কাকের কৃতিত্ব প্রমাণ করে ছাড়লেন বিজ্ঞানীরা

SHARE

crow_birdনিউজিল্যান্ড ও ব্রিটেনের মনোবিদরা বিশেষ একটি প্রজাতির কাকেদের নিয়ে পরীক্ষা চালিয়ে হাতেনাতে তাদের বুদ্ধিমত্তার স্পষ্ট প্রমাণ পেয়েছেন৷ ঈশপের গল্পের কাকের মতো এই কাকেরাও পাথর ফেলে জলের নাগাল পেয়েছে৷

ছোটবেলায় ঈশপের গল্প পড়েন বা শোনেননি, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন৷ ঈশপের নাম না জানলেও অন্তত সেই গল্প আবার শুনলে চিনতে পারার সম্ভাবনাই বেশি৷ যাই হোক, তাতে এক বুদ্ধিমান কাকের গল্প রয়েছে৷ তৃষ্ণার্ত সেই কাক একটি কলসি দেখতে পেয়েছিল৷ কিন্তু তাতে জলের স্তর এত নীচে, যে মাথা গলিয়ে তার নাগাল পাওয়া অসম্ভব৷ তখন সে চারিদিক থেকে পাথর কুড়িয়ে এনে কলসিতে ফেলতে থাকে৷ এক সময় কলসির তলার জলের স্তর ওপরে ওঠে এলো৷ ব্যস, আর তাকে পায় কে! সে তখন সহজেই তৃষ্ণা মেটাতে পারলো৷

এই পদক্ষেপের পেছনে যে বৈজ্ঞানিক সূত্র লুকিয়ে রয়েছে, তা আবিষ্কারের কৃতিত্ব যায় আর্কিমিডিসের কাছে৷ বেচারা কাক! তাকে আর কে পাত্তা দেয়!

কিন্তু দেরিতে হলেও এবার বৈজ্ঞানিকরাই কাকের কৃতিত্ব প্রমাণ করে ছাড়লেন৷ কাকেদের কয়েকটি প্রজাতি যে খুবই বুদ্ধিমান, হাতেনাতে তার প্রমাণ পাওয়া গেছে৷ নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈজ্ঞানিকরা ঈশপের গল্পের ভিত্তিতে একটি পরীক্ষা চালিয়ে তা জানতে পেরেছেন৷ তবে কিছু পূর্ব প্রস্তুতির পরেই তা সম্ভব হয়েছে৷ তাঁদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন ব্রিটেনের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিদরা৷

তাঁরা ‘নিউ ক্যালিডোনিয়ান ক্রো’ প্রজাতির ছয়টি কাককে পরীক্ষার জন্য বেছে নিয়েছিলেন৷ তবে প্রথমেই সামান্য জলভরা কলসির সামনে তাদের হাজির করা হয়নি৷ তার আগে তাদের ঠোঁটে করে পাথর তুলে একটি টিউবে ফেলার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়৷ প্রশিক্ষণের পর তাদের সামনে কয়েকটি টিউব রাখা হয়৷ তার কয়েকটির মধ্যে জল, বাকিগুলির মধ্যে বালু ছিল৷ দেখা গেল, কাকেরা বেছে বেছে জলভরা টিউবেই পাথর ফেলছে৷ শুধু তাই নয়, ফেলার আগে ভেবে-চিন্তে তারা সঠিক বস্তু বেছে নিচ্ছে৷ যেমন যে বস্তু ডুবে যায়, সেটাই তারা কাজে লাগাচ্ছে৷ যে বস্তু জলে ভাসে তা উপেক্ষা করছে৷ ফাঁপা নয়, শক্ত বস্তুই তারা তুলে নিচ্ছে৷ যে টিউবে জলের স্তর কম, তা এড়িয়ে গিয়ে উঁচু স্তরের জলের প্রতি তাদের আগ্রহ বেশি৷

কাকেদের বিশ্লেষণের এই বিস্ময়কর ক্ষমতা সত্যি অবাক করার মতো৷ তবে তাদের বুদ্ধিমত্তার সীমাও রয়েছে৷ বিশেষ করে দুটি পরীক্ষায় তারা পাশ করতে পারেনি৷ একই জলের স্তরের দুটি টিউবের মধ্যে একটি ছিল সরু, আরেকটি মোটা৷ অন্য একটি জটিল পরীক্ষায় তিনটি টিউবে একই পরিমাণ জল ছিল৷ শুধু মাঝেরটি এত সরু ছিল যে, তাতে পাথর ফেলা সম্ভব নয়৷

অনেকেই লক্ষ্য করছেন, শহরের ভিড় থেকে কাক-শালিক যেন হারিয়ে যাচ্ছে৷ তাতে কিছু মানুষ খুশি হলেও বাকিরা বেশ দুঃখিত৷ ধৈর্য ধরে কাকের কেরামতি যে দেখেছে, সে জানে ব্যাপারটা কতটা মজার৷-ডিডব্লিউ