গুজরাট থেকে উত্তরপ্রদেশে হাওয়াবদল দেখল বিজেপি

SHARE

‘আচ্ছে দিন’ এলো । বিরোধীদের জন্য।

লোকসভা ভোটের মাত্র চার মাসের মাথাতেই ঘোর দুর্দিন দেখল বিজেপি৷ উত্তরপ্রদেশে লাভ জিহাদের হুঙ্কার তোলা মোদির দল কোনো দাগই কাটতে পারেনি, এমনকি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে গেল বিজেপির শক্ত ঘাঁটি গুজরাট-রাজস্থানও৷ জন্মদিনের ঠিক আগের দিন এমন ‘উপহার’ স্বাভাবিক ভাবেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে খুব আনন্দে রাখবে না৷ কারণ এই ফলকে শুধু রাজ্যস্তরের নেতাদের ব্যর্থতা বলে দায় ঝেড়ে ফেলতে পারবেন না নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহ জুটি৷ তাই এই ফল প্রশ্ন তুলে দিল তাদের কৌশল নিয়েও৷image_98618_0

পাশাপাশি লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস নির্বাচনী ইতিহাসের সব চেয়ে খারাপ ফল করার পরও, তাদের ঘুরে দাঁড়ানো যথেষ্টই তাত্পর্যপূর্ণ৷ যেমন তাত্পর্যপূর্ণ সমাজবাদী পার্টির ফল উত্তরপ্রদেশে৷ এই জয় এল এমন একটা সময়ে, যখন একের পর এক ধর্ষণের ঘটনায় রীতিমতো কোণঠাসা ছিল সমাজবাদী পার্টির সরকার৷ ধর্ষণ বিতর্ক ও পারিবারিক কলহের জেরে জেরবার অখিলেশের রাজনৈতিক দক্ষতা নিয়ে যখন প্রশ্নচিহ্ন দেখা দিয়েছিল৷

এ কথা ঠিক, ৩৩টি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের ফলাফল দিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সাফল্য-ব্যর্থতার যাচাই করার সময় এখনও হয়নি৷ তা হয়তো সব ক্ষেত্রে ঠিকও নয়৷ কিন্ত্ত তা সত্ত্বেও মোদি ম্যাজিক ম্লান হয়ে যাওয়ার প্রশ্নটা যে উঠছে, তার কয়েকটি কারণ আছে৷ তিরিশ বছর পর বিজেপি যে একক ভাবে কেন্দ্রে সরকার গঠন করতে পারল, তার পিছনে ছিল মোদির অভূতপূর্ব জনপ্রিয়তা৷ লোকসভার ফল দেখে মনে হচ্ছিল, বিজেপির অশ্বমেধের ঘোড়া রোখা ভোট-ময়দানে প্রায় অসম্ভব৷ কিন্ত্ত ফের এক বার প্রমাণ হল রাজনীতিতে ‘অসম্ভব’ বলে কিছুই নেই৷ কারণ, মোদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তিন দফায় উপনির্বাচন হল৷ প্রথমে উত্তরাখণ্ডে৷ সেখানে তিনটির মধ্যে তিনটিতেই বিজেপি হেরেছে৷ তার পর বিহার, মধ্যপ্রদেশ-সহ কয়েকটি রাজ্যে, যেখানে বিহারে লালু-নীতীশ-কংগ্রেস জোটের কাছে হেরে যায় বিজেপি৷ মধ্যপ্রদেশেও কংগ্রেস একটি আসন ছিনিয়ে নেয়৷ এবার উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান ও গুজরাটে হার৷ এর মধ্যে অধিকাংশই বিজেপির-ই আসন৷ যে বিধায়করা সাংসদ হয়েছেন, তাদের শূন্যপদে ভোট হয়েছিল৷ তার অনেক আসনই কিন্ত্ত ধরে রাখতে পারল না মোদির দল৷

