ঋণদাতাদের শর্ত মেনে হাত পেতে ত্রাণ নিতে নারাজ গ্রিস। রোববারের গণভোটে সেই প্রস্তাবে ‘না’ করে নিজের চেষ্টায় ঘুরে দাঁড়ানোর শপথ নিল গ্রিস।
সরকারি সূত্রের খবর, এ দিন বিপুল সাড়া মিলেছে ভোটে। ফলে ৪০ শতাংশের কম ভোট পড়লে রায় গ্রহণযোগ্য না-হওয়ার আশঙ্কা ছিল না। আনুষ্ঠানিক ভাবে বুথ ফেরত সমীক্ষা হয়নি। তবে গ্রিসের সময় সন্ধে ৭টায় ভোট শেষ হওয়ার পরেই সে দেশের প্রধান ছ’টি টেলিভিশন চ্যানেলের সমীক্ষাতেই ত্রাণ প্রকল্প মেনে নেওয়ার বিপক্ষে গ্রিক জনগণ রায় দিচ্ছেন বলে ইঙ্গিত মিলেছিল। সংশ্লিষ্ট সূত্রে ইঙ্গিত, কম বয়স্ক থেকে শুরু করে পেনশনপ্রাপক এবং একেবারেই নিম্নবিত্তরা ‘না’ ভোটকেই বেছে নিয়েছেন। মধ্যবয়স্ক ও মধ্যবিত্তরা এবং বামপন্থী সরকারের কট্টর বিরোধীরা ত্রাণের পক্ষেই ‘হ্যাঁ’ ভোট দিয়েছেন।
জার্মান কাউন্সিল অব ফরেন রিলেশনসের জুলিয়ান রাপল্ড বলেন, ‘বেইল আউট কর্মসূচি নিয়ে ঋণদাতাদের সঙ্গে গ্রিসের ভবিষ্যৎ আলোচনার ওপর এ নির্বাচনের প্রভাব ব্যাপক।’ তিনি বলেন, গ্রিস যদি ইউরোজোন ছেড়ে যায় তবে সংকট নিরসনে ইইউর প্রচেষ্টার এক ব্যর্থতাই হবে সেটি।
আর ফ্রান্সের অর্থমন্ত্রী ইমানুয়েল ম্যাক্রোন বলেছেন, একটা সমঝোতায় পৌঁছার জন্য গ্রিস এবং আন্তর্জাতিক ঋণদাতাদের চেষ্টা চালাতেই হবে।
‘হ্যাঁ’ ভোটের অর্থ
সরকারের পক্ষে টিকে থাকা অসম্ভব হয়ে যাবে। নতুন নির্বাচন আহ্বান করা হতে পারে। অথবা জাতীয় সরকার গঠিত হতে পারে। ‘হ্যাঁ’-এর পক্ষে বিপুল সমর্থন থাকলে পুরস্কারস্বরূপ ঋণদাতারা আর্থিক সহায়তা আবার চালু করতে পারে। নতুন নির্বাচন হলে সেটির সম্ভাব্য সময় সেপ্টেম্বর মাস। সেই নির্বাচনে সিপ্রাস আবার বিজয়ী হতে পারেন। গ্রিক নাট্যের নতুন চক্রের আবার শুরু হতে পারে।
‘না’ ভোটের মানে
ঋণদাতারা তাদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হয়েছে বলেই মনে করবে। তারা বলেছে, ‘না’-এর মানে আলোচনার সব পথ শেষ। তাদের কাছ থেকে আরও আর্থিক সহায়তা পাওয়ার পথও বন্ধ হবে। এ মাসের মধ্যে ইসিবির ৩০০ কোটি ইউরোও ফেরত দিতে হবে। গ্রিসকে ইউরোজোন থেকে বের করে দেওয়া হতে পারে। অনেকের মতে, এর ফলে সামাজিক সংঘাতের সৃষ্টি হতে পারে।
সংকট যেভাবে তৈরি হলো
যে ঋণসংকট নিয়ে গ্রিসে এখন টালমাটাল অবস্থা, তার শুরু আজ থেকে পাঁচ বছর আগে। এই সময়ের মধ্যে নানা চড়াই-উতরাই প্রত্যক্ষ করেছে দেশটি। ২০০৯ সালের অক্টোবরে সরকার প্রথম স্বীকার করে প্রত্যাশার চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছে গ্রিস।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আইএমএফের কাছে পরের বছরের এপ্রিলে সাহায্যের আবেদন করে এথেন্স। ওই বছরের মে মাসে ইউরোজোনের প্রথম দেশ হিসেবে গ্রিস ইইউ ও আইএমএফের কাছ থেকে আর্থিক পুনরুদ্ধার (বেইলআউট) প্যাকেজ গ্রহণ করে। তারা এথেন্সকে ১১০ বিলিয়ন ইউরো দেয়। বিনিময়ে এথেন্স বেতন কর্তন ও কর বৃদ্ধির মতো যেসব পদক্ষেপ নেয়, তার চড়া মূল্য দিতে হয় জনগণকে।
২০১১ সালের অক্টোবরে অর্থনৈতিক অবস্থা আরও অবনতি হওয়ায় ১৩০ বিলিয়ন ইউরোর দ্বিতীয় বেইলআউট প্যাকেজ প্রস্তাব ঘোষণা করে ইউরোজোন। যেসব শর্তে ইইউ ও আইএমএফ ঋণ দিয়েছিল, তা পুনর্বিবেচনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে চলতি বছরের জানুয়ারিতে পার্লামেন্ট নির্বাচনে বড় জয় পায় আলেক্সিস সিপ্রাসের নেতৃত্বাধীন ব্যয়-সংকোচনবিরোধী সিরিজা পার্টি। এরপর ফেব্রুয়ারিতে গ্রিস ও ঋণদাতাদের মধ্যে মতৈক্য হয় যে জুন পর্যন্ত ঋণসহায়তা অব্যাহত রাখা হবে। বিনিময়ে বিভিন্ন সংস্কার পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় এথেন্স।
গত ২ জুন সংস্কার প্রশ্নে গ্রিসকে চূড়ান্ত প্রস্তাব দেয় ঋণদাতারা। প্রধানমন্ত্রী সিপ্রাস তা প্রত্যাখ্যান করেন। ২৭ জুন সিপ্রাস ঋণদাতাদের সর্বশেষ প্রস্তাবের ওপর গণভোট অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেন।