নজিরবিহীন লড়াইয়ে গ্রিস

SHARE

greec voteপাঁচ মাস আগে সাধারণ নির্বাচনে গ্রিসের মানুষ রায় দিয়েছিলেন কৃচ্ছ্রসাধনের সরকারি নীতির বিরুদ্ধে। ঋণ সংকটে জর্জরিত গ্রিসকে অর্থ জোগান (ধার) দিয়েছিল আইএমএফ, ইউরোপিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংক এবং জার্মানি, ফ্রান্স সহ ইউরো জোনের বিভিন্ন ব্যাংক। ঋণ দেবার প্রধান শর্ত ছিল গ্রিসকে সরকারি ব্যয় কমাতে হবে। অর্থাৎ সামাজিক নিরাপত্তা ও সামাজিক প্রকল্পে সরকারি ব্যয় বন্ধ করতে হবে। পেনশন কমাতে হবে অথবা বন্ধ করতে হবে। কর বাড়িয়ে সরকারি আয় বাড়াতে হবে ইত্যাদি।

২০১০ সালের পর থেকে ঋণদাতাদের এইসব শর্ত নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেছে গ্রিসের উদারনীতির সমর্থক দক্ষিণপন্থী সরকার। গ্রিসকে ঋণ সংকট থেকে বের করে স্থিতিশীল অর্থনীতিতে উন্নীত করতেই নাকি উপরোক্ত শর্তগুলি অনুসরণ জরুরি ছিল। চার বছরের বেশি সময় ধরে গ্রিস ঋণদাতাদের শর্ত মেনে জনগণের ওপর কার্যত জোর করে চাপিয়ে দিয়েছিল কৃচ্ছ্রসাধনের বোঝা। কিন্তু তাতে গ্রিসের অর্থনীতির কণামাত্র অগ্রগতি হয়নি বরং আরও নড়বড়ে ও ভঙ্গুর হয়েছে। সর্বোপরি তা গ্রিসের সাধারণ মানুষের জীবনে বিপর্যয় অনিবার্য করে তুলেছে। জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। বেকারত্ব বাড়তে বাড়তে ২৫ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। মানুষের আয় কমেছে অসহনীয়ভাবে। গোটা গ্রিক সমাজকে ডুবিয়ে দিয়েছে হতাশার অন্ধকারে।

এমন এক দুঃসহ জীবন যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে অনেক আশা নিয়ে গত জানুয়ারি মাসে রুখে দাঁড়িয়েছিল গ্রিক জনগণ। ঋণদাতাদের শর্তে কৃচ্ছ্রসাধন চাপিয়েছিল যে সরকার তাদের বিরুদ্ধে রায় দিয়ে ক্ষমতায় এনেছিল বামপন্থার অনুগামী সাইরিজা সরকারকে। পাঁচ মাস পর যখন সেই কৃচ্ছ্রসাধন প্রকল্প আরও জোরালোভাবে চাপানোর চাপ আসে তখন গণভোটে তার বিরুদ্ধে রায় দিয়ে গ্রিসের মানুষ প্রমাণ করেছেন তারা তাদের অবস্থানে অবিচল আছেন। এটাও বুঝিয়ে দিয়েছেন, যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে সাইরিজা ক্ষমতায় এসেছে তার যেন এতটুকুও নড়চড় না হয়। অর্থাৎ ঋণদাতাদের চাপের কাছে নতিস্বীকার করে জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা যাবে না। গণভোটের রায় এই মর্মে ঋণদাতাদেরও সতর্ক করে দিয়েছে।

সংকট মুক্তির আশায় ভয়ঙ্কর শর্তে গ্রিস আগে যে ঋণ নিয়েছিল তার কিস্তি এতকাল সুদসহ ফেরত দিলেও আইএমএফ-কে দেয় ৩০ জুনের কিস্তি শোধ দিতে পারেনি। ফলে ঋণখেলাপি বা দেউলিয়া তালিকায় নাম উঠে গেছে গ্রিসের। জুলাই মাসেও তাদের বিরাট পরিমাণ ঋণ শোধ করতে হবে। এইভাবে পর পর তাদের ঋণ শোধ করে যেতে হবে। প্রকৃত অর্থে ঋণের যা পরিমাণ এবং সুদে আসলে যতটা ফেরত দিতে হচ্ছে তা গ্রিসের মোট জাতীয় আয়ের থেকে প্রায় দ্বিগুণের কাছাকাছি। বাস্তব এটাই যে গ্রিসের পক্ষে দেশবাসীর স্বার্থ রক্ষা করে বিদেশি ঋণদাতাদের ঋণ শোধ করা প্রায় অসম্ভব। সম্ভব হতে পারে যদি জাতীয় আয় থেকে গ্রিসের জনগণকে বঞ্চিত করে তা দিয়ে ঋণদাতাদের সেবা করা যায়। কিন্তু গ্রিসের মানুষ তা কোনো অবস্থাতেই মেনে নেননি। তাই সাইরিজা সরকারের প্রতিষ্ঠা। এখন পুরানো ঋণ শোধ করার জন্য যদি নতুন করে ঋণ নেওয়া হয় আরও কঠোর শর্তে তাহলে গ্রিসের মানুষের যাবতীয় মৌলিক ও মানবিক অধিকার যেমন হরণ হবে তেমনি সেই ঋণ কোনোদিনই শোধ করা সম্ভব হবে না। অর্থাৎ গ্রিসের মানুষকে স্থায়ীভাবে ক্রীতদাসত্ব মেনে নিতে হবে।

এই প্রশ্নে সাইরিজা সরকার প্রাথমিক দৃঢ়তা দেখিয়েছে। এবার তাদের আসল পরীক্ষা। জনগণের রায়কে পুঁজি করে বিপুল সাহস ও শক্তি সঞ্চয় করে জোরালো দর কষাকষি তাদের চালাতে হবে। ঋণের একটা অংশ ও সুদ মওকুব করাতে হবে। ঋণ শোধের সময়সীমা বাড়াতে হবে। ঋণ পুনর্গঠন করে শর্ত শিথিল করতে হবে। সর্বোপরি মানুষের ওপর চাপানো ভয়ঙ্কর শর্ত প্রত্যাহার করতে হবে। তবে গণভোটে গ্রিসের জনগণের রায়ের প্রতি পূর্ণ মর্যাদা প্রদর্শন হবে।