশ্ন: আরো অনেকের সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করতে সমস্যা মনে হয়েছে কী?
জয়া: দেখুন, ‘রাজকাহিনী’তে আরো ছোট জায়গা ছিল। ছোট জায়গায় নিজেকে প্রমাণ করাটা বেশি চ্যালেঞ্জিং। তাছাড়া যখন আমি কোনো চরিত্র করবো বলে রাজি হই, তখন অন্যদের নিয়ে ভাবি না। কে কত পর্দায় উপস্থিত হবেন, কার কত প্রোমোশন হলো ভাবি না। আমি শুধু নিজেরটুকু নিয়ে ভাবি। এটা আমার স্কুলিং। সে জন্যই হয়তো ক্যারেক্টার প্লে করতে পছন্দ করি। নায়িকা হওয়ার আগ্রহ ছিল না আমার।
প্রশ্ন: পরিচালক বিরসার সঙ্গে তো এটা আপনার প্রথম কাজ, অভিজ্ঞতা কেমন?
জয়া: হ্যাঁ। বিরসা জানেন তিনি কী চান। খুব অল্প সময়ে কাজ তুলে নেন। তার টিমও খুব ভালো। সব তরুণরা কাজ করছেন।
প্রশ্ন: এরপর তো সৃজিত মুখার্জির ‘এক যে ছিল রাজা’ আসছে?
জয়া: ওটা বোধহয় পূজার সময় রিলিজ করবে।
প্রশ্ন: সেখানে আপনার চরিত্র খুব গুরুত্বপূর্ণ?
জয়া: এতে যিশু ভাওয়াল সন্ন্যাসী। আমি তার বোন। গল্পের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় চরিত্র। বোনের কারণেই অনেক কিছু ঘটে। আরো কয়েকটা সিনেমা আসছে।
প্রশ্ন: আপনার প্রোডাকশনের প্রথম ছবি ‘দেবী’, এটি কী ভারতেও দেখা যাবে?
জয়া: ছবিটি সেপ্টেম্বরে মুক্তি পাবে বলে আশা করেছি, সে অনুযায়ী চেষ্টাও চলছে। এটি এখানেও দেখানোর চেষ্টা করবো। আমার বিশ্বাস ‘দেবী’র দর্শক এখানে (কলকাতা) আরো বেশি।জয়া আহসান/ ছবি: বাংলানিউজপ্রশ্ন: নিজের প্রোডাক্টশনের প্রথম প্রযোজনায় এমন একটা বিষয় বেছে নিলেন কেন?
জয়া: ছোট থেকেই হুমায়ূন আহমেদ পড়েছি, তখন থেকেই ইচ্ছে ছিল, এই চরিত্রটা যদি করা যায়…। আমার কিন্তু প্রযোজক হিসেবে উচিৎ ছিল বাণিজ্যিক সিনেমা, যেটা থেকে পয়সা আসে সেটা করা। কিন্তু আমি যে জীবনটা বিশ্বাস করি, যে সিনেমার সঙ্গে আমি থাকতে চেয়েছি, আমি সংগ্রাম করেছি, চেষ্টা করেছি সেই ধরনের কাজ করতে।
প্রশ্ন: টাকাটা তোলার কথা ভাবেননি?
জয়া: আমি বাংলাদেশ সরকারের থেকে সাপোর্ট পেয়েছি। কিন্তু টাকার কথা ভাবতে গিয়ে আমার প্রোডাকশন হাউজ থেকে এমন কোনো সিনেমা করতে চাইনি, যা আমি বিশ্বাস করি না।
প্রশ্ন: মিসির আলিকে নিয়ে রেসপন্স কেমন?
জয়া: এখনও পর্যন্ত রেসপন্স খুব ভালো। আসলে একটা প্রজন্ম বেড়ে উঠেছে হুমায়ূন আহমেদের সৃষ্টি মিসির আলি পড়ে। আবার এখনকার প্রজন্মে সেটা আস্তে আস্তে পড়ে যাচ্ছে। মধ্যবিত্ত পরিবারের ফ্যান্টাসির সঙ্গে এখনকার প্রজন্ম পরিচিত নয়। এরা অস্থির। এদের হাতে অনেক অপশন।
প্রশ্ন: মিসির আলিকে কি বইয়ের মতোই দর্শক দেখতে পাবেন?
জয়া: বইয়ে আছে-নীল খামে চিঠি আসার কথা। সেটা দিয়েই রিলেশন তৈরি হয়েছিল। এখন তো এটা ফেসবুক ছাড়া বোঝাতে পারবো না। ফলে এই ধরনের পরিবর্তন রয়েছে সিনেমায়। তবে মূল বিষয়টি রাখার চেষ্টা করেছি। আমার মিসির আলি পুরো বইয়ের মতো নয়। একটু অন্য রকম। কিন্তু বিশ্বাসযোগ্য। আমি খুবই চেষ্টা করেছি আসলের কাছাকাছি থাকতে।