নতুন বইয়ের সৌরভ বাড়ালেন স্পিকার

SHARE

1373শীতের সকালে মিঠে মিঠে রোদের উষ্ণতা মেখে স্কুলের মাঠে ভিড় করছিল হাজারো শিক্ষার্থী। অভিভাবকসহ এলাকাবাসীর পদচারণায় স্কুল ভবনের সুপরিসর মাঠের সামিয়ানাও ছাড়িয়ে যায়। শিক্ষকরা সানন্দে অপেক্ষা করছেন প্রধান অতিথির জন্য।  জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর আগমনে সেই অপেক্ষার পালা শেষ হতেই উপস্থিত শিক্ষার্থীরা গেয়ে ওঠে, “তোমারই আগমন, স্বাগতম, স্বাগতম”।

শুধু তাই নয়, রীতি অনুযায়ী প্রধান অতিথিকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেয়া হয়। এরপর স্পিকারকে দিয়ে শুরু হয় রাজধানীর অদূরে গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলার আফাজউদ্দিন মেমোরিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন এবং বই বিতরণ উৎসব- ২০১৬।

এক বছর আগে ব্যবসায়ী মো. জলিল উদ্দিন স্থাপন করেন এই প্রতিষ্ঠান। উন্নত দেশের আদলে গড়া স্কুল ভবনটির নান্দনিক দৃশ্য চোখে পড়ার মতো। একবছর আগে প্রতিষ্ঠা করা হলেও স্কুলের শিক্ষার্থীর সংখ্যা আট শতাধিক। আর এরই মধ্যে পিএসসি এবং জিএসসিতে ভালো ফলও করছে শিক্ষার্থীরা।

দেশের অন্যান্য স্কুলের মত গতকাল শনিবারও প্রতিষ্ঠানটিতে ছিল বই উৎসব। কিন্তু সেই বই উৎসবে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পিকার ও কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশন (সিপিএ) নির্বাহী কমিটির চেয়ারপারসনকে পেয়ে সবাই গর্বিত। কারণ তিনি নিম্ন ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় দেশের সেরা শিক্ষার্থী ছিলেন।

সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষে বই বিতরণ শুরু হলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য বেড়ে যায়। নিয়ম মাফিক স্পিকার কয়েকজন শিক্ষার্থীর মধ্যে বই বিতরণ করেন। নতুন বইয়ের গন্ধে ভরে যায় মাঠ। অনেকে মাঠে বসেই গভীর আগ্রহে বইয়ের পাতা উল্টাতে থাকেন।

অষ্টম শ্রেণির ছাত্র কবির আহমেদ জানান, নতুন বইয়ের গন্ধ সবারই ভালো লাগে। কিন্তু আজ স্পিকার আমাদের মধ্যে হাজির হয়ে সেই সৌরভ চারদিকে ছড়িয়ে দিয়েছেন।

চর্তুথ শ্রেণির ছাত্রী রুবিনা আখতার জানায়, নতুন বই পেলে সারারাত বুকের মধ্যে বই নিয়ে ঘুমিয়ে থাকে সে। আজকে স্পিকার আসায় তারা আরো বেশি আনন্দিত।

স্কুলটিতে আবাসিক ও অনাবাসিক দুই ধরনের ব্যবস্থায় রয়েছে বলে জানান কলেজের অধ্যক্ষ মো. দেলোয়ার হোসেন। তিনি  আরো জানান, তাদের উদ্দেশ্য আগামী এক দশকে স্কুলটিকে দেশের সেরা প্রতিষ্ঠানে রূপ দেয়ার। এজন্য কলেজের প্রতিষ্ঠাতা, শিক্ষক-শিক্ষিকা, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন।

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষার্থীর অভিবাবক জানান, প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষা নেয়া ব্যয় বহুল। এই কারণে অনেকের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ভর্তি হতে পারবেন না। বিষয়টির প্রতি কর্তৃপক্ষের নজর রাখারও অনুরোধ জানান তারা।

এর আগে বই উৎসব অনুষ্ঠানে শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, আমাদের ছেলে-মেয়েরা অত্যন্ত মেধাবী ও প্রতিভাবান। সুনির্দিষ্ট  লক্ষ্য নিয়ে তাদের মাঝে শিক্ষাদান করা গেলে তারা অবশ্যই সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবে।

ছাত্র-ছাত্রীরাই দেশের ভবিষ্যৎ উল্লেখ করে স্পিকার বলেন, তাদেরকে সুনাগরিক ও সুশিক্ষিত করে গড়ে তুলতে সরকারের পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানদেরও এগিয়ে আসতে হবে।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে টিকে থাকতে হলে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে নিজেদেরকে দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। শুধু শিক্ষা ক্ষেত্রে নয়, সমাজ গঠনের সকল ক্ষেত্রেই নিজেদেরকে নিয়োজিত করার আহ্বান জানান স্পিকার।

এছাড়া আফাজউদ্দিন মেমোরিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান আলহাজ মো. জলিল উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে কালিয়াকৈর পৌরসভার মেয়র মো. মুজিবুর রহমান বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন। কলেজের অধ্যক্ষ মো. দেলোয়ার হোসেন অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন।