সব জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালানোর আহ্বান টিআইবির

SHARE

অবৈধ স্বর্ণ উদ্ধারে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর পরিচালিত চলমান অভিযান সব জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানে চালানোর আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

এ অভিযান সমভাবে সম্পূর্ণ আইনি প্রক্রিয়ায় কোনো প্রকার ভয় বা করুণার বশবর্তী না হয়ে চালাতে বলছে দুর্নীতি বিরোধী সংস্থাটি।

জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানে অভিযানের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী সংগঠন ও অন্য কোনো মহল কর্তৃক এ ক্ষেত্রে কোনো প্রকার বিধিবহির্ভূত বাধা প্রদান বা প্রভাব সৃষ্টি করা অযৌক্তিক, অনৈতিক ও বেআইনি হবে বলেও মন্তব্য করেছে টিআইবি।

শুক্রবার টিআইবির পক্ষ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা বলা হয়।

আপন জুয়েলার্স থেকে জব্দ করা স্বর্ণ ফেরত না দিলে ১১ জুন থেকে সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট ডাকবে হুমকি দিয়েছিল বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)।

এই ধর্মঘটের দুই দিন আগে সব জুয়েলারিতে অভিযান চালানোর আহ্বান জানানো টিআইবি।

প্রসঙ্গত, রাজধানীর বনানীর ‘দ্য রেইনট্রি’ হোটেলে আটকে রেখে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় গত ৬ মে বনানী থানায় মামলা হয়।

মামলায় প্রধান আসামি করা হয় আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদ সেলিমের ছেলে সাফাত আহমেদকে।

এ ঘটনার প্রেক্ষিতে আপন জুয়েলার্সের বিরুদ্ধে স্বর্ণ চোরাচালান ও অবৈধ ব্যবসার অভিযোগ উঠলে প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন শো-রুমে অভিযান চালিয়ে ৫৬৭ কেজি স্বর্ণ বাজেয়াপ্ত করে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর।

গত ৬ জুন কাকরাইলে নিজ কার্যালয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক ড. মইনুল খান জানান, আপন জুয়েলার্সের বাজেয়াপ্ত স্বর্ণের মধ্যে ৫৩৮ কেজিই চোরাচালানের মাধ্যমে আনা হয়েছে।

তিনি বলেন, শুধু আপন জুয়েলার্সই নয়, আরও বেশ কয়েকটি জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে চোরাচালানের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সেগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কারও বিরুদ্ধে চোরাচালানের অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ বক্তব্যের প্রেক্ষিতে ‘ব্যবসাবান্ধব’ স্বর্ণ আমদানি নীতিমালা বাস্তবায়ন, জব্দকৃত স্বর্ণ ফেরত এবং ড. মইনুল খানের অপসারণের দাবিতে ধর্মঘটের হুমকি দেয় বাজুস।

টিআইবি এ ধরনের বাজুসের এ ধরনের তৎপরতা বেআইনি বলার পাশাপাশি দুর্নীতির সহায়কের ভূমিকা পালনের নামান্তর বলে আখ্যা দেয়।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন,  আমরা আশা করব, শুল্ক অধিদফতর তাদের অভিযানে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের যেমন পূর্ণাঙ্গ সহযোগিতা পাবে, তেমনি জুয়েলার্স সমিতিও আইন প্রয়োগে কোনো প্রকার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা থেকে বিরত থাকবে। অন্যদিকে এ জাতীয় অন্যান্য ব্যবসাখাতেও একই ধরনের আইনবহির্ভূতভাবে ব্যবসা পরিচালিত হচ্ছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখতে হবে।

টিআইবির দাবি, বাংলাদেশে স্বর্ণ আমদানি ও ব্যবসায় নিয়ে সুনির্দিষ্ট নীতিমালার অভাব ও আইনের যথাযথ প্রয়োগের ঘাটতির কারণেই স্বর্ণ চোরাচালান হয়। আর এর দায় শুধু সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদেরই নয়, সরকারেরও।

সংস্থাটির বিবৃতিতে বলা হয়, সরকারের সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে অবহেলা ও যোগসাজশের আড়ালে স্বর্ণ ব্যবসা খাতে দীর্ঘদিনের বিকশিত দুর্নীতি, জালিয়াতি ও চোরাকারবারি-নির্ভরতা তৈরি হয়েছে। এর দায় সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও সরকারকেও নিতে হবে।

একই সঙ্গে এ অবস্থার পরিবর্তনে অনতিবিলম্বে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সম্পৃক্ত করে যুগোপযোগী নীতি কাঠামো প্রস্তুত ও বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সরকারের প্রতি দাবি জানায় টিআইবি।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, পরিপূর্ণ, যুগোপযোগী ও বিশেষ করে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতে পর্যাপ্ত বিধানসহ একটি কার্যকর স্বর্ণ আমদানি ও ব্যবসা নীতিমালা প্রণীত ও প্রয়োগ হলে বাংলাদেশের জুয়েলারি ব্যবসাকে আরও বিকাশমান ও টেকসই উন্নয়নে সহায়ক শিল্পে উন্নতিকরণ সম্ভব।

তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে স্বচ্ছ বিধান ও আইনের অভাবে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী অনৈতিক পন্থায় দুর্নীতি, চোরাকারবারি ও অর্থপাচার-নির্ভর স্বর্ণ ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। অথচ বছরের পর বছর কর্তৃপক্ষের এ ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ বা উদ্যোগ পরিলক্ষিত না হওয়া যেমন রহস্যজনক, তেমনি জাতীয় অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকারক।

সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের যেসব কর্মকর্তা এ ধরনের অবহেলা ও যোগসাজশের সঙ্গে জড়িত, যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় তাঁদের জবাবদিহি নিশ্চিত করারও দাবি জানান ইফতেখারুজ্জামান।

টিআইবি সরকার ও বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতিকে আইনের যথাযথ প্রয়োগ এবং পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে স্বর্ণ আমদানি ও ব্যবসা নীতিমালা প্রণয়নে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণেরও আহ্বান জানায়।

এক্ষেত্রে অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায় ঘোষিত স্বর্ণ খাতের জন্য নতুন নীতিমালা প্রণয়নের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি।