চাকরি ফিরে পেতে ঘুরছেন বাবুল

SHARE

babul
আলোচিত পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার এখন চাকরি ফিরে পেতে কর্মকর্তাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। তাঁর সই করা পদত্যাগপত্রটি পুলিশ সদর দপ্তর থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আইন অনুসারে এখন এটি অনুমোদনের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় হয়ে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে যাবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করলেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল প্রথম আলোকে বলেন, তিনি এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না।
পুলিশ সদর দপ্তরের উচ্চপদস্থ একজন কর্মকর্তা পদত্যাগপত্রটি মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রথম আলোকে বলেছেন, এ ধরনের পদত্যাগপত্র ফেরত নেওয়ার কোনো বিধান নেই। এখন এটা নিশ্চিত যে পুলিশ বাহিনীতে বাবুলের চাকরি আর থাকছে না।
স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু খুনের পর গত ২ ও ৩ জুলাই বাবুল আক্তার তাঁর কর্মস্থল পুলিশ সদর দপ্তরে গিয়ে কাজে যোগ দিতে চান। কিন্তু দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা তাঁকে জানিয়ে দেন, পদত্যাগপত্র দেওয়ার পর আর কাজে যোগদান করতে দেওয়া সম্ভব নয়। এরপর বাবুল আর সদর দপ্তরে যাননি।
এ ব্যাপারে জানতে বাবুল আক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। বাবুলের চাকরি থাকছে না, বিষয়টি জানেন কি না জানতে চাইলে তাঁর শ্বশুর মোশাররফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা কীভাবে হলো আমরা জানি না। তবে এ ধরনের কথা শুনেছি।’
বাবুল আক্তারের পদত্যাগ নিয়ে এত দিন নানা কথা শোনা যাচ্ছিল। সর্বশেষ গত ২১ জুলাই চট্টগ্রামে এক অনুষ্ঠানে পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘শুনেছি, বাবুল আক্তার মানসিকভাবে বিষণ্নতায় ভুগছেন। চাকরি করার মতো মানসিক অবস্থা তাঁর নেই। কারও সঙ্গে যোগাযোগ করেন না। অফিসেও আসেন না। তিনি দীর্ঘদিন অনুপস্থিত থাকলে আইন অনুযায়ী বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পুলিশ সদর দপ্তরে বদলি হয়ে আসার দুই দিন পর গত ৫ জুন সকালে চট্টগ্রামের ও আর নিজাম রোডে সন্ত্রাসীর গুলিতে নিহত হন বাবুলের স্ত্রী মাহমুদা খানম। এ ঘটনায় বাবুল বাদী হয়ে অজ্ঞাত পরিচয় তিনজনের বিরুদ্ধে পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেন। শুরুতে জঙ্গিদের সন্দেহ করা হয়েছিল।
কিন্তু পরে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে পুলিশের ধারণা পাল্ট যায়। এরপর জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে গত ২৪ জুন গভীর রাতে খিলগাঁও ভূঁইয়াপাড়ার শ্বশুরবাড়ি থেকে বাবুলকে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়। ১৫ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর আবার তাঁকে শ্বশুরবাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়।
ওই জিজ্ঞাসাবাদের পর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানিয়েছিলেন, ডিবি কার্যালয়ে নেওয়ার পর তিন কর্মকর্তা বাবুলকে ১৫ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেন। জিজ্ঞাসাবাদের সময় বাবুলকে শর্ত দেওয়া হয়েছিল, হয় তাঁকে বাহিনী থেকে সরে যেতে হবে, নইলে স্ত্রী হত্যা মামলার আসামি হতে হবে। ওই সময় কর্মকর্তারা দাবি করেছিলেন, স্ত্রী হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে বাবুলের জড়িত থাকার তথ্য পেয়েছেন তাঁরা।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ওই রাতেই বাবুল বাহিনী থেকে সরে যাওয়ার বিষয়ে সম্মতি দেন এবং পদত্যাগপত্রে সই করেন। বেশ কিছুদিন সেই পদত্যাগপত্রটি পুলিশ সদর দপ্তরে থাকার পর কয়েক দিন আগে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।
এদিকে মাহমুদা হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া দুই আসামি ওয়াসিম ও আনোয়ার গত ২৬ জুন চট্টগ্রাম আদালতে জবানবন্দি দেন। এতে তাঁরা উল্লেখ করেন, হত্যাকাণ্ডে ওয়াসিম, আনোয়ার, মো. রাশেদ, নবী, মো. শাহজাহান, কামরুল শিকদার ওরফে মুছা ও মো. কালু অংশ নেন। তাঁদের মধ্যে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মোটরসাইকেলে ছিলেন ওয়াসিম, মুছা ও নবী। মাহমুদাকে ছুরিকাঘাত করেন নবী। এহতেশামুল হক ওরফে ভোলা অস্ত্র সরবরাহ করেন।
আসামিদের মধ্যে নবী ও রাশেদ গত ৫ জুলাই ভোরে রাঙ্গুনিয়ায় পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। আর মুছাকে ২২ জুন বন্দর এলাকায় এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে বলে দাবি করে আসছেন তাঁর স্ত্রী পান্না আক্তার। তবে পুলিশ তা অস্বীকার করে বলছে, মুছাকে খোঁজা হচ্ছে। পলাতক রয়েছেন আসামি কালু।
গত ২৭ জুন নগরের বাকলিয়া এলাকা থেকে মাহমুদা হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র-গুলিসহ ভোলা ও তাঁর সহযোগী মনিরকে গ্রেপ্তার করা হয়। অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় ২৮ জুলাই বাকলিয়া থানার পুলিশ দুজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। কিন্তু অস্ত্রের উৎস এবং কার নির্দেশে ভোলা সেই অস্ত্র মুছাকে দিয়েছিলেন, তা তদন্তে স্পষ্ট হয়নি।