ইউরোপের দেশগুলোতে অবৈধ হয়ে পড়া বাংলাদেশের লোকজনকে নিরাপদে ফিরিয়ে আনতে একটি কার্যকর, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার ওপর জোর দিচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। এ জন্য আর্থিকসহ বাংলাদেশকে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা দিতে রাজি আছে ইইউ।
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন মেঘনায় গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশের সঙ্গে অভিবাসন ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রথম সংলাপে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদল এ অবস্থানের কথা জানায়। আলোচনায় পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হক বাংলাদেশের এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের বৈশ্বিক ও অর্থনৈতিক বিষয়াবলি, ইউরোপের বহির্গমন সেবাবিষয়ক উপমহাসচিব ক্রিশ্চিয়ান লেফলার ইইউর পক্ষে নেতৃত্ব দেন।
ইউরোপ থেকে ৮০ হাজার বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে কি না জানতে চাইলে ক্রিশ্চিয়ান লেফলার বলেন, ‘গণমাধ্যম এ সংখ্যা কোথা থেকে পেল, তা আমি জানি না। তারা যে সংখ্যাটি আমার কাছ থেকে পায়নি, সেটি নিশ্চিত করে বলতে পারি। ইউরোপজুড়ে লোকজন নিয়মিতভাবেই এ অবস্থায় পড়ছে। কারণ কেউ অবৈধ পথে গেছে, কেউ এক দেশে গিয়ে অন্য কোথাও অবৈধ হয়ে পড়েছে। এ বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের কথা হয়েছে। বাংলাদেশের লোকজন যাতে নিরাপদে ফিরে এসে সামাজিক প্রক্রিয়ায় কার্যকরভাবে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে, সে জন্য আমরা একসঙ্গে কাজ করতে রাজি হয়েছি।’
সংখ্যাটা কত জানতে চাইলে লেফলার বলেন, ‘সংখ্যার ব্যাপারে আমি কিছু বলব না। অবৈধ লোকজনের ব্যাপারে আমরা নির্দিষ্ট কোনো সংখ্যা বলতে পারি না। তবে সংখ্যাটা এখানে গুরুত্বপূর্ণ নয়। গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, এ সমস্যা সমাধানের জন্য বাংলাদেশ ও ইইউকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। একটি কার্যকর, স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে আমরা একমত হয়েছি।’
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ইইউ ৮০ হাজার বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে। ইইউর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দুই বছর আগের হিসাব অনুযায়ী, ইইউর দেশগুলোতে প্রায় ৭০ হাজার অবৈধ বাংলাদেশি অবস্থান করছিলেন। আবার গত নয় মাসে নতুন করে ১০ থেকে ১২ হাজার বাংলাদেশির অবৈধ হয়ে পড়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এঁদের মধ্যে আগে অবৈধ হয়ে থাকা লোকজনের একটি অংশ হয় বৈধ হয়েছেন কিংবা অন্য গন্তব্যে চলে গেছেন। কাজেই সুনির্দিষ্ট কোনো সংখ্যা এখনো তাদের হাতে নেই। যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ইতালি, গ্রিসসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক অবৈধ বাংলাদেশি রয়েছেন বলে মনে করা হয়।
পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা জানি ইউরোপের বিভিন্ন অংশে বাংলাদেশের লোকজন অবৈধ হয়ে পড়েছেন। কীভাবে তাঁদের নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে আনা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে অভিবাসন নিয়ে একটি বৃহত্তর আলোচনার কাঠামো তৈরি নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা করেছি।’
এক প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্রসচিব জানান, ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশ থেকে বাংলাদেশের লোকজনকে দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার পর তাঁদের পুনর্বাসনের ব্যাপারে আর্থিক সহযোগিতা দিতে ক্রিশ্চিয়ান লেফলারের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধিদল রাজি হয়েছে।
এদিকে ‘রিঅ্যাডমিশন অ্যাগ্রিমেন্ট’ নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে ক্রিশ্চিয়ান লেফলার বলেন, অভিবাসন সমস্যা মোকাবিলার সবচেয়ে ভালো উপায়গুলো নিয়ে কথা হয়েছে।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ইইউ প্রতিনিধিদলটি আলোচ্যসূচিতে অবৈধ বাংলাদেশিদের দেশে ফেরত আনার জন্য রিঅ্যাডমিশন অ্যাগ্রিমেন্টের ওপর গুরুত্ব দিতে চেয়েছিল। তবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এ সময় স্পষ্ট করেই বলা হয়েছে, বিভিন্ন দেশ থেকে অবৈধ হয়ে পড়া লোকজনকে ফেরত আনার ব্যাপারে সরকারের নির্ধারিত নীতি অনুসরণ করা হবে ইইউ দেশগুলোর ক্ষেত্রে। অর্থাৎ, অবৈধ লোকজনের বাংলাদেশের নাগরিকত্ব নিশ্চিত হলেই দেশে ফেরত আনা হবে। এ সময় ইইউ প্রতিনিধিদলের পক্ষ থেকে বলা হয়, বাংলাদেশ তো বিভিন্ন দেশ থেকে অবৈধ নাগরিকদের ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করেছে। এ প্রক্রিয়া ইউরোপের সব দেশের সঙ্গে অনুসরণ করলে ভালো হয়। তখন বাংলাদেশ ইইউভুক্ত দেশগুলো থেকে অবৈধ নাগরিক ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে রাজি হয়। এ সময় বাংলাদেশ গত বছর বঙ্গোপসাগরে মানব পাচারে এ অঞ্চলের দেশগুলো নিয়ে সহযোগিতার প্রসঙ্গ তোলে।
প্রসঙ্গত, ইইউ তার সদস্যভুক্ত দেশগুলোতে অবৈধ হয়ে পড়া লোকজনকে ফেরত পাঠাতে ওই অঞ্চলের বাইরের দেশগুলোর সঙ্গে রিঅ্যাডমিশন অ্যাগ্রিমেন্ট সই করছে। এই চুক্তি সই করলে কোনো রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই কোনো দেশকে তার নাগরিকদের ফিরিয়ে নেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকে। ইইউ এ পর্যন্ত পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কাসহ ১৭টি দেশের সঙ্গে চুক্তিটি সই করেছে।