কোহলির কীর্তি ম্লান করে প্রোটিয়াদের দাপুটে জয়

SHARE

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৮৪ তম সেঞ্চুরি পূর্ণ করেছিলেন বিরাট কোহলি। সেই সঙ্গে প্রথম সেঞ্চুরি হাঁকালেন রুতুরাজ গায়কোয়াড়। জোড়া শতরানের সুবাদে স্কোরবোর্ডে তিনশোর্ধ্ব রানের বড় পুঁজি গড়েছিল ভারত। সেটিও শেষ পর্যন্ত যথেষ্ট হলো না। মার্করাম, ব্রেভিস, ব্রিৎজকেরা দুর্দান্ত ইনিংস খেলে ম্যাচ জিতিয়ে দিলেন প্রোটিয়াদের। ফলে ৩ ম্যাচের সিরিজ এখন ১-১ সমতায়।

প্রথম ম্যাচে ১৭ রানে জয়ের পর গতকাল সিরিজ জয়ের লক্ষ্যে নেমেছিল ভারত। রায়পুরে টস হেরে শুরুতে ব্যাটিংয়ে নেমে স্বাগতিক দল ৫ উইকেটে ৩৫৮ রান সংগ্রহ করে। জবাবে ৪৯ দশমিক ২ ওভারেই লক্ষ্যে পৌঁছে যায় সফরকারী দক্ষিণ আফ্রিকা। ৪ উইকেটে জয়ের দিনে ৯৮ বলে ১১০ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস উপহার দিয়েছেন এইডেন মার্করাম।

এর আগে শুরুতে ভারতের আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে দেখে মনে হচ্ছিল রানটা চারশোর কাছাকাছি চলে যেতে পারে। যদিও শেষ পর্যন্ত ৩৫৮-তেই থামতে হয়েছে কোহলি-রাহুলদের। রায়পুরের পিচ এবং শিশিরে সেই রান ভারতীয় বোলিং বিভাগের পক্ষে আটকানোটা যে সহজ হবে না সেটা তখনই বোঝা গিয়েছিল। হলোও তাই। অবশ্য ভারতের বোলাররাও কোনো সুযোগ তৈরি করতে পারেনি।

অথচ এদিন ম্যাচের শুরুটা দারুণ করেছিল টিম ইন্ডিয়া। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ১০ ওভারের মধ্যেই আউট হয়েছিলেন দুই ওপেনার যশস্বী জয়সওয়াল এবং রোহিত শর্মা। তারপর ভারতীয় ইনিংসের হাল ধরেন সেঞ্চুরি হাঁকানো দুই তারকা-বিরাট এবং রুতুরাজ। ১৯৫ রানের জুটি গড়েন দু’জনে। এদিন আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি করেন রুতুরাজ। তবে ৮৩ বলে ১০৫ রানে শেষ হয়ে যায় তার ইনিংস। রুতুরাজের পর শতরানের দেখা পেলেন বিরাট কোহলিও। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সব মিলিয়ে ৮৪তম সেঞ্চুরি পূর্ণ করলেন কোহলি। অর্থাৎ শীর্ষে থাকা শচীন টেন্ডুলকারের থেকে এখনও ১৬ ধাপ পেছনে তিনি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মোট একশ’টি সেঞ্চুরি আছে শচীনের। তার মধ্যে টেস্ট ফরম্যাটে করেন ৫১টি। এতদিন পর্যন্ত ক্রিকেটের কোনো একটি ফরম্যাটে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরির নজির ছিল লিটল মাস্টারের নামে। সেই রেকর্ড প্রথম ম্যাচে রাঁচিতেই ভেঙে দিয়েছিলেন কোহলি। আর গতকাল আরও এক কদম উঠলেন তিনি। ৫৩তম ওয়ানডে সেঞ্চুরি পূর্ণ করলেন তিনি।

এ নিয়ে টানা দু’বার সেঞ্চুরি হাঁকালেন ১১ বার। যা আরও একটা নজির। বিশ্বের আর কোনও ব্যাটারের এমন নজির নেই। তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে সাবেক প্রোটিয়া তারকা এবি ডিভিলিয়ার্স। এ ছাড়া বিভিন্ন ভেন্যুতে সর্বাধিক ওয়ানডে সেঞ্চুরির (৩৪*) রেকর্ডও এখন তার নামে। তারপর রয়েছেন শচীন টেন্ডুলকার (৩৪), রোহিত শর্মা (২৬), হাশিম আমলা (২১) ও এবি ডিভিলিয়ার্স (২১)। অবশ্য সেঞ্চুরির পর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি কোহলি। ১০২ রান করে এনগিডির বলে মার্করামের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়ে ফিরেছেন। এদিন ব্যাটিং অর্ডারে নিজেকে তুলে আনেন অধিনায়ক রাহুল। তিনি ব্যাট করতে নামেন পাঁচ নম্বরে। রাঁচিতে ৬০ রানের ইনিংস উপহার দিয়েছিলেন। রায়পুরে ৩৩ বলে হাফসেঞ্চুরি করলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ৬৬ রানে অপরাজিত থাকেন রাহুল। কিন্তু বিরাট আউট হওয়ার পর থেকেই ভারতের রানের গতি কমতে থাকে। নিজের ভুলে রান আউট হন ওয়াশিংটন সুন্দর (১)। তারপর ব্যাট করতে নামেন রবীন্দ্র জাদেজা। কিন্তু ২৭ বল খেলে মাত্র ২৪ রান করেন তিনি।

ধারাভাষ্যকাররাও বলছিলেন, এই পরিস্থিতিতে রানটা যথেষ্ট নয়। সেটিই সত্যি হলো। ২৬ রানে প্রোটিয়াদের প্রথম উইকেট পড়লেও দ্বিতীয় উইকেট জুটিতেই হয়ে যায় সেঞ্চুরি পার্টনারশিপ। অধিনায়ক বাভুমা ৪৬ রানে আউট হলেও অন্যদিকে ভারতীয় বোলারদের নিয়ে ছেলেখেলা করেছেন মার্করাম। মাত্র ৯৮ বলে ১১০ রান করেন তিনি। কিন্তু মার্করামের উইকেট ফেলার পরও ম্যাচে ফিরতে পারেনি ভারত।

মিডল অর্ডারে ম্যাথু ব্রিৎজকে এবং ডেওয়াল্ড ব্রেভিস দুজনেই অনবদ্য ইনিংস খেলেছেন। ব্রিৎজকে করেন ৬৮ রান। মাত্র ৩৪ বলে ৫৪ করেন ব্রেভিস। ওই দুই ব্যাটারের ইনিংসেই ভারতের হাতের বাইরে চলে যায় খেলা। শেষ পর্যন্ত চার বল বাকি থাকতেই ম্যাচ পকেটে পুরে নেয় প্রোটিয়ারা। দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট ইতিহাসে এটা তৃতীয় সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়।