মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দলের শীর্ষ নেতাদের একের পর এক মৃত্যুদণ্ডের রায়, নেতাকর্মীদের ওপর একাধিক মামলা ও গ্রেফতার এবং রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতকে নিষিদ্ধের উদ্যোগে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল জামায়াতে ইসলামী। এমন অবস্থায় উপজেলা নির্বাচনে জামায়াতসমর্থিত প্রার্থীদের অপ্রত্যাশিত বিজয়ে তুষ্ট হয়েছিলেন দলের নেতাকর্মীরা। তবে উপজেলা পরিষদের সেই পদগুলো রক্ষা করতে এখন রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের।
জানা গেছে, বিভিন্ন মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি হওয়ায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে ইতিমধ্যে জামায়াতের বেশ কয়েকজন চেয়ারম্যানকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়া গ্রেফতারের ভয়ে অধিকাংশ চেয়ারম্যান-ভাইস চেয়ারম্যান আত্মগোপনে থাকছেন। সময় মতো উপজেলার কাজে সময় দিতে পারছেন না। প্রশাসনকে ম্যানেজ করে উপজেলা কার্যালয়ে গিয়ে মাঝে মধ্যে হাজিরা দিয়ে আসছেন।
মঙ্গলবার স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-সচিব আব্দুস সবুর স্বাক্ষরিত এক ফ্যাক্স বার্তায় গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মাজেদুর রহমান ও ভাইস চেয়ারম্যান আবু সোলায়মান সরকার সাজুকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।
জামায়াতের স্থানীয় নেতাকর্মীরা বলছেন, সরকারের অসহযোগিতার কারণে জামায়াত নেতাদের উপজেলার সুফল ভোগ তো দূরের কথা, এখন পদ রক্ষা করাই দায় হয়ে পড়ছে। অন্যায়ভাবে সাময়িক বরখাস্ত এবং জনগণকে সেবার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। উচ্চ আদালতের মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের পদ ফিরে পাওয়ার আশা প্রকাশ করেছেন দলটির নেতারা।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে ছয় ধাপে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ৩৬টিতে চেয়ারম্যান পদে, ১২৬টিতে পুরুষ এবং ৩৬টিতে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে দলটির প্রার্থীরা নির্বাচিত হন। বিজয়ী প্রার্থীদের প্রায় সবাই স্থানীয় পর্যায়ে জামায়াতের বিভিন্ন পদে রয়েছেন।
সূত্র জানায়, এপ্রিলে শুরু হওয়া শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে ১০ চেয়ারম্যানসহ অন্তত ২৫ জনপ্রতিনিধি পুলিশের হাতে আটক হয়ে জেলে যান। পরে বিভিন্ন সময়ে প্যারোলে বা জামিনে মুক্তি পেয়ে শপথ গ্রহণ করেন তারা। শপথ নিলেও গ্রেফতার আতঙ্ক ও আটক থাকার কারণে পরিষদের দায়িত্ব বুঝে পেতে কারো কারো সাত মাস সময় লেগেছে। এর মধ্যে কয়েক দফা আটক হয়েছেন বিভিন্ন উপজেলার চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান। বিভিন্ন মামলার আসামি করে চার্জশিট দেয়াসহ বিভিন্ন কারণে অন্তত ছয়জনকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।
স্থানীয়ভাবে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ১০ নভেম্বর বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা নূরুল ইসলাম মণ্ডলকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এর আগে ৮ সেপ্টেম্বর বগুড়ার শেরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মাওলানা দবিবুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। ২ অক্টোবর গাইবান্ধা সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও জামায়াতের জেলা সেক্রেটারি আবদুল করিমকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এ বরখাস্তের চিঠিতেও দুটি মামলায় চার্জশিটের কথা উল্লেখ করা হয়।
এসব বরখাস্তের আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করা হয়েছে বলে জানান জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মতিউর রহমান আকন্দ।
ঢাকা মহানগর জামায়াত নেতা আতাউর রহমান সরকার তার ফেসবুকে লিখেছেন, “জনগণের ভোটে নির্বাচিত উপজেলা পরিষদের অনেক চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যানকে জামায়াত করার অপরাধে বরখাস্ত, গ্রেফতার করছে অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকার। জামায়াত এখন সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে গেছে। এসব করে জনগণের মন থেকে জামায়াতকে মুছে দেয়া যাবে না।”
এদিকে সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও জামায়াত নেতা আবদুর রউফ, ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি রেজাউল ইসলাম, চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান জসিম এবং কয়েকটি উপজেলার চেয়ারম্যান-ভাইস চেয়ারম্যানসহ ছয় থেকে সাতজন আটক রয়েছেন।
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মাওলানা দেলওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে জিয়ানগর উপজেলা চেয়ারম্যান মাসুদ সাঈদী বলেন, “২৪ এপ্রিল দায়িত্ব গ্রহণের পর এখন পর্যন্ত নতুন সরকারি বরাদ্দ আসেনি। তেমন কোনো কাজেরও সুযোগ হয়নি। ”
জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান অভিযোগ করেন, “বর্তমান স্বৈরাচারী সরকার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদেরও কাজ করতে দিচ্ছে না।” সরকারের এ জুলুম-অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।