সাগর বুকে নতুন সম্ভাবনা

SHARE

মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৮০ কিলোমিটার দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের বুকে জেগেছে এক সম্ভাবনা। সুন্দরবনের দুবলার চর উপকূল থেকে এ ভূখণ্ডের অবস্থান ২৫ কিলোমিটার দূরে। বর্তমানে এটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে দুই মিটার উচ্চতায় রয়েছে। ৭ দশমিক ৮৪ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ ভূখণ্ড ঘিরে গড়ে উঠেছে প্রায় ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ৫০০ মিটার প্রশস্ত সি-বিচ। চারটি ধাপে গড়ে ওঠা এ দ্বীপ বর্তমানে পূর্ণতা লাভ করেছে। পর্যটনশিল্প বিকাশে নতুন দিগন্ত উন্মোচনের এ সম্ভাবনার নাম ‘বঙ্গবন্ধু দ্বীপ’।

সম্প্রতি বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দ্বীপটির স্থায়িত্ব, জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশগত নানা দিক বিশ্লেষণ করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল গবেষক এ গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন। তাঁরা জানিয়েছেন এর সম্ভাবনার কথা। পরামর্শ দিয়েছেন সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে এটিকে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে গড়ে তোলার।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোস্টাল রিসার্চ ইউনিটের অধীনে ২৮ সদস্যের একটি গবেষকদল বঙ্গবন্ধু দ্বীপ নিয়ে গবেষণা করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক শহীদুল ইসলামের নেতৃত্বে ২৮ সদস্যের অনুসন্ধানী দলটি ১১ থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারি বঙ্গোপসাগরের বুকে জেগে ওঠা বঙ্গবন্ধু দ্বীপে সর্বপ্রথম একটি বিজ্ঞানভিত্তিক অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করে। মাঠপর্যায়ে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে তা পর্যালোচনা করে গতকাল শুক্রবার গবেষণার ফল উপস্থাপন করা হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দপ্তর সংলগ্ন সভাকক্ষে গতকাল সকালে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে গবেষণার ফল তুলে ধরেন গবেষকদলের প্রধান অধ্যাপক শহীদুল ইসলাম। তিনি বঙ্গবন্ধু দ্বীপের সম্ভাবনা ও করণীয় সম্পর্কেও গবেষকদলের পক্ষ থেকে মতামত তুলে ধরেন।

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, গবেষকদলের সদস্য প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক নিয়ামুল নাসের, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম, স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার এবং গবেষণার আর্থিক

সহযোগী অ্যাম্বিয়ান্স বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিদ্যা বরণ শিমুল।

অধ্যাপক শহীদুল ইসলাম বলেন, বঙ্গবন্ধু দ্বীপের আশপাশে আরো বেশ কয়েকটি পরিচিত পর্যটন স্থান রয়েছে। এর মধ্যে সুন্দরবনসংলগ্ন কটকা ও দুবলার চর অন্যতম। নিকটবর্তী পুতনির চরেও প্রশস্ত সমুদ্রসৈকত রয়েছে। তবে এ স্থানগুলোর তুলনায় বঙ্গবন্ধু দ্বীপে পর্যটনশিল্প বিকাশের সম্ভাবনা বহুগুণ বেশি। ফলে এ সম্ভাবনাময় সৈকতগুলোকে একটি মাস্টারপ্ল্যানের আওতায় এনে এ অঞ্চলে ইকো-ট্যুরিজম বিকাশে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।

গবেষকদলের প্রধান জানান, দ্বীপটি বর্তমানে সাগরপৃষ্ঠ থেকে দুই মিটার উচ্চতায় অবস্থান নিয়ে আছে। এটির আয়তন ৭ দশমিক ৮৪ বর্গকিলোমিটার। দ্বীপটির চারদিকে ঘিরে আছে প্রায় ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ৫০০ মিটার প্রশস্ত সি-বিচ। এর সঙ্গে রয়েছে ছোট ছোট বালিয়াড়ি ও এক দশকের কম সময়ে গড়ে ওঠা সবুজ শ্যামল বিস্তীর্ণ ম্যানগ্রোভ বন। দ্বীপটিতে পর্যটনের সম্ভাবনা ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, উপকূলীয় অঞ্চলে পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ সবুজ শ্যামল বনাঞ্চল, প্রশস্ত বালুকাভূমি বা বিচ, স্বচ্ছ পানি, সাঁতারের জন্য উপযোগী স্থান ও সাগর-সংশ্লিষ্ট জীববৈচিত্র্য। বঙ্গবন্ধু দ্বীপে এর প্রায় সব কিছুরই সন্নিবেশ রয়েছে। প্রশস্ত বালুকাভূমিতে সব ধরনের বিচ গেমস ও সূর্যস্নানের ব্যবস্থা করা যাবে। বালিয়াড়ি অপরিবর্তিত রেখে পর্যটকদের জন্য গড়ে তোলা যাবে পরিবেশবান্ধব আবাসস্থল। দ্বীপটির কোথাও চোরাবালি নেই।

চারদিকের পানি অত্যন্ত স্বচ্ছ এবং পানির গুণগত মানও আদর্শিক পর্যায়ের।

অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, গবেষণালব্ধ ফলাফল বাংলাদেশের সাগরসম্পদ, উপকূলীয় অঞ্চলের সম্পদ ব্যবহার, সাগরকেন্দ্রিক অর্থনীতি ও পর্যটন নিয়ে উন্নয়ন কার্যক্রমের সম্ভাবনা সৃষ্টি হলো। এটা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় ভূমিকা রাখবে।

অধ্যাপক শহীদুল বলেন, ১৯৯২ সালে মালেক ফরাজি নামের এক ব্যক্তি প্রথম দ্বীপটিতে অবতরণ করেন। মত্স্য শিকারি মালেক ফরাজি বঙ্গবন্ধুর একনিষ্ঠ ভক্ত হওয়ায় তখনকার বৈরী পরিবেশেও তিনি বঙ্গবন্ধুর নামে দ্বীপটির নাম রাখেন। তখন এর আয়তন ছিল মাত্র দুই একর এবং সেটি ছিল সম্পূর্ণ কাদা ও বালুময়। এরপর দীর্ঘদিন এর কোনো ক্রমবৃদ্ধি লক্ষ করা যায়নি। ২০০৪ সালের পর থেকে দ্বীপটি দ্রুত বাড়তে থাকে এবং ২০১৩ সালের দিকে এসে এটি বর্তমান অবয়ব লাভ করে।