আইনি লড়াইয়ে হেরে যাওয়ার পর দীর্ঘদিন ধরে ভোগ করা গুলশানের বাড়িটি ছাড়তে হলো বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদকে। আজ বুধবার দুপুরে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) গুলশান-২ নম্বরের ১৫৯ নম্বর বাড়িটি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার কার্যক্রম শুরু করে। বাড়ি থেকে মালামাল সরানোর মধ্যেই সন্ধ্যা ছয়টার দিকে একটি প্রাইভেট কারে করে তিনি সেখান থেকে চলে যান।
একতলা বাড়িটিতে তিন যুগের বেশি সময় বসবাস করেছেন বলে জানান মওদুদ আহমদ। বাড়িটি নিয়ন্ত্রণে নিতে আজ দুপুরে রাজউকের ম্যাজিস্ট্রেট খন্দকার অলিউর রহমানের নেতৃত্বে কাজ শুরু হয়। বাড়িটি ঘিরে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়। মোতায়েন করা হয় পুলিশ, জলকামান, প্রিজনভ্যান, সাঁজোয়া যান ও বুলডোজার। এ ছাড়া মালামাল সরানোর জন্য ব্যবহার করা হয় রাজউকের নিজস্ব দুটি বড় ট্রাকসহ বেশ কয়েকটি ট্রাক। এসব ট্রাকে করে মালামাল গুলশান-২–এর ৫১ নম্বর সড়কে ২ নম্বরে ছয়তলা ভবনে মওদুদ আহমদের নিজস্ব একটি ফ্ল্যাটে নিয়ে যাওয়া হয়।
গুলশান-২-এর ১৫৯ নম্বরের একতলা যে বাড়িতে দীর্ঘদিন বসবাস করে আসছেন মওদুদ আহমদ, সেই বাড়ির বিষয়ে সর্বোচ্চ আদালতের দেওয়া সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা চেয়ে করা আবেদন (রিভিউ) গত রোববার পর্যবেক্ষণসহ খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ। আদেশের পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, বাড়ি অবশ্যই ছাড়তে হবে। বাড়িটা বর্তমানে নিয়ে নেওয়া সরকারের দায়িত্ব। এরপর আজ বাড়িটি নিয়ন্ত্রণে নিতে ঘটনাস্থলে যান রাজউকের কর্মকর্তারা।
বেলা দুইটার দিকে বাড়ির সামনে গিয়ে দেখা গেল, বাড়িটি ঘিরে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ। রাখা হয়েছে জলকামান, প্রিজনভ্যান, সাঁজোয়া যান ও বুলডোজার। এ ছাড়া মালামাল সরানোর জন্য আছে দুটি বড় ট্রাক। সেখানে উপস্থিত আছেন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
বেলা পৌনে তিনটার দিক থেকে বাসার ভেতর থেকে মালামাল নিয়ে শ্রমিকেরা রাজউকের ট্রাকে তুলতে শুরু করেন।
বাড়ির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার কার্যক্রম শুরুর পর মওদুদ আহমদকে তিনি বলেন, ‘কোনো নোটিশ নেই। কোনো অর্ডার নেই। তারা বিদ্যুতের লাইন, গ্যাসের লাইন কেটে দিয়েছে। এটা সম্পূর্ণ অন্যায়, অবিচার। জোর করে যা ইচ্ছা মনে হয় তা-ই করা।’ এর সঙ্গে যোগ করেন, ‘উচ্ছেদ অভিযান না চালানোর আবেদন জানিয়ে গতকাল আমি একটি দেওয়ানি মামলা করেছিলাম। মামলা নম্বর ৫৬১। এ মামলায় আদালত রাজউককে একটি সমনও জারি করেছেন। এর মধ্যেই এ অভিযান চালানো হলো। এখন আমি কীই-বা করতে পারি!’
বেলা তিনটার একটু পরে আইনজীবীর পোশাকে গাড়িতে করে বাড়ির সামনে পৌঁছান মওদুদ আহমদ। বাড়ির প্রধান ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে উচ্ছেদ কর্মকাণ্ড পরিচালনাকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘দেশে যে আইনের শাসন নেই, এটি তারই প্রমাণ।’ পরে গণমাধ্যমকর্মীদের ডেকে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘দেখেন, কীভাবে আমার মালামাল তুলে নিচ্ছে! এটা প্রতিহিংসার সর্বোচ্চ দৃষ্টান্ত। আদালত তো বলেননি এই বাড়ি থেকে উচ্ছেদের কথা। রাজউকও উচ্ছেদের নোটিশ দেয়নি। বিরোধী দলের রাজনীতি করি বলেই বাসা থেকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। সরকারি দলের নেতা হলে তো এমন হতো না।’ এখন কী করবেন, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘এখন রাস্তায় শুয়ে থাকা ছাড়া তো উপায় নেই।’
তবে মালামাল সরিয়ে ফেলার সময় রাজউকের ম্যাজিস্ট্রেট খন্দকার অলিউর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটা রাজউকের সম্পত্তি। দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা দখল করে রেখেছিলেন। আদালত আমাদের পক্ষে রায় দিয়েছেন। আমরা দখলমুক্ত করছি।’
বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে বাড়ির ভেতর থেকে বাইরে বের হয়ে আসেন মওদুদ আহমদ। মালামাল কোথায় নেওয়া হচ্ছে, জানতে চাইলে তিনি তখন বলেন, ‘আমাদের পাশে খালি একটা ফ্ল্যাট আছে, সেখানে নিয়ে রাখা হচ্ছে। বাসার লাইব্রেরিতে হাজার হাজার বই, সব ছিন্নভিন্ন অবস্থায় মেঝেতে পড়ে আছে। আমরা অনুরোধ করেছিলাম, সময় দেন। আমরা সুন্দর করে নিয়ে যাব। দেয়নি।’
এর সোয়া এক ঘণ্টা পর মওদুদ আহমদ গুলশান-২-এর ১৫৯ নম্বর বাড়িটি ছেড়ে ৫১ নম্বর সড়কের ২ নম্বর বাসার দিকে রওনা হন। তিনি চলে যাওয়ার পরও বাড়ি থেকে মালামাল সরিয়ে নেওয়ার কাজ চলতে থাকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, পুরো প্রক্রিয়া শেষ করতে রাত ১২টা পার হয়ে যাবে। এরপর বাড়িটি সিলগালা করে দেবেন রাজউকের কর্মকর্তারা।