ছয় তলার ছাদের (সাত তলা) কার্নিশে (রেলিংয়ের বাইরে) দাঁড়িয়েছেন মা। লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করবেন। কাঁপছেন। লাফ না দিলেও একটু বাতাস হলেই মাত্র ছয় ইঞ্চির ওই কার্নিশ থেকে পড়ে যেতে পারেন তিনি। কিংবা ভারসাম্য হারালে। আর ওই ভবনের নিচে দাঁড়িয়ে আত্মহত্যা না করতে কেঁদে-কেটে মা মা বলে আকুল আর্তি জানিয়ে যাচ্ছে তার ৫ বছরের মেয়ে। দমকল কর্র্মী, আত্মীয়-স্বজন ও অন্যান্য মানুষও তাকে লাফ না দিতে অনুরোধ জানাচ্ছেন। কিন্তু কারও কথাই শুনবেন না তিনি। আবার ছাদেও কেউ তার কাছে যেতে পারছেন না। হুমকি দিচ্ছেন কাছে এলেই ঝাঁপ দেবেন নিচে।
কোনো সিনেমা বা নাটকের দৃশ্য নয় এটি। শনিবার রাজধানীর উত্তরার ১০নং সেক্টরের ১২নং রোডের ৮০ নম্বর বাড়ির চিত্র এটি। আর লাফ দেয়ার জন্য যিনি কার্নিশে দাঁড়িয়েছেন তিনি একজন মডেল ও অভিনেত্রী। নাম নুশরাত জাহান (৩৫)। তবে ৩ ঘণ্টা ধরে চলা এ রুদ্ধশ্বাস ঘটনার সমাপ্তি বিয়োগান্তক হয়নি।
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কৌশলে তাকে জাপটে ধরে কার্নিশ থেকে নিরাপদে টেনে নেন দমকল বাহিনীর এক কর্মকর্তা। তার নাম মো. সফিকুল ইসলাম। তিনি উত্তরা ফায়ার সার্ভিসের জ্যেষ্ঠ দমকল কর্মকর্তা। নুশরাতকে উদ্ধারের পর সবাই তার সাহসিকতা ও বুদ্ধির প্রশংসা করছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নুশরাতকে উদ্ধার করা অবশ্য এতটা সহজ ছিল না। আর জাপটে ধরামাত্রই নুশরাত শরীর শূন্যে ছেড়ে দেন, নিচে পড়ার জন্য ছটফট করতে থাকেন। দমকল বাহিনীর অন্য সদস্যরা মুহূর্তেই সফিকুলকে ধরে পড়ে যাওয়া থেকে বাঁচান। আর তাকে বাঁচানোর পর সফিকুলকে গালাগাল করেন নুশরাত।
কেন তিনি আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলেন? উত্তরা পশ্চিম থানার ইন্সপেক্টর (অপারেশন) শাহ আলম যুগান্তরকে জানান, ‘স্বামী রফিকুল কবির সুজনের সঙ্গে ঝগড়া করে আত্মহত্যার জন্য ছাদের কার্নিশে আসেন নুশরাত। রফিকুল কবির এইচএসবিসি ব্যাংকে চাকরি করেন।’ পরিবারের সদস্যরা জানান, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া, এমনকি হাতাহাতি পর্যন্ত হয়।
সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বেলা ৩টার দিকে ওই নারী আত্মহত্যার জন্য ছাদের কার্নিশে আসেন। খবর পেয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা আসি। ৫টা পেরিয়ে গেলেও তাকে নিবৃত্ত করা না গেলে ইন্সপেক্টর শাহ আলম আমাকে যে কোনোভাবে উদ্ধারের বুদ্ধি বের করতে বলেন। পরে ৬টার দিকে তাকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়।’ এ বিষয়ে উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।