সম্প্রতি অবৈধভাবে মানবপাচার আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে বলে সংসদে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, অবৈধ মানবপাচারের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর অবস্থানে রয়েছে।
ইতোমধ্যে মানবপাচারকারীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করতে সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বুধবার সকালে জাতীয় সংসদে টেবিলে উত্থাপিত সরকারদলীয় সদস্য শরীফ আহমেদের তারকা চিহ্নিত প্রশ্ন-২৯ এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানবপাচার প্রতিরোধে প্রতি জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে কাউন্টার ট্রাফিকিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমনে ২০১২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন করা হয়েছে। আইনে মানবপাচারের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, মানবপাচার একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা এবং মানব পাচারকারীরা আন্তর্জাতিক চক্রের সঙ্গে জড়িত। এজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরো উন্নত ও অত্যাধুনিক ট্রেনিংয়ের লক্ষ্যে জাতীয় পরিকল্পনা ২০১২-১৪ প্রণীত ও বাস্তবায়িত হয়েছে। এছাড়াও মানবপাচার প্রতিরোধে জাতীয় কর্ম পরিকল্পনা ২০১৫-১৭ এর খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে যা শিগগিরই প্রকাশিত হবে।
এছাড়াও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবপাচার প্রতিরোধ সংক্রান্ত কমিটির সভা প্রতি মাসে অনুষ্ঠিত হয়। মানবপাচার, বিশেষ করে নারী ও শিশুপাচার সংক্রান্ত বিচারাধীন মামলার অগ্রগতি মনিটর করার বিষয় কমিটিতে পর্যালোচনা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে সমুদ্রপথে অবৈধভাবে মানবপাচার উদ্বেগজনক হারে বাড়ায় কোস্টগার্ডের বর্তমান সময়ের কার্যক্রম আরও বিস্তৃত হয়েছে। কোস্টগার্ডের টহল বাড়ানো হয়েছে। এ লক্ষ্যে কোস্টগার্ডের একটি পেট্রল ক্রাফট এবং একটি অত্যাধুনিক হাইস্পিড মেটাল সার্ক বোর্ড সার্বক্ষণিকভাবে চট্টগ্রাম ও গহিরা অঞ্চলে টহলে নিয়োজিত রয়েছে।
তিনি বলেন, টহল কার্যক্রম আরও বাড়াতে একটি করে হাইস্পিড মেটাল সার্ক বোট কুতুবদিয়া ও সাঙ্গু স্টেশনে মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া শাহপুরী, টেকনাফ ও সেন্টমার্টিন্স উপকূলীয় অঞ্চলে দু’টি অত্যাধুনিক হাইস্পিড মেটাল সার্ক বোট দিয়ে টহল চলেছে।
বাংলাদেশ কোস্টগার্ড সমুদ্র পথে অবৈধভাবে বিদেশ গমনকালে আজ পর্যন্ত ১ হাজার ৭৩৬ জন বিদেশগামী নাগরিককে সাগর থেকে আটক করেছে বলেও জানান শেখ হাসিনা।
সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী বিজিবির ঐকান্তিক তৎপরতায় ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৫ সালের মে পর্যন্ত ১৫০০ নাগরিককে উদ্ধার করা হয়েছে। এরমধ্যে নারী ১ হাজার ৯৪ জন, শিশু ৪০৬ জন। এতে ২০১৪ সালে নারী উদ্ধার করা হয় ৮৫২ জন, শিশু ৩১৭ জন।
এছাড়া ২০১৫ সালে নারী উদ্ধার করা হয় ২৪২ জন এবং শিশু উদ্ধার করা হয় ৪০৬ জন। এই সময়ে ২৭ জন পাচারকারীকে আটক করা হয়। একই সময় মানবপাচারকারীদের বিরুদ্ধে ৪৪৮টি মামলা করা হয়েছে।