শেন ওয়ার্নের কথাটাই তাহলে সত্যি হলো!
প্রথম সেশনের বিরতি চলছিল তখন। ভারতের সামনে জয়ের জন্য ৪৪১ রানের প্রায় অসম্ভব এক লক্ষ্য দিয়ে রেখেছে অস্ট্রেলিয়া। চতুর্থ ইনিংসে রান তাড়া করে জয়ের বিশ্বরেকর্ডই যেখানে ৪১৮! বিরতিত স্টার স্পোর্টসে বিশ্লেষণ করতে থাকা সুনীল গাভাস্কার তখন বলছিলেন ‘জয় তো সম্ভব নয়। ভারত চতুর্থ ইনিংসে অন্তত ৩০০ বা ৩৫০ রান করতে পারলেও সেটি হবে বড় অর্জন।’ জবাবে আরেক বিশ্লেষক শেন ওয়ার্ন দুষ্টুমি করেই ভারতীয় কিংবদন্তিকে বললেন ‘বেস্ট অব লাক, সানি!’
ইঙ্গিতটা পরিষ্কার, ভারত চতুর্থ ইনিংসে ৩০০-ও করতে পারবে না। কিংবদন্তি অস্ট্রেলিয়ান লেগ স্পিনারের কথাটাই তো সত্যি হলো। সত্যি করছেন আরেক অস্ট্রেলিয়ান স্পিনারই – স্টিভ ও’কিফ! সেটিও এমন কীর্তি গড়ে, যা করতে পারলে শেন ওয়ার্নও গর্বিত হতেন! প্রথম ইনিংসে ৩৫ রানে ৬ উইকেট নিয়ে ভারতের বিখ্যাত ব্যাটিং লাইন-আপও ধসিয়ে দিয়েছিলেন ও’কিফ। কাকতালীয়ভাবে দ্বিতীয় ইনিংসেও ঠিক ৩৫ রানেই আরও ৬ উইকেট। ৭০ রানে ১২ উইকেট ভারতের মাটিতে যেকোনো বিদেশি স্পিনারের রেকর্ড বোলিং। এর আগে ২০০৮ সালে নাগপুরে ম্যাচে ৩৫৮ রান দিয়ে ১২ উইকেট পেয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ান অফ স্পিনার জেসন ক্রেজা।
দুই ইনিংসে ও’কিফের স্পিন ঘূর্ণিই মাটিতে নামাল ভারতকে। প্রথম ইনিংসে ১০৫ রানের পর দ্বিতীয় ইনিংসে অলআউট হলো ১০৭ রানে। সিরিজের প্রথম টেস্টটা তাতে হেরে গেল ৩৩৩ রানে। থামল বিরাট কোহলিদের টানা ১৯ টেস্টের অপরাজিত পথচলা।
দিনের শুরুতে অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথের দুর্দান্ত সেঞ্চুরির সৌজন্য অস্ট্রেলিয়া দ্বিতীয় ইনিংসে করেছে ২৮৫ রান। সঙ্গে প্রথম ইনিংসে পাওয়া ১৫৫ রানের লিড তো ছিলই। কিন্তু ৪৪১ রানের লক্ষ্যে নেমে যেন দিশেহারা ভারত। দুই ওপেনার মুরালি বিজয় ও লোকেশ রাহুল দুজনই আউট হয়েছেন ১৬ রানের মধ্যে, দুজনই এলবিডব্লু। কিন্তু এর চেয়েও যেটি চোখে লেগেছে, তা হলো দুজনই অহেতুক দুটি রিভিউ নিয়ে সেগুলো নষ্ট করেছেন। এরপর এল ভারতের সবচেয়ে বড় হতাশা! স্টিভেন স্মিথের সেঞ্চুরির পর যাঁর ব্যাটের দিকে তাকিয়ে ছিল ভারত, সেই বিরাট কোহলিও আউট! সেটিও বড্ড দৃষ্টিকটু। ও’কিফের বল স্টাম্পের বাইরে যাবে ভেবে ছেড়ে দিয়েছিলেন, কিন্তু সেটি উল্টো ঘুরে এসে নাড়িয়ে দিল কোহলির অফ স্টাম্প! ৪৭ রানেই ৩ উইকেট নেই ভারতের।
এরপর ভারতের মিডল অর্ডারের পুরোটা একাই ধসিয়ে দিয়েছেন ও’কিফ। রাহানে-অশ্বিন-ঋদ্ধিমান-পূজারা সবাইকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। ভারত তখন ৭ উইকেট হারিয়ে ১০০! তখন দুটি ‘প্রশ্ন’ ঘুরছিল—ও’কিফ ভারতের মাটিতে যেকোনো বিদেশি বোলারের মধ্যে রেকর্ডই ভাঙতে পারবেন (ইয়ান বোথামের, ম্যাচে ১০৬ রানে ১৩ উইকেট)? আর ভারত প্রথম ইনিংসের ১০৫ রান পেরোতে পারবে?
প্রথমটি হয়নি। তাতে সঙ্গী স্পিনার নাথান লায়নের ওপর একটু ‘রাগ’ করতেই পারেন ও’কিফ। শুরুতে লোকেশ রাহুলকে ফিরিয়েছিলেন লায়ন, শেষ দিকে এসে একে একে ফিরিয়ে দিলেন ভারতের শেষ তিন ব্যাটসম্যান জাদেজা, জয়ন্ত ও ইশান্ত শর্মাকে! তবে ভারত এর মধ্যেই প্রথম ইনিংসের সংগ্রহটাকে ছাড়িয়ে গেছে—দ্বিতীয় ইনিংসে দু-ই রান বেশি করেছে।
তাতে কী! লজ্জার পরাজয় তো তার অনেক আগেই লেখা হয়ে গেছে। স্টার স্পোর্টস।