ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঢাকা-বরিশাল নৌরুটে তৃতীয় শ্রেণীর যাত্রীদের ১০ শতাংশ ভাড়া কম নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে লঞ্চ মালিক সমিতি। এছাড়া আগামী ২৬ জুলাই থেকে লঞ্চে ঈদ স্পেশাল সার্ভিস চালু এবং ১৬টি নতুন লঞ্চ নামানো হবে বলে জানান লঞ্চ মালিক কর্তৃপক্ষ।
রাজধানীর মতিঝিলে বিআইডব্লিউটিএ ঈদ উপলক্ষে সুষ্ঠু ও নিরাপদ নৌ পরিবহণ ব্যবস্থা বিষয়ক এক সভা হয়। ওই সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান ড. শামছুদ্দোহা খন্দকার বলেন, “ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঢাকা-বরিশাল নৌরুটে তৃতীয় শ্রেণীর যাত্রীদের ১০ শতাংশ ভাড়া কম নেয়া হবে। ফলে ঢাকা-বরিশাল রুটের যাত্রীরা ২৫ টাকা কমে ২৩০ টাকা ভাড়ায় চলাচল করতে পারবেন। আগামী ২৫ জুলাই থেকে এ ভাড়া কার্যকর হবে।”
এছাড়া নতুন ১৬টি লঞ্চ নামানো হবে। ফলে ১০ হাজারেরও অধিক অতিরিক্ত যাত্রী বহন করা যাবে। আগামী ২৬ জুলাই থেকে স্পেশাল লঞ্চ সার্ভিস চালু হয়ে ৫ আগস্ট পর্যন্ত চলবে বলেও জানান বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান।
ড. শামছুদ্দোহা খন্দকার বলেন, “এবার সদরঘাট নৌরুট দিয়ে প্রায় তিন কোটি মানুষ যাতায়াত করবেন। মাওয়া-বরিশাল, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ও কিশোরগঞ্জে একটি করে চারটি উদ্ধারকারী জাহাজ রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে ঈদ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
সারাবছর রাজধানী থেকে দক্ষিণাঞ্চলগামী লঞ্চগুলোতে ডেকে ২০০, সিঙ্গেল কেবিন ৮৫০ এবং ডাবল কেবিন এক হাজার ৬০০ টাকা হারে ভাড়া নেয়া হয়। ভিআইপি কেবিনের ভাড়া নেয়া হয় প্রকারভেদে তিন থেকে চার হাজার টাকা। কিন্তু সরকারের সর্বশেষ নির্ধারিত লঞ্চভাড়া অনুযায়ী ডেকের ভাড়া ২৫৫, সিঙ্গেল কেবিন এক হাজার ৩২ এবং ডাবল কেবিন এক হাজার ৬৪০ টাকা। সরকার নির্ধারিত ভাড়ার ক্ষেত্রে ভিআইপি কেবিনের ভাড়া নির্ধারণ করা নেই।
সারাবছর লঞ্চ মালিকরা কম হারে ভাড়া নিয়ে লাভ করলেও ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আজহা এলেই তারা সরকার নির্ধারিত ভাড়ার অজুহাত দেখিয়ে বাড়িমুখী ও কর্মস্থলমুখী যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে থাকেন। ঈদ পূর্ব এবং পরবর্তী ২০ দিন চলে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়।
লঞ্চ মালিক সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি গোলাম কিবরিয়া টিপু সাংবাদিকদের জানান, সরকার নির্ধারিত রেটের মধ্যে থেকেই এবারের ঈদে ডেক ২২৫, সিঙ্গেল (সাধারণ) ১০০০, সিঙ্গেল (এসি) ১১০০ এবং ডাবল (সাধারণ) ২০০০, ডাবল (এসি) ২২০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে ঈদ উপলক্ষে ৪ হাজার টাকার ভিআইপি কেবিনের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা।
২৬ ও ২৭ জুলাই ঢাকা থেকে নয়টি করে লঞ্চ বরিশালে রওনা হবে। ২৮ জুলাই থেকে লঞ্চের রোটেশন শিডিউল স্থগিত করে মালিকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। তখন মালিকরা ইচ্ছে করলে নির্ধারিত নয়টির বেশি লঞ্চ যে কোন রুটে চালাতে পারবেন।
সভায় নদীর মাঝপথে নৌকা দিয়ে যাত্রীরা যাতে লঞ্চে উঠতে না পারে এবং পথিমধ্যে ছিনতাই, রাহাজানি নিয়ন্ত্রণে নৌপুলিশ ইউনিটসহ জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সদরঘাটগামী যাত্রীদের চলাচলের সুবিধার্থে ডিএমপি পুলিশকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
নৌবন্দরে অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন, নৌপথে মাছ ধরার জাল অপসারণ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদরঘাট পর্যন্ত একমুখী যাতায়াত, টিকিট কালোবাজারে বিক্রি রোধ, নৌবন্দরগুলোতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ, উদ্ধারকারী জাহাজ রুস্তম, হামজা, নির্ভিক ও প্রত্যয়কে সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রাখা, বিভিন্ন নৌবন্দর হকার ও ক্যানভাসার মুক্ত রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এছাড়া ঢাকা-বরিশাল রুটে আগামী ২৬ জুলাই ৫টি নিয়মিত লঞ্চের পাশাপাশি চারটি স্পেশাল সার্ভিস, ২৭ জুলাই নিয়মিত চারটি ও স্পেশাল চারটি, ২৮ জুলাই চারটি নিয়মিত ও পাঁচটি স্পেশাল লঞ্চ চলাচল করবে।
সভায় উপস্থিত ছিলেন অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল সংস্থার চেয়ারম্যান মাহবুব উদ্দিন আহমদ, নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী আশিকুল আলমসহ বিআইডব্লিউটিএ, বিআইডব্লিউটিসি, পুলিশ, র্যাব, কোস্টগার্ড, লঞ্চ মালিক সমিতির নেতারা।