টালিউড তারকাদের স্মৃতিতে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনা

২০১০ সালে আসানসোলে শো করে কলকাতায় ফেরার পথে ভয়াবহ গাড়ি দুর্ঘটনার মুখে পড়েছিলেন সোহম। এসইউভি গাড়ি চার ভোল্ট খেয়ে আছড়ে পড়েছিল মাঝরাস্তায়। সোহমের কথায়, ‘‘ঈশ্বরের আশীর্বাদ বোধহয় একেই বলে! কারও শরীরে একটা আঁচড় পর্যন্ত লাগেনি।’’ তখন ‘অমানুষ’ ছবির কাজ চলছে। শ্যুটিং সেরে সরাসরি আসানসোল পৌঁছেছিলেন অভিনেতা। সোহম ছাড়াও সেদিনের অনুষ্ঠানে ছিলেন অভিনেতা জিৎ, পায়েল সরকার, জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়রা।

SHARE

সোহম চক্রবর্তী: ২০১০ সালে আসানসোলে শো করে কলকাতায় ফেরার পথে ভয়াবহ গাড়ি দুর্ঘটনার মুখে পড়েছিলেন সোহম। এসইউভি গাড়ি চার ভোল্ট খেয়ে আছড়ে পড়েছিল মাঝরাস্তায়। সোহমের কথায়, ‘‘ঈশ্বরের আশীর্বাদ বোধহয় একেই বলে! কারও শরীরে একটা আঁচড় পর্যন্ত লাগেনি।’’ তখন ‘অমানুষ’ ছবির কাজ চলছে। শ্যুটিং সেরে সরাসরি আসানসোল পৌঁছেছিলেন অভিনেতা। সোহম ছাড়াও সেদিনের অনুষ্ঠানে ছিলেন অভিনেতা জিৎ, পায়েল সরকার, জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়রা।

সমস্যাটা হয়েছিল কলকাতায় ফেরার সময়। সোহমের কথায়, ‘‘পরদিন আমার কলটাইম ছিল ভোর ৪টেয়। যাই হোক, কোয়ালিস গাড়িটায় ড্রাইভারের পাশের সিট এবং শেষের রো’তে আমাদের বডিগার্ডরা বসেছিল। মাঝের রো’তে ছিলাম আমি আর পার্থ (অভিনেতা পার্থসারথি দেব)।’’ সারাদিনের ধকলের পর কয়েক মুহূর্তের জন্য চোখটা বুজে গিয়েছিল সোহমের। হঠাৎ প্রবল আওয়াজে চমকে ওঠেন তিনি। মোবাইলটা ছিটকে পড়েছিল গাড়ির মেঝেতে। সোহম বলছিলেন, ‘‘গাড়ির গতি ছিল প্রায় ১৬০ কিলোমিটার। চোখ খোলার পর দেখি, গাড়িটা রাস্তায় টাল খাচ্ছে। সঙ্গে চাকা ছেঁচড়ে যাওয়ার বিকট আওয়াজ! ড্রাইভার প্রাণপণে সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে।

কয়েকবার টাল খাওয়ার পর পুরো গাড়িটাই উল্টে গিয়েছিল। মোট চারটে ভোল্ট খেয়েছিল গাড়িটা। দুর্ঘটনার সময় আমি তো ধরেই নিয়েছিলাম, আর বাঁচব না! আর আমি বাঁচলেও, গাড়ির বাকিরা বাঁচবে না।’’ দুর্ঘটনার কিছু আগেই জানলার কাচ তুলে এসি চালাতে বলেছিলেন পার্থসারথি। সোহম বলছিলেন, ‘‘সেদিন গাড়ির কাচ তোলা না থাকলে গাড়ির বাইরে ছিটকে বেরিয়ে যেতে পারতাম।’’ কোনও রকমে জানলার কাচ ভেঙে গাড়ি থেকে বার হয়েছিলেন সকলে। পরে সোহম জেনেছিলেন, দুর্ঘটনার মুহূর্তে তাঁদের গাড়ির চালক কয়েক মুহূর্তের জন্য ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। ফলে গাড়ির ডানদিকের চাকার সঙ্গে ডিভাইডারে ধাক্কা লেগেছিল।

