ভাই-কাকা-মামা আমারে মাইরো না, আমি চুরি করি নাই

SHARE

hobi
সিলেটে শিশু রাজনের চিৎকার সারাদেশের মানুষের মন নাড়িয়ে দিয়েছিল। প্রতিবাদের ঝড় উঠেছিল সর্বত্র। কিন্তু পার্শ্ববর্তী জেলা হবিগঞ্জে সম্ভবত পৌঁছায়নি সেই আর্তনাদ। ফের ঘটলো একই ঘটনা। হবিগঞ্জের গরুর বাজার এলাকায় মোবাইল ফোন চুরির অভিযোগে ৩ শিশুকে হাতে-পায়ে বেঁধে অমানসিক নির্যাতন করেছে শাহ আলম নামে এক ব্যক্তি।

বুধবার (২৭ জুলাই) সকালে এ ঘটনা ঘটে। এসময় আশপাশে বেশ কয়েকজন ভিড় জমিয়ে ওই শিশু তিনজনকে নির্যাতনের দৃশ্য দেখেন। কেউ কেউ মোবাইলে ধারণ করেন এ দৃশ্য। মোবাইলে করা এমনই এক ভিডিওতে দেখা গেছে শিশুগুলোকে বেঁধে বাঁশের টুকরা দিয়ে পেটানো হচ্ছে। এদের মধ্যে একজন বলছে, ‘ভাইগো, কাকাগো, মামাগো, মাইরো না। আমি আছিলাম না। আমারে মাইরো না।’

এ ঘটনার পর অভিযুক্ত শাহ আলমসহ তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ ও দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগে সদর মডেল থানার এসআই রাজ কুমারকে ক্লোজড করা হয়েছে। আটককৃতরা হলো-যশোরআব্দা এলাকার আব্দুল আলীর ছেলে শাহ আলম, রিপন মিয়া (১৮) ও তার মা শাহেদা বেগম (৩৫)।

নির্যাতিত শিশুরা হল- যশোরআব্দা এলাকার আব্দুল খালেকের ছেলে রনি (১২), বাচ্চু মিয়ার ছেলে রুবেল (১৩) ও অভিযুক্ত শাহ আলমের ভাড়াটিয়া পরিবারের ছেলে মাহিন (১২)।

স্থানীয়রা জানান, শাহ আলম নামের ওই ব্যক্তি বুধবার (২৭ জুলাই) সকালে মোবাইল চুরির অভিযোগে পৌর এলাকাথেকে ৩ শিশুকে আটক করেন। এ সময় তিনি ওই কলোনির একটি ঘর থেকে মোবাইল ফোন চুরির অপরাধে তাদের হাত-পা বেঁধে নির্মমভাবে মারধর করেন।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে জানানো হলে হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার এসআই রাজ কুমারের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে আইনি কোনো ব্যবস্থা না নিয়েই অজ্ঞাত কারণে ফিরে যায়। ঘটনার পর রাত ৯টায় হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিনের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে আহত শিশুদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে এবং সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত শাহ আলমকে গ্রেপ্তার করে। hobiii
এদিকে, নির্যাতনে আহত শিশুদের হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে চিকিৎসা দিয়েছে পুলিশ। এছাড়া দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে রাত সাড়ে ১১টার দিকে সদর মডেল থানার এসআই রাজ কুমারকে ক্লোজড করেন পুলিশ সুপার জয়দেব কুমার ভদ্র।

অপরদিকে, রাত ১টায় নির্যাতনের শিকার শিশু রুবেলের মা সুলতানা রিজিয়া বাদী হয়ে শাহ আলমকে অভিযুক্ত করে শিশু নির্যাতন আইনে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

জানা যায়, গভীর রাতে নির্যাতনের শিকার শিশুদের নিজ নিজ অভিভাবকদের জিম্মায় দেয়া হয়েছে। ঘটনাটি নিয়ে শহরজুড়ে শুরু হয়েছে তোলপাড়।

এ ব্যাপারে সহকারী পুলিশ সুপার (দক্ষিণ) রাসেলুর রহমান হবিগঞ্জ সদর মডেল থানায় উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, শিশু নির্যাতনের ঘটনার পর দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগে এসআই রাজ কুমারকে ‘ক্লোজড’ করা হয়েছে।

এদিকে, রাত সোয়া ১টার দিকে পুলিশ যশোরআব্দা এলাকায় অভিযান চালিয়ে রিপন ও তার মাকে আটক করেছে পুলিশ।