বৈষম্য কমাতে আইনি কাঠামো শক্তিশালী করা, পার্লামেন্টকে আরও প্রতিনিধিত্বশীল করা, সকলের জন্য অর্থনৈতিক সুবিধা নিশ্চিত করা, সামাজিক সংলাপ ও মানব সম্পদ বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে পাঁচ দফা ‘ঢাকার ঘোষণা’র মধ্য দিয়ে পর্দা নামলো ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) ১৩৬তম সম্মেলন।
ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত পাঁচ দিনব্যাপী এই সম্মেলনের শেষ দিন বুধবার আইপিউ’র সাধারণ সম্মেলনে ‘ঢাকা ঘোষণা’ সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদন করা হয়।
এর আগে গত শনিবার এই সম্মেলনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশে এবারই প্রথম আন্তর্জাতিক পর্যায়ের এত বড় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো। বিশ্বের ১৩২টি দেশ এই সম্মেলনে অংশ নেয়।
এবারের সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য ছিল, ‘রিড্রেসিং ইনইকুয়ালিটিজ: ডেলিভারিং অন ডিগনিটি অ্যান্ড ওয়েল বিং ফর অল’।
এই প্রতিপাদ্যের ওপর রোববার কি-নোট পেপার উপস্থাপন করেন শান্তিতে নোবেল জয়ী ভারতের শিশু অধিকার কর্মী কৈলাশ সত্যার্থী। পরে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা এই প্রতিপাদ্যের ওপর আলোচনা করেন।
এর বাইরে আইপিউ’র বিভিন্ন কমিটিতে বেশ কিছু প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল- কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে আরেক দেশের হস্তক্ষেপ বন্ধের প্রস্তাব এবং কয়েকটি দেশে দুর্ভিক্ষপিড়ীত মানুষের পাশে দাঁড়াতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান।
এই সম্মেলনের মাধ্যমেই প্রথমবারের মতো ওয়েব টিভি চালু এবং গ্রিন অ্যাসেম্বলির আয়োজন করে সংস্থাটি।
আইপিউ’র সম্মেলন শেষে সংগঠনটির প্রেসিডেন্ট সাবের হোসেন চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘এখান থেকে যেসব প্রতিনিধি ফেরত যাচ্ছেন তারা নিজ নিজ দেশে গিয়ে ঢাকা ঘোষণার বাস্তবায়নের জন্য নিজেদের পার্লামেন্টকে অন্তর্ভূক্ত করবেন।’
তিনি বলেন, ‘এর আগে যখন ভিয়েতনামের হ্যানয়ে আমরা সম্মেলন করেছিলাম, তখন সেখানকার পার্লামেন্টও হ্যানয় ঘোষণার বাস্তবায়নে কাজ করেছে। সে হিসেবে আমোদের সংসদেরও এখানে সুযোগ আছে।’
সম্মেলন শেষে সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘এবারের সম্মেলনের সবচেয়ে বড় অর্জন হচ্ছে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ওপর বিশ্ব গণতান্ত্রিক সম্প্রদায়ের স্বীকৃতি। দশম জাতীয় সংসদের ওপর যে তাদের আস্থা রয়েছে সেটা প্রমাণিত হলো।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবাদের ভয়ে ভীত না হয়ে তারা এসেছিল, এটাই আমাদের সফলতা।’
ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, ‘সফলতম সম্মেলন করতে পেরেছি আমরা। গণতন্ত্রে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে হবে। এবারের সম্মেলনে নেয়া পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়নে উদ্যোগী হলে আমরা লক্ষ্য অর্জন করতে পারবো।’
আইপিউর’র প্রেসিডেন্ট সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশের বিভিন্ন শহরে জঙ্গি হামলা সত্বেও আমরা এখানে একত্রিত হয়েছি। নিরাপত্তা সংকটের মধ্যে আমরা এ সম্মেলন সফলভাবে শেষ করে ভয়কে জয় করেছি। আগামীতেও এধরনের যেকোনো ঝুঁকি মোকাবেলায় পার্লামেন্টারি ফেরাম ঐক্যবদ্ধ হয়ে দাঁড়াবে। সন্ত্রাসবাদের অশুভ তৎপরতায় আমরা ভয় পেয়ে বসে থাকবো না।’
চলতি বছরের অক্টোবরে রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবুর্গে আইপিইউ’র ১৩৭তম সম্মেলনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সেখানেও সন্ত্রাসীরা হামলা করেছে। এজন্য কি আমরা বসে থাকবো? না, এই ঢাকার সম্মেলন আমাদের বলছে আমরা সেখানে যাব।’
সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘এই সম্মেলন প্রমাণ করেছে, আয়োজক দেশের সংসদ যদি রাজি থাকে তবে আমরা বিশ্ব গণতান্ত্রিক সম্প্রদায় যেখানেই হোক না কেন যাবো।’
সমাপনী ভাষণে ভারতীয় প্রতিনিধি আর কে সিং বলেন, ‘এবারের আইপিইউ সম্মেলন আমার দেখা সফলতম সম্মেলন। আমি এখানে অভিভূত হয়েছি। বাংলাদেশের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য উঠে এসেছে মেলায়। আমরা বুঝতে পারি- একটা সম্মেলন করতে কত শ্রম করতে হয়েছে।’
আইপিইউ সেক্রেটারি জেনারেল মার্টিন চুংগং বলেন, ‘এ সম্মেলনের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের মধ্যে যে পার্থক্য থাকে তা কমে আসবে। সহযোগিতার মনোভাব দেখাতে হবে। ঢাকা আমার জন্যে ভাগ্যবান শহর। কোনো ধরনের বিরোধিতা ছাড়াই আমাকে আরও চার বছরের জন্য পুনঃনিয়োগ দেয়া হয়েছে।’
আইপিইউ ইতিহাসের প্রথম আইপইউটিভি’র যাত্রা শুরু হয়েছে। এটাকে সবুজ সম্মেলন ঘোষণা করা হয়েছে। এ সম্মেলনের গৃহীত প্রস্তাব বাস্তবায়নে করে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে গ্রিন অ্যাসেম্বলি।