ইংরেজি বর্ণমালার হিসাবে মার্চপাস্টের একেবারে শুরুতেই লাল-সবুজ পতাকাটা নিয়ে রিওর ঐতিহাসিক মারাকানা স্টেডিয়ামে প্রবেশ করলেন বাংলাদেশের তারকা গলফার সিদ্দিকুর রহমান। অলিম্পিকের এবারের আসরে দেশের পতাকা বহনের সম্মানটা পেয়েছেন সিদ্দিকুর রহমান। দেশের খেলাধুলার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সরাসরি অলিম্পিকে যোগ্যতা অর্জনকারী সিদ্দিকুরের নেতৃত্বে বাংলাদেশের ছোট্ট দলটিকে যেন অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আলাদা মর্যাদাতেই অধিষ্ঠিত হলো।
সিদ্দিকুরের ঠিক পেছনেই ছিলেন সাঁতারু মাহফিজুর রহমান, দেশের দ্রুততম মানবী শিরিন আক্তার ও সাঁতারু সোনিয়া আক্তার। দলের আকারটা খুবই ছোট হওয়ায় দেশের দ্রুততম মানব মেজবাহ আহমেদ, শ্যুটার আবদুল্লাহ হেল বাকিসহ প্রায় সবাইকে এক নজর দেখে নেওয়া গেল। অলিম্পিকে খুব বড় স্বপ্ন থাকে না বাংলাদেশের; পদকের স্বপ্নটা তো অনেক দূরের ব্যাপার। সিদ্দিকুর সরাসরি যোগ্যতা অর্জন করাতেই হয়তো এবার তাঁকে নিয়ে আলাদা একধরনের প্রত্যাশার ফানুস ছড়িয়েছে।
বাংলাদেশ সময় আজ ভোর পাঁচটায় শুরু হয়ে গেছে, গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’—অলিম্পিক গেমস। সারা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসা ক্রীড়াবিদদের এক অপার মিলনমেলা। দুবছর আগেই বিশ্বকাপ ফুটবলের স্বাগতিক ব্রাজিল অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে নতুন করেই জানিয়ে দিল ফুটবলের পাশাপাশি অলিম্পিকও তাদের জন্য একই মাত্রার আনন্দের উপলক্ষ নিয়ে হাজির। রিওর মারাকানা স্টেডিয়ামে উপস্থিত লাখ খানেক দর্শক যেন প্রত্যয় ঘোষণা করল অলিম্পিকের এক সফল ও যুগান্তকারী আয়োজনের।
কী ছিল না এই অনুষ্ঠানে? কাউন্টডাউন শেষে আতশবাজি আলোয় ছেয়ে গেল রিও ডি জেনিরোর আকাশ। ব্রাজিলের জাতীয় সংগীত গাইলেন শিল্পী—পালিনহো ডি ভিয়োলা। লেজার শোতে ফুটে উঠল অ্যামাজন জঙ্গল আর ব্রাজিলের বিভিন্ন সমুদ্রসৈকতের অনিন্দ্য দৃশ্য। ছবির পর ছবিজুড়ে মারাকানার দর্শকদের দেখানো হলো ব্রাজিলের ক্রমবিবর্তনের ইতিহাস।
ফুটবলসম্রাট পেলে নন, মূল মশালটা প্রজ্বলিত করেন ম্যারাথন দৌড়বিদ ভানদেরলেই দি লিমা। ‘গার্ল ফ্রম ইপানেমা’ গানটির সঙ্গে সঙ্গে মারাকানা মাতালেন সুপার মডেল জিসেল বুন্দচেন। গানের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর র্যাম্প উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের চাকচিক্য যেমন বাড়িয়েছে, ঠিক তেমনি যুগের চাহিদার প্রতি সম্মানও জানিয়েছে দারুণভাবেই।
অলিম্পিকের পরম্পরাও মানা হলো। ১৮৯৬ সালে অলিম্পিকের প্রথম আয়োজক গ্রিস প্রথম দল হিসেবে শুরু করল মার্চপাস্ট। এরপর একে একে অন্য সব দেশ। ডোপ কেলেঙ্কারিতে জর্জরিত রাশিয়ার কন্টিনজেন্ট স্টেডিয়ামে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে পেল বিপুল সংবর্ধনা। দর্শকদের বিপুল করতালিতে যেন ঝরে পড়ে ক্রীড়াজগৎকে ডোপ-কলঙ্ক থেকে রেহাই দেওয়ার আকুতিও।