অন্য কোনো দলের প্রার্থী না থাকায় জেলা পরিষদ নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের সরে দাঁড়াতে চাপ দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো জেলা পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটের আগের দিন মঙ্গলবার সচিবালয়ে অনির্ধারিত ব্রিফিংয়ে এই নির্বাচনের বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী কাদের।
বুধবার সকাল ৯টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত জেলা ও উপজেলা সদরে স্থাপিত ভোটকেন্দ্রে চেয়ারম্যান, সাধারণ ও সংরক্ষিত
সদস্য নির্বাচনে ভোট দেবেন স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিরা।
তিন পার্বত্য জেলা বাদ দিয়ে ৬১টি জেলায় এই নির্বাচন হচ্ছে। তবে এর মধ্যে ২১ জেলায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়া কুষ্টিয়ায় একজন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হলেও আদালত সেই প্রক্রিয়া স্থগিত রেখেছে।
বাকি ৩৯ জেলায় চেয়ারম্যান পদে ভোটে রয়েছেন ১২৪ জন। এসব জেলার মধ্যে অন্তত ৩৭টিতে ক্ষমতাসীন দলের ৭৭ জন বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন বলে নির্বাচন কমিশনের আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত বৈঠকে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো জানিয়েছিল।
এই নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে আওয়ামী লীগের যেসব প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন তাদের প্রতি কোনো বার্তা আছে কি না- এমন প্রশ্নে কাদের বলেন, “এই ইলেকশনে অপজিশন অংশ নেয়নি। অপজিশন বলতে বিএনপি-জাতীয় পার্টি, তাদের কোনো অংশগ্রহণ এই নির্বাচনে নেই। এখানে আমরা কাউকে মনোনয়ন দেইনি, সমর্থন করেছি।”
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “বাকি যারা আছেন, আমরা একটা পর্যায়ে বিষয়টা নিয়ে চিন্তা করলাম যে, অপজিশন নেই ইলেকশনটায়, একেবারেই আনঅপোজড সবাই হয়ে যাবে, এটা কেমন যেন একটা রং ম্যাসেজ যায়।
“সেজন্য আমাদের পলিসি যেটা সেটা হচ্ছে যে, আমাদের পার্টি সমর্থিত প্রার্থীকে বিজয়ী করতে নির্দেশনা আছে। কিন্তু যারা প্রতিপক্ষ হিসেবে নির্বাচন করছে, দলীয় লোক হলেও তাদের প্রত্যাহার করার জন্য অনুরোধ বা কনভিন্স করা- সে বিষয়টা আছে, কিন্তু চাপাচাপিটা করা থেকে আমরা বিরত থেকেছি।”
এক ‘কৌশল’ হিসেবে উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, “অন্তত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্য দিয়েই তারা নির্বাচিত হোক সেটা আমরা চেয়েছি। এখানে অপজিশন থাকলে তো বিষয়টা ভিন্ন কিছু হতো।”
জেলা পরিষদ নির্বাচনে কোনো মন্ত্রী-এমপি যেন আচরণবিধি লঙ্ঘন না করেন সে বিষয়ে দলের সভাপতি শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে নির্দেশনা আছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সম্পাদক বলেন, “এ বিষয়ে আমাদের অবস্থান অত্যন্ত কঠিন।”
“কেউ কেউ আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন বলে অভিযোগ এসেছে। আমি আপনাদের মাধ্যমে তাদের আবারও সতর্কবার্তা পাঠাতে চাই- আচরণবিধি লঙ্ঘন করে তারা এলাকায় অবস্থান করতে পারবেন না, কোনো প্রকার নির্বাচনী কর্মকাণ্ডেও অংশ নিতে পারবেন না। যারা এলাকায় আছেন স্ব স্ব এলাকা ত্যাগ করুন।”
‘কিছু’ স্থানীয় সাংসদের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘন ও প্রভাব খাটানোর অভিযোগ পাওয়ার পর এরই মধ্যে তাদেরকে এলাকা ছাড়তে বলেছে নির্বাচন কমিশন।
জেলা পরিষদ নির্বাচনে কালো টাকা ছড়ানোর অভিযোগের বিষয়ে কাদের বলেন, “টাকা কালো কি সাদা, আমি জানি না। আমাদের দেশে নির্বাচনে মানি ফ্যাক্টর এখনও। মানি হ্যাজ এ রোল টু প্লে।
“এখানে টাকার যে একটা ভূমিকা আছে এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। নির্বাচন কমিশন যেখানে টাকার অঙ্ক নির্ধারণ করে দিয়েছে সে অঙ্কটা কোনো ইলেকশনেই (নির্ধারিত) থাকছে না, সীমাটা অনেক জায়গাতেই লঙ্ঘিত হচ্ছে।”
এক্ষেত্রে সম্প্রতি হয়ে যাওয়া নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন আদর্শ মনে করেন ওবায়দুল কাদের।
“আমার মনে হয় নারায়ণগঞ্জে যে নির্বাচন হল, ওখানে কিন্তু টাকা ছড়াছড়ির বিষয়টা আসেনি। এই ইলেকশনকে মডেল ইলেকশন হিসেবে গণ্য করতে পারি। ইলেকশন হয়েছে ফ্রি, ফেয়ার, ক্রেডিবল, পার্টিসিপেটরি- যেখানে কালো টাকার ছড়াছড়ি নিয়ে কেউ প্রশ্ন করেননি।
“নারায়ণগঞ্জ আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছে আমরা চাইলে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। আগামী জাতীয় নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী হবে, ইউ ক্যান নট গো বিয়ন্ড কন্সটিটিউশন।”
বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে বেশ কয়েকটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের জয়ের প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, “এতগুলো সিটি করপোরেশনে জেতার পরেও নির্বাচন কমিশন নিয়ে প্রশ্ন তুলে লাভ নেই। নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন দেখিয়ে দিল নির্বাচন কমিশন স্বাধীন, নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে পারে।”
নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন হওয়া দরকার মন্তব্য করে কাদের বলেন, “দেরি হয়ে গেছে, বেটার লেইট দেন নেভার। রাষ্ট্রপতি নিজেও বলেছেন বিষয়টা তিনি ভাবছেন এবং সক্রিয়ভাবে ভাবছেন। ইউ হ্যাভ টু ওয়েট সাম টাইম।
“নতুন নির্বাচন কমিশন যখন গঠন হবে তারা নিশ্চয় জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে নিবন্ধিত দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করবে। আমাদের সাথে যখন সংলাপ হবে তখন আমরা এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দেব।”