তবে, প্রধানমন্ত্রীর ভাবমূর্তিতে যাতে আঁচড় না পড়ে, সে জন্য বিজেপি নেতারা সারা দিন ধরেই বলেছেন, এটা নেহাতই বিধানসভার উপনির্বাচন৷ এগুলি একেবারে স্থানীয় বিষয়কে কেন্দ্র করে হয়৷ দলের মুখপাত্র শাহনওয়াজ হুসেনের বক্তব্য, ‘বিধানসভার কয়েকটি উপনির্বাচনের ফলাফল দেখে দেশের রাজনৈতিক গতিবিধির বিচার হয় না৷’ উত্তরপ্রদেশ বিজেপির প্রধান লক্ষ্মীকান্ত বাজপেয়ীর দাবি, ‘নির্বাচনে এ রকম হতেই পারে৷ তার মানে এই নয় যে, ২০১৭ সালে উত্তরপ্রদেশে যখন বিধানসভা নির্বাচন হবে, তখন এই ফলাফলই হবে৷ সেখানে আমরা জিতবই৷ আর এই হারের দায়টা স্থানীয় নেতাদের৷’ কিন্ত্ত কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক শাকিল আহমেদের সাফ কথা, ‘এর আগে অন্য কোনো সরকারের আমলে, প্রথম একশো দিনের মধ্যেই এতখানি প্রতিষ্ঠান বিরোধী ভোটদানের প্রবণতা হয়নি৷’

হারের যে কারণ বিজেপি-ঘনিষ্ঠ কাঞ্চন গুপ্তেরা মনে করেছেন তা হল, মোদি বিপুল প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছেন৷ কিন্ত্ত একশো দিনে সেই প্রতিশ্রুতির রূপায়ণ সম্ভব নয়৷ এই প্রত্যাশা পূরণ না হওয়াতেই এই শোচনীয় ফল৷ তবে, মানুষের মনে যাতে তা নিয়ে ক্ষোভ তৈরি না হয়, সেটা দেখা সংগঠনের কাজ৷ সংগঠন সেটা করতে পারেনি৷ দ্বিতীয় যে বিষয়টি বিজেপির নেতারা ঘনিষ্ঠমহলে স্বীকার করছেন, জিনিসের দাম এবং পাকিস্তান নীতি, এই দুইয়ের জন্যও মানুষের মোহভঙ্গ হয়েছে৷ এর মোকাবিলা করতে গিয়ে উত্তরপ্রদেশে চরম যে পন্থা নেন অমিত শাহ, তা হল লাভ জিহাদ৷ তবে মুজফ্ফরনগর দাঙ্গা বিজেপিকে যে বিভাজনের সুবিধা পাইয়ে দিয়েছিল, তা কিন্ত্ত দিতে পারেনি হিন্দু-মুসলিম ভাগের এই অঙ্ক৷ আর মায়াবতী না লড়লেও কোনো দলিত ভোটই পায়নি বিজেপি৷ পাশাপাশি, সন্দেহ নেই, এই ফলে মৃতপ্রায় কংগ্রেস কিছুটা চাঙ্গা হবে৷ কিন্ত্ত কংগ্রেসের এই জয় কিন্ত্ত সোনিয়া-রাহুলকে বাদ দিয়ে৷ কারণ, তারা তো দেশের বাইরেই ছিলেন৷ এই জয় তাই রাজ্য নেতাদেরই সাফল্য বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল৷ তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর বলেছেন, ‘উপনির্বাচন হল উপনির্বাচন৷ আসল ভোট নয়৷ এরপর মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানায় যখন বিজেপি প্রবল ভাবে জিতবে, তখন আমরা দেখাব যে, জনতা আমাদের সঙ্গে আছে৷’

সামনের মাসে দুই রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে ফের ঘুঁটি উল্টে ‘সুনমো’ আসতেই পারে৷ কিন্ত্ত সে জন্য এই উপনির্বাচনের ব্যর্থতা মোদি-অমিতকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করাবেই৷ কারণ সাফল্য হলে তা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের, আর ব্যর্থতার দায় শুধুই আঞ্চলিক নেতাদের, তা কিন্ত্ত বিজেপির মতো নিয়মানুবর্তী দলে মানায় না৷ তাই এক মাসে রণকৌশল বদলে মোদি ম্যাজিক ফের সজীব হয়ে ওঠে কি না, সে দিকেই থাকবে নজর৷- ওয়েবসাইট।