গুলশান, বনানী, বারিধারা ও নিকেতন এলাকায় আজ বুধবার থেকে বিশেষ রঙের রিকশা ও শীতাতপনিয়ন্ত্রিত বাস সেবা চালু হচ্ছে। এর ফলে গুলশান এলাকার নিরাপত্তা জোরদার হওয়ার পাশাপাশি যানজটও কমবে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আশা করছেন।
গত ১ জুলাই হলি আর্টিজান বেকারি রেস্তোরাঁয় হামলার পরে কাকলী, বনানী ও গুলশান এলাকায় গণপরিবহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে এসব এলাকায় নিয়মিত যাতায়াতকারীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। জনগণের চলাচলের সুবিধার্থে এবং গুলশান এলাকার নিরাপত্তা জোরদার করতে বিশেষ রিকশা ও বাস সেবা চালুর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
ঢাকা উত্তরের মেয়র আনিসুল হক বলেন, আগে এসব এলাকায় বাইরের রিকশা ঢুকত, তা বন্ধ করা হবে। এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশেষ রঙের রিকশা চলবে। চালকদের বিশেষ পোশাক থাকবে। এসব রিকশা নির্দিষ্ট এলাকার বাইরে বের হতে পারবে না। আর দুটি রুটে চলবে বিশেষ বাস। এসব বিশেষ রিকশা ও বাস ছাড়া ব্যক্তিগত গাড়িসহ নিজস্ব যানবাহন চলাচল করতে পারবে।
জানা গেছে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সহায়তায় এবং গুলশান, বারিধারা, বনানী ও নিকেতন সোসাইটির উদ্যোগে ‘ঢাকা চাকা’ নামের বাস সেবা চালু হচ্ছে। পুলিশ প্লাজা থেকে গুলশান ২ নম্বর গোলচত্বর এবং কাকলী মোড় থেকে নতুন বাজার-এই দুটি রুটে প্রতি ১০ মিনিট পরপর বাস ছাড়বে। প্রথম দফায় ১০টি বাস নিয়ে চালু হচ্ছে বাস সেবা। ২০ আগস্টের মধ্যে আরও ১০টি বাস যোগ হবে। শীতাতপনিয়ন্ত্রিত প্রতিটি বাস ৩৫ আসনবিশিষ্ট।
একটি রুটের বাস ছাড়বে তেজগাঁও-গুলশান লিংক রোডের নাভানা মোড় থেকে। বাস পুলিশ প্লাজা, গুলশান ১ ও রূপায়ণ টাওয়ার হয়ে গুলশান ২ নম্বর গোলচত্বর পর্যন্ত যাবে। আরেক রুটের বাস ছাড়বে কাকলী মোড় থেকে। বনানী বাজার, গুলশান ২ নম্বর হয়ে যাবে নতুন বাজার। যেকোনো দূরত্বের ভাড়া ১৫ টাকা।
গুলশানে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ থাকায় বেশ ভোগান্তিতে পড়েন এই পথের নিয়মিত যাত্রীরা। গতকাল মঙ্গলবার কাকলী মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থী, অফিসযাত্রী অনেকে দাঁড়িয়ে আছেন। নতুন বাজার পর্যন্ত প্রত্যেক যাত্রীর কাছ থেকে ৩০ টাকার বিনিময়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় যাত্রী আনা-নেওয়া করা হচ্ছে।
বাস সেবা চালু হওয়ার সংবাদে যাত্রীরা স্বস্তি পেয়েছেন। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মিজানুর রহমান বলেন, প্রায় দেড় মাস ধরে কাকলী থেকে নতুন বাজার যেতে কষ্ট করতে হচ্ছে। নিরাপত্তার কারণে জনগণ তা মেনেও নিয়েছে। বাস চালু হলে কষ্টটা কমবে।
‘ঢাকা চাকা’ বাস সেবা ছাড়াও গুলশানে ২০০, বনানীতে ২০০, বারিধারায় ও নিকেতনে ৫০টি করে বিশেষ রঙের রিকশা চলবে। রিকশাচালক ও মালিকদের বিস্তারিত পরিচয় নেওয়া হয়েছে। একটি রিকশার জন্য চালক থাকবেন তিনজন। বিভিন্ন গন্তব্যের ভাড়া নির্ধারণ করে বানানো তালিকা প্রতি রিকশায় লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে।
গুলশান সোসাইটির মহাসচিব ওমর সাদাত প্রথম আলোকে বলেন, পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে গুলশান অঞ্চলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং যানজট নিরসনে রিকশা চলাচল সীমিত করা হচ্ছে। বিশেষ রঙের রিকশাচালকদের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। যেকোনো তথ্য বা অভিযোগ জানানোর জন্য প্রতিটি রিকশায় একটি হটলাইন নম্বর দেওয়া আছে।
গতকাল গুলশানের ২৩ নম্বর সড়কের শেষ মাথায় গিয়ে দেখা যায়, ওপরের অংশ হলুদ ও নিচের অংশ কালো রং করা শ খানেক রিকশা সারি করে রাখা। ভাড়ার তালিকা লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। চালকদের জন্য কমলা রঙের পোশাক বানানো হয়েছে। চালকের নাম, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, মুঠোফোন নম্বর ও বর্তমান ঠিকানা এবং মালিকের নাম, ঠিকানাসংবলিত পরিচয়পত্র দেওয়া হচ্ছে।
সেখানে উপস্থিত বেশ কয়েকজন চালক রিকশা ভাড়ার তালিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তালিকায় গুলশান ১ থেকে গুলশান ২ নম্বরের ভাড়া ২০ টাকা এবং কাকলী থেকে গুলশান ২ নম্বরের ভাড়া ২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। রিকশাচালকেরা দাবি করেন, বর্তমানে এই ভাড়া ২৫-৩০ টাকা আছে। সব পথেই ভাড়া ৫-১০ টাকা কম ধরে তালিকা নির্ধারণ করা হয়েছে বলে তাঁরা জানান।