মিমি চক্রবর্তী: অল্পের জন্য দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যাওয়া মিমির কাছে নতুন বিষয় নয়। অনেকবার এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে অভিনেত্রীর। তাঁর সাফ কথা, ‘‘শো থেকে ফেরার সময়েই এই ধরনের অভিজ্ঞতাগুলো বেশি হয়। তার কারণও রয়েছে। শো’য়ের কাজে ড্রাইভারদের এত পরিশ্রম করানো হয় যে, অনেক সময়েই ওঁরা গাড়ি চালাতে চালাতে ঘুমিয়ে পড়েন।’’ হাইওয়েতে চলার সময় ট্রাক ড্রাইভারদের কোনও অবস্থাতেই বিশ্বাস করা উচিত নয়, মনে করেন মিমি! তাঁর কথায়, ‘‘মদ্যপ অবস্থায় ট্রাক চালানো বা চালাতে চালাতে ঘুমিয়ে পড়া, ওদের কাছে কোনও ব্যাপার নয়।’

শো করতে গেলে, অর্গানাইজারের গাড়িতে ব্যক্তিগত ড্রাইভারকেও নিয়ে যান মিমি। ‘‘অনেক সময় দেখেছি, গাড়ি চালাতে চালাতেই ড্রাইভার ঝিমোচ্ছে। তখন কোনওরকমে ওঁর ঘুম ভাঙিয়ে ফের রওনা দিয়েছি। তাই এখন আমি নিজের ড্রাইভারকেও নিয়ে যাই।’’ গাড়িতে বসে দু’চোখের পাতা এক করা এক্কেবারে না-পসন্দ অভিনেত্রীর। তবে ক্লান্তি বা অন্য কোনও কারণে ঘুমিয়ে পড়লেও চালকের পাশের আসনে বসা ব্যক্তিগত বাউন্সারকে তিনি কড়া নির্দেশ দিয়ে রাখেন, যাতে ড্রাইভার কোনও অবস্থাতেই ঘুমিয়ে না পড়েন।

অঙ্কুশ হাজরা: গভীর রাতে শহরের বড় মোড়গুলোই সবচেয়ে বিপজ্জনক। বাস্তব অভিজ্ঞতায় এমনটাই দেখেছেন অঙ্কুশ। তাঁর কথায়, ‘‘সকলেই নিজেকে রাজা মনে করে। সিগন্যাল মানতে চায় না। বিশেষ করে বড় ট্রাক আর পিকআপ ভ্যানগুলো।’’ একবার শো সেরে ফেরার সময় হাইওয়েতে অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছিলেন অভিনেতা। ‘‘প্রচণ্ড কুয়াশা ছিল সেদিন। হাইওয়ে ধরে কলকাতায় ফিরছি। গাড়ির গতি ৫৫-৬০ কিলোমিটার। হঠাৎ দেখি, কুয়াশার মধ্যে বিশাল একটা ট্রেলার ট্রাক রাস্তার উপর দাঁড় করানো রয়েছে। ড্রাইভার কোনও রকমে সে যাত্রা বাঁচিয়ে দিয়েছিলেন। ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরে গিয়েছিল আমাদের গাড়িটা। আরেকটু হলে গাড়িটা ট্রেলারের ভিতরে ঢুকে যেতে পারত। ট্রাকটায় পার্কিং লাইট পর্যন্ত ছিল না।’’

তিনি যে ড্রাইভ করতে ভালবাসেন, কারও অজানা নয়। চালকের আসনে বসেও দুর্ঘটনায় পড়েছিলেন অঙ্কুশ। তারাতলা ব্রিজের নীচে ১৮ চাকার একটা ট্রেলার অঙ্কুশের সাধের বিএমডব্লিউ’কে পিষে দিয়ে চলে গিয়েছিল। অভিনেতা বলছিলেন, ‘‘ট্রাকটা ট্রাফিকে দাঁড়িয়েছিল। ট্রাকের বাঁদিকটায় গিয়ে ট্রাফিকে দাঁড়াই। সিগন্যাল সবুজ হওয়ার পর ট্রাকটা বাঁদিকে টার্ন নেয়। আর পুরো ট্রেলারটা আমার গাড়িতে ঘষে বেরিয়ে যায়। এমনকী, ডানদিকের লুকিং গ্লাসটা গুঁড়িয়ে গিয়েছিল। আমি সানরুফ খুলে চিৎকার করলেও লাভ হয়নি। পরে দেখেছিলাম, ট্রাকটার বাঁদিকে কোনও লুকিং গ্লাসও ছিল না।’’ গাড়িতে নতুন করে রং করতে এবং সাইড মিরর লাগাতে প্রায় ৮৮ হাজার টাকা খসেছিল অঙ্কুশের ট্যাঁক থেকে।