রেলের টিকিট বিক্রি শুরু: লাইনে নির্ঘুম রাত

SHARE

train ticketঈদুল ফিতর উপলক্ষে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৯ টা থেকে। তাই শুরু থেকেই ছিল দেশের পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলের ট্রেনের অগ্রীম টিকিট সংগ্রহে ঘরমুখো মানুষের ভিড়।

তবে প্রথম দিন ২০টি কাউন্টারেই ছিল ধীর গতি। ফলে ট্রেনের টিকিট কিনতে এসে সেই চিরাচরিত ভোগান্তিই পোহাতে হলো টিকিট প্রত্যাশীদের। ভিড়ের ঠেলা-ঠেলি আর ভ্যাপসা গরমে অল্প সময়েই অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন টিকিট সংগ্রহে আসা যাত্রীরা। প্রতি কাউন্টারের লাইন স্টেশনের বাইরে গিয়ে ঠেকেছে।

আবার অনেক রোজাদার সেহেরি খেয়েই কমলাপুর রেলস্টেশনে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। পত্রিকা বিছিয়ে, লাইনে বসেই সময় কাটিয়েছেন সবাই। টিকিটের জন্য কমলাপুর রেলস্টেশনে বসে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন অনেকে। তবে এসব ভোগান্তি শেষে টিকিট পাওয়ার পর অবর্ননীয় হাসির ঝিলিক দেখা গেছে যাত্রীদের মুখে।

বৃহস্পতিবার সকাল ৯ টায় রাজধানীর অন্যতম রেলস্টেশন কমলাপুরে গিয়ে এমন সব চিত্রই দেখা যায়।

প্রতি ঈদেই ট্রেনের আগাম টিকিট কিনতে সবচেয়ে বেশি ভিড় দেখা যায় ১০ থেকে ১৭ নং কাউন্টারে। টিকিট বিক্রির প্রথম দিন বৃহস্পতিবারও এর ব্যতিক্রম দেখা গেলো না। সকাল ৯ টা থেকে দেশের পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের ট্রেনের টিকিট বিক্রি শুরু হয়, চলবে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। তবে বেশীর ভাগ কাউন্টারে টিকিট বিক্রি হচ্ছে খুবই ধীর গতিতে।

সকাল ১০টায় রেলপথমন্ত্রী মুজিবুল হক কমলাপুর রেলস্টেশন পরিদর্শন করেছেন। এ সময় তিনি আগাম টিকিট সংগ্রহে আসা যাত্রীদের সঙ্গে কথাও বলেছেন। যাত্রীদের কোনো ভোগান্তি হচ্ছে কি-না সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের দেখভাল করার জন্য নির্দেশ দেন। এছাড়া টিকিট কালোবাজারে চলে গেছে কিনা সে ব্যাপারেও খোঁজ খবর নেন মন্ত্রী।

পবিত্র ঈদ উল ফিতর উপলক্ষে ঘরমুখী যাত্রীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে বৃহস্পতিবার থেকে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় ঢাকা ও চট্টগ্রাম রেলস্টেশন থেকে প্রতিদিন ছাড়া হবে ৪৮ হাজার টিকিট। এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ ৪টি টিকিট কিনতে পারবেন। তবে বিক্রি হওয়া টিকিট ফেরত নেয়া হবে না।

এদিকে টিকিট কালোবাজারি রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে রেলওয়ে পুলিশ। এজন্য কমলাপুর রেলস্টেশনে খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। পুলিশের পাশাপাশি দায়িত্ব পালন করবে র‌্যাব। থাকবে ভ্রাম্যমাণ আদালতও।

প্রতিটি ট্রেনের ২৫ শতাংশ টিকিট সেলফোন ও অনলাইনের জন্য বরাদ্দ রাখা হবে। এছাড়া ভিআইপি কোটায় ৫ শতাংশ, রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ৫ শতাংশ ও বিশেষ কোটায় ১০-১৫ শতাংশ টিকিট রাখা হচ্ছে। এতে প্রতিটি ট্রেনের অর্ধেক টিকিটই কাউন্টারে বিক্রি করা হবে না।

রেলপথমন্ত্রী মুজিবুল হক বলেছেন, এবার তাদের প্রধান লক্ষ্য সময়মতো যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছে দেয়া। এবারও দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রুটে বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবে প্রতিদিন রেলওয়ে ১ লাখ ৮০ হাজার যাত্রী পরিবহন করে। ঈদ উপলক্ষে প্রতিদিন ২ লাখ ৫০ হাজার যাত্রী পরিবহনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, ট্রেন চলাচলে যাতে সিডিউল বিপর্যয় না ঘটে সে জন্য ১৩ জুলাই থেকে ঈদের পূর্ব দিন পর্যন্ত আন্তঃনগর ট্রেনের অফ ডে থাকবে না।

রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আজ ৯ জুলাই বিক্রি হবে ১৩ জুলাইয়ের টিকিট, ১০ জুলাই ১৪ জুলাইয়ের, ১১ জুলাই ১৫ জুলাইয়ের, ১২ জুলাই ১৬ জুলাইয়ের এবং ১৩ জুলাই ১৭ জুলাইয়ের টিকিট বিক্রি হবে। এছাড়া ঈদ পরবর্তী সময় রাজশাহী, খুলনা, রংপুর, দিনাজপুর ও লালমনিরহাট স্টেশন থেকে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় অগ্রিম টিকিট বিক্রি হবে।

১৬ জুলাই বিক্রি হবে ২০ জুলাইয়ের টিকিট, ১৭ জুলাই বিক্রি হবে ২১ জুলাইয়ের টিকিট, ১৮ জুলাই বিক্রি হবে ২২ জুলাইয়ের টিকিট, ১৯ জুলাই বিক্রি হবে ২৩ জুলাইয়ের টিকিট এবং ২০ জুলাই বিক্রি হবে ২৪ জুলাইয়ের টিকিট।

নিয়মানুযায়ী প্রতিটি ট্রেনের ৬৫ ভাগ টিকিট সাধারণ যাত্রীদের সরাসরি বিক্রির জন্য বরাদ্দ থাকবে। ভিআইপিদের জন্য ৫ ভাগ, রেল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ৫ ভাগ এবং বাকি ২৫ ভাগ ই-টিকিট ও মোবাইলে বিক্রির জন্য বরাদ্দ থাকবে। কেবল নিজে ভ্রমণের জন্য ভিআইপি কোটায় টিকিট পাবেন ভিআইপিরা। একজন সংসদ সদস্য কোটা অনুসারে দুইটির বেশি টিকিট নিতে পারবেন না।

রেলওয়ের ঢাকা বিভাগীয় ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আরিফুজ্জামান বলেন, এবারও ঈদের আগে পাঁচ দিন ও ঈদের পরের সাত দিন স্পেশাল ট্রেন সার্ভিসের মাধ্যমে সেবা দেয়া হবে। এর মধ্যে ঈদের আগে মোট সাত জোড়া স্পেশাল ট্রেন চলবে।