বনানীতে দুই ছাত্রী ধর্ষণ মামলা ট্রাইব্যুনালে

SHARE

রাজধানীর বনানীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রী ধর্ষণের মামলা বিচারের জন্য ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২-এ পাঠানো হয়েছে।

ওই ট্রাইব্যুনালের পেশকার তানভীর হোসেন  বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ‘ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত থেকে বিচারের জন্য নথি আমরা আজ হাতে পেয়েছি।’

এর আগে গত ৮ জুন এ ধর্ষণ মামলায় অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। অভিযোগপত্রে আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের ছেলে শাফাত আহমেদ ও তাঁর বন্ধু নাঈম আশরাফ ওরফে আবদুল হালিমের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনা হয়েছে। এ ছাড়া শাফাতের বন্ধু সাদমান সাকিফ, গাড়িচালক বিল্লাল হোসেন ও তাঁর দেহরক্ষী রহমত আলীর বিরুদ্ধে ধর্ষণে সহায়তার অভিযোগ আনা হয়েছে।

মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, জন্মদিনের পার্টির কথা বলে গত ২৮ মার্চ রাতে বনানীর রেইনট্রি হোটেলে ডেকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া দুই তরুণীকে ধর্ষণ করেন শাফাত ও তাঁর বন্ধু নাঈম আশরাফ।

ঘটনার ৪০ দিন পর দুই তরুণী বনানী থানায় মামলা করতে গেলে মামলা না নিয়ে তাঁদের হয়রানি করে পুলিশ। এ ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে হইচই পড়ে যায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। এরপর পুলিশ মামলা নিলেও আসামি গ্রেপ্তারে গড়িমসি শুরু করে। বনানী থানার ওসি ফরমান আলী আসামিপক্ষের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়েছেন বলেও অভিযোগ আসে সংবাদমাধ্যমে। পরে পুলিশের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, ধর্ষণের ঘটনায় মামলা নিতে, ধর্ষণের শিকার দুই তরুণীর সঙ্গে আচরণে এবং আসামিদের গ্রেপ্তারে থানা-পুলিশের গাফিলতি নয়, ‘ব্যত্যয়’ ছিল।

এদিকে থানায় মামলা হওয়ার পাঁচ দিন পর গত ১১ মে সিলেট থেকে শাফাত ও সাদমানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর ১৫ মে শাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল ও দেহরক্ষী রহমত ঢাকায় গ্রেপ্তার হন। সবশেষে ১৭ মে মুন্সিগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করা হয় নাঈম আশরাফকে, যিনি সেখানে এক আত্মীয়ের বাড়িতে লুকিয়ে ছিলেন। এই পাঁচজনের মধ্যে গাড়িচালক বিল্লাল ছাড়া বাকি চার আসামিই নিজেদের দায় স্বীকার করে আদালতের হাকিমের কাছে জবানবন্দি দেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসকেরা মেডিকেল পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত না পাওয়ার কথা জানান।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, গত ২৮ মার্চ দুই তরুণী বনানীর রেইনট্রি হোটেলে ধর্ষণের শিকার হন। এ ঘটনার ১০-১৫ দিন আগে তেজগাঁও লিংক রোডের পিকাসো রেস্তোরাঁয় তাঁদের আলাপ-পরিচয় হয়। এরপর থেকে প্রায়ই বাদীর সঙ্গে টেলিফোনে আসামি শাফাত আহমেদের কথা হতো। এই আলাপ-আলোচনার মাঝে শাফাত তাঁর জন্মদিনে বাদীকে বান্ধবীসহ আসতে বলেন। শাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল হোসেন ও দেহরক্ষী রহমত আলী আবাসিক এলাকা নিকেতন থেকে দুই তরুণীকে গাড়িতে করে রেইনট্রি হোটেলে আনেন। এরপর চালক বিল্লাল হোসেন দুই তরুণীকে হোটেলের রুম পর্যন্ত পৌঁছে দেন। ওই দিন হোটেলে পার্টির কোনো পরিবেশ না দেখে তরুণীরা চলে যেতে চাইলে শাফাত ও তাঁর বন্ধুরা বাধা দেন। তাঁরা কেক কাটার পর যেতে বলেন। বাদীর বন্ধু শাহরিয়ার ও এক বান্ধবী এ সময় চলে যেতে চাইলে শাফাত ও নাঈম মারধর করেন শাহরিয়ারকে। তাঁরা শাহরিয়ারের গাড়ির চাবি ছিনিয়ে নিয়ে তাঁকে ও তাঁর বান্ধবীকে এক রুমে আটকে রাখেন। শাফাত তাঁদের ভয় দেখিয়ে বলেন, ‘পালাবি না।’ এরপর শাফাত আহমেদ বাদীকে ও নাঈম আশরাফ বাদীর বান্ধবীকে ধর্ষণ করেন।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, তদন্তে রেইনট্রি হোটেলের অতিথির তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আসামি শাফাত আহমেদ ও নাঈম আশরাফ পূর্বপরিকল্পিতভাবে ঘটনার আগের দিন ২৭ মার্চ পার্টির জন্য মদ এনে হোটেলকক্ষে রাখেন। শাফাত ও নাঈম আদালতে জবানবন্দি দিয়ে স্বীকার করেছেন, তাঁরা বাদিনী ও তাঁর বান্ধবীকে ধর্ষণ করেছেন। শাহরিয়ারকে মারধরের ঘটনা ভিডিও করেন গাড়িচালক বিল্লাল হোসেন। শাফাতের নির্দেশে বিল্লাল জন্মনিরোধক ওষুধ নিয়ে আসেন। শাফাত জোর করে সেই ট্যাবলেট দুই তরুণীকে খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। বাদী না খেতে চাইলে শাহরিয়ারকে দিয়ে খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। শাহরিয়ার তাতে রাজি না হলে তাঁকে শাফাত ও নাঈম মারধর করেন। এ ঘটনা বিল্লাল ভিডিও করেন।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, ডিজিটাল ফরেনসিক পরীক্ষার মাধ্যমে মুছে ফেলা তিনটি ভিডিও উদ্ধার করা হয়। এর একটি ভিডিওতে একাধিক পুরুষের কথোপকথন শোনা যায়। তাতে একজন পুরুষকে হাতজোড় করে বসে থাকতে দেখা যায়।