মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননায় মোদি: হাসিনা সন্ত্রাসীদের টুঁটি চেপে ধরেছেন

SHARE

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ বাংলাদেশ ও ভারতের শত্রু। এটা অশান্তির জায়গা। বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশকেই এই অশুভ শক্তির মোকাবিলা করতে হচ্ছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহস উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘হাসিনা দেশের সন্ত্রাসীদের টুঁটি চেপে ধরেছেন। বন্ধু হিসেবে তাঁর জন্য যেকোনো পদক্ষেপ নিতে আমি প্রস্তুত।’

আজ শনিবার বিকেলে দিল্লি সেনানিবাসের মানেকশ সেন্টারে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গ করা ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর সাত সদস্যের পরিবারের হাতে মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা তুলে দেওয়ার অনুষ্ঠানে ন

রেন্দ্র মোদি এ কথা বলেন।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ

হাসিনা এই অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা তুলে দেন। তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতীয় সেনা-শহীদদের রক্তে বাংলাদেশের ইতিহাস রচিত হয়েছে। তাঁদের এই আত্মত্যাগের কাহিনি প্রজন্মের পর প্রজন্ম মনে রাখবে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের অবদান স্মরণ করে বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের পাঁচ বছরের জন্য ‘মাল্টিপল এন্ট্রি’ ভিসা দেওয়ার সিদ্ধান্ত সরকার নিয়েছে। এই ঘোষণার পাশাপাশি তিনি আরও বলেন, মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের ছাত্রছাত্রীদের ভারত বৃত্তি দেয়। এই সংখ্যা আরও ১০ হাজার বাড়ানো হবে। তা ছাড়া বছরে ১০০ জন মুক্তিযোদ্ধার জন্য বিশেষ চিকিৎসার বন্দোবস্ত ভারত সরকার করবে।
ভারতের দিল্লি সেনানিবাসের মানেকশ সেন্টারে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গ করা ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর সাত সদস্যের পরিবারের হাতে আজ শনিবার বিকেলে মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সৌজন্যেএকাত্তরের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ১ হাজার ৬৬১ জন ভারতীয় সেনা শহীদ হয়েছিলেন। এই শহীদদের বাংলাদেশের পক্ষে সম্মাননা জানানোর বিষয়টি প্রথম অনুধাবন করেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল সাজ্জাদ জহির। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রস্তাবটি অনুমোদন করেন। আজ থেকে তা বাস্তবায়িত হওয়া শুরু হলো। ভারতীয় সেনা, নৌ, বিমান ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সাতজন শহীদকে এই সম্মাননা জানিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী প্রক্রিয়াটি শুরু করলেন। একে একে বাকি সব শহীদ পরিবারের সদস্যদের হাতে বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তারা এই সম্মাননা পৌঁছে দেবেন।

বেলা ঠিক সাড়ে তিনটায় ম্যানেকশ সেন্টারের বিশাল প্রেক্ষাগৃহে একই সঙ্গে উপস্থিত হন হাসিনা ও মোদি। তাঁদের আগেই মঞ্চে হাজির ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ ও অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকও উপস্থিত। মঞ্চের পেছনে মুক্তিযুদ্ধের ডাক দেওয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সেই ঐতিহাসিক ভাষণের ছবি। তারই সঙ্গে শহীদ মিনার ও মুক্তিযোদ্ধাদের ছবির কোলাজ। দুই দেশের জাতীয় সংগীত দিয়ে অনুষ্ঠানের শুরু। জাতীয় সংগীতের সময় মঞ্চের দুই পাশে ফুটে উঠল দুই দেশের জাতীয় পতাকা। তারপর শুরু একে একে সাত শহীদের স্মরণ ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের হাতে অভিজ্ঞানপত্র তুলে দেওয়া। প্রেক্ষাগৃহ পূর্ণ বীর শহীদদের পরিবারের সদস্যে। অভিজ্ঞানপত্রসহ সম্মাননা স্মারক তুলে দেওয়ার সময় প্রেক্ষাগৃহ ভরে গেল করতালিতে।

প্রথমেই সংক্ষিপ্ত ভাষণ ইংরেজিতে পাঠ করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদানের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, এই অবদানের জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে ২০১১ সালে প্রথম বাংলাদেশ স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হয়। তারপর ওই সম্মান দেওয়া হয় অটল বিহারী বাজপেয়ি ও প্রণব মুখার্জিকে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভাষণ দিলেন হিন্দিতে। দুই দেশের শহীদদের অবদানের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, আজ শহীদদের আত্মত্যাগ স্মরণ করার দিন। কারণ, ভারতীয় বাহিনী শুধু বাংলাদেশের মানুষের প্রতি অন্যায় ও অবিচারের জবাব দিতে লড়েনি, লড়েছিল মানবতার বিরুদ্ধে অস্ত্র ব্যবহারের বিরুদ্ধে। তিনি আরও বলেন, ঠিক এই কারণে দুই দেশের ১৪০ কোটি জনতা পরস্পরের প্রতি বিশ্বস্ত। এটা সেই বিশ্বাস ও আস্থা প্রকাশের দিন। পাকিস্তানের নাম না করে মোদি বলেন, একাত্তরের ইতিহাস নরসংহারের নিকৃষ্টতম ইতিহাস। সেটা ছিল বাংলাদেশের একটা গোটা প্রজন্মকে নিঃশেষ করে দেওয়ার চক্রান্ত। তারা বাংলাদেশ ও বাঙালির অস্তিত্বকে মুছে দিতে চেয়েছিল। তা যাঁরা হতে দেননি, তাঁদের সেই বলিদানের পেছনে ছিল রাষ্ট্রপ্রেমের কাহিনি।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করে মোদি বলেন, সোনার বাংলাকে তিনিই গড়ে তুলছেন। দেশের যা প্রবৃদ্ধি, তা বহু দেশের কাছে ঈর্ষাজনক। কিছু ক্ষেত্রে তা ভারতকেও ছাপিয়ে গেছে।