বাংলাদেশে ন্যায় বিচার পাওয়া কঠিন: যুক্তরাজ্য

SHARE

ukবাংলাদেশে ন্যায়বিচার পাওয়া কঠিন। আইনের প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন দুর্বল এবং আদালতে রয়েছে ব্যাপক মামলাজট। বহাল রেখেছে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের বিধান।

বুধবার যুক্তরাজ্য সরকারের ফরেন এবং কমনওয়েলথ কার্যালয় ‘বিদেশে বিনিয়োগে ঝুঁকি- বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এমন পর্যবেক্ষণ দিয়েছে।

এতে বলা হয়, বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, বিচারবর্হিভূত হত্যাকা-, শারীরিক নির্যাতন এবং দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।

মূলত যুক্তরাজ্যের যে সব ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী এবং বিনিয়োগ করেছেন তাদের জন্য পরামর্শ দিয়ে দেশটি এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

প্রতিবেদনে বাংলাদেশের রাজনীতি ও অর্থনীতি, মানবাধিকার, ঘুষ ও দুর্নীতি, সন্ত্রাসবাদের ঝুঁকি, নিরাপত্তা সম্পর্কে তথ্য দেয়া হয়েছে।

রাজনীতি ও অর্থনীতি

বাংলাদেশ সংসদীয় গণতন্ত্র এবং মুক্ত বাজার অর্থনীতির দেশ। দুইটি প্রধান রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে প্রভাবশালী। দল দুইটির মধ্যে অভ্যন্তরীণ সম্পর্ক দুর্বল।

জাতীয় সংসদ এবং স্থানীয় সরকারসহ বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থা দুর্বল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমান সরকারের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। বিএনপি বর্জন করলে অর্ধেকের বেশি আসনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভের মাধ্যমে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে তার দল নিরঙ্কুশ জয় নিয়ে ক্ষমতায় ফিরে আসে।

বিরোধী দলগুলো নির্দলীয়, নিরপেক্ষ ও অন্তরবর্তী সরকারের অধীনে নির্বাচন চেয়েছিল। কিন্তু এর আগে ২০১১ সালের জুনে বিতর্কিতভাবে সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে নির্বাচনের সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রথা বাতিল করা হয়।

বিএনপি ওই নির্বাচনে বয়কট করায় বর্তমানে জাতীয় পার্টি দাপ্তরিকভাবে বিরোধী দলের ভূমিকায় রয়েছে। তবে একই সঙ্গে দলটি সরকারি জোটে অংশগ্রহণ এবং মন্ত্রিত্ব নিয়ে এক নজিরবিহীন অবস্থানে রয়েছে।

সর্বশেষ চলতি বছরের এপ্রিলে ঢাকা এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ তুলে বিএনপির ওই নির্বাচনের মাঝপথে সরে গেলে নতুন করে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় গুরুত্ব দেয়ার সুযোগ হাতছাড়া হয়।

বাংলাদেশের অর্থনীতি সম্পর্কে এতে বলা হয়েছে, অর্থনীতির উন্নয়নে বাংলাদেশ দরিদ্রতার হার ২০০৫ সালে ৪০ ভাগ থেকে ২০১৪ সালে ৩০ ভাগের নীচে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ দরিদ্রতাকে বিদায় করতে চায় এবং মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হতে চায়। বৈদেশিক লেনদেনে উদ্বৃত্ত রয়েছে এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সন্তোষজনক।

চলতি বছরের প্রথম ৩ মাসের রাজনৈতিক অস্থিরতা সত্ত্বেও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি শক্তিশালী রয়েছে। চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে ৬ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। গত ১৫ বছরে বাংলাদেশের গড় প্রবৃদ্ধি হচ্ছে ৫ থেকে ৬ শতাংশ।

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক বিশ্বের প্রতিযোগিতামূলক বাজারে স্থান করে নিয়েছে। দেশটির রফতানিযোগ্য পণ্যের ৮০ শতাংশই আসে তৈরি পোশাক থেকে। আর দেশটির বার্ষিক গড় প্রবৃদ্ধির ১২ শতাংশই এই খাতের।

মানবাধিকার পরিস্থিতি

নাগরিক এবং রাজনৈতিক অধিকার সংক্রান্ত আর্ন্তজাতিক আইন (আইসিসিপিআর), অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক অধিকার সংক্রান্ত আইন (আইসিইএসসিআর), শিশু অধিকারসহ (সিআরসি) বাংলাদেশ মৌলিক আন্তর্জাতিক আইনগুলোর সংস্কার করেছে। কিন্তু বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সঠিক আইনের প্রয়োগ এবং চর্চা দুর্বল।

সংবিধানে কর্মের স্বাধীনতা, জীবনের নিরাপত্তা, আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং নারীদেরও সমান সুযোগ পাওয়ার মতো মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। কিন্তু আইনি বিধিনিষেধের মাধ্যমে শর্তসাপেক্ষে সভাসমাবেশের অনুমতি দেয়া হচ্ছে। কর্মস্থলে ট্রেড ইউনিয়ন থাকলেও বিধিনিষেধ আরোপ এবং হয়রানির ঘটনা ঘটছে।

বাংলাদেশে ন্যায়বিচার পাওয়া দুরূহ। আইনের প্রয়োগ এবং বাস্তবায়ন দুর্বল। বিচারিক আদালতে অনেক বছর আগের প্রচুর মামলার জট আছে। মৃত্যুদ- কার্যকরের বিধান বহাল রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যহার, বিচার বর্হিভূত হত্যাকা-, শারীরিক নির্যাতন এবং দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।

ঘুষ এবং দুর্নীতি

বাংলাদেশে ঘুষ এবং দুর্নীতির সর্বত্র গেঁড়ে বসেছে। মিডিয়া, সুশীল সমাজ এবং দাতাদের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও ঘুষ এবং দুর্নীতি প্রাত্যহিক জীবনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে পড়েছে। এর কারণে সরকার-বেসরকারি অনেক উন্নয়নমূলক কর্মকা-েরই কাক্সিক্ষত ফল আসে না। রাজনীতিক, আমলা এবং আইনশৃঙ্খলায় নিয়োজিত সদস্যসরা প্রায়ই তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার এবং দুর্নীতি করেন।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) দুর্নীতির তালিকায় ২০১৪ সালে বিশ্বের ১৭৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৪৫। যা ২০১৩ সালে ১৩৬, ২০১২ সালে ১৪৪ এবং ২০১১ সালে ১২০ এ অবস্থান ছিল।

বিশ্ব ব্যাংকের ২০১৫ সালের জরিপ করা ব্যবসাবান্ধব পরিবেশের তালিকায় বিশ্বের ১৮৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৭৩ নম্বরে যা আগের বছর ছিল ১৩০ নম্বরে।

সন্ত্রাসবাদের হুমকি

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে কিছুটা সন্ত্রাসবাদের হুমকি রয়েছে যদিও ২০০৫ সালের পর থেকে তেমন বড় ধরনে কোনো সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেনি। কয়েকটি ছোট ও বিচ্ছিন্ন সন্ত্রাসী গ্রুপের উপস্থিতি রয়েছে।

প্রবাসী এবং বিদেশিদের আনাগোনা আছে এমন জায়গায় নির্বিচারের হামলা হতে পারে। এজন্য সতর্ক থাকার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।