সাতক্ষীরার সাত রাজার ধন এখন নয়া তারা

SHARE

bd teamনিজে হাতে ইটের টুকরো দিয়ে দেওয়ালে তিনটা দাগ টানা৷ সেটাই নাকি উইকেট! সাতক্ষীরার তেঁতুলিয়ার গরিব ঘরের ছেলের উইকেট কেনার পয়সা কোথায়? সেই হাতে আঁকা উইকেটই বছর নয়ের ছোট্ট রোগা প্যাংলা ছেলেটার চাঁদমারি৷

ফাইভস্টার বল হল বাংলাদেশে ভারী প্লাস্টিক বল৷ সেই ফাইভস্টার হাতে গলি ক্রিকেটে জীবন শুরু করা বছর কুড়ির মুস্তাফিজুর রহমানই এখন বাংলাদেশের নতুন তারা৷ সাতক্ষীরার সাত রাজার ধন৷

অভিষেকেই ভারতকে শুইয়ে দেওয়া মুস্তাফিজের তবু স্বপ্নপূরণ হয়নি৷ এমনিতে প্রচন্ড লাজুক৷ প্রথম ওয়ান ডে খেলে উঠে প্রেস কনফারেন্সে তার গলা প্রথম সারিতে বসেও কানে আসছিল না৷

একটা একটা করে প্রশ্ন উড়ে আসছে, আর মুস্তাফিজ গুটিয়ে যাচ্ছেন অধিনায়ক মাশরাফির আড়ালে৷ মাশরাফিকে বাধ্য হয়ে বলতে হলো, ‘আমাকে জিজ্ঞাসা করেন৷’

বল হাতে পড়লেই সেই মুস্তাফিজই আবার অন্য রকম৷ সামনে মুখে রা কাড়েন না৷ কিন্ত্ত ঘনিষ্ঠ মহলে মুস্তাফিজ লুকোননি তার স্বপ্নের কথা৷ থুড়ি না পূর্ণ হওয়া স্বপ্নের কথা!

মুস্তাফিজ জানিয়েছেন, বিরাট কোহলিকে ফেরানোই তার লক্ষ্য৷ কোহলির উইকেটটাই তার কাছে সবচেয়ে দামি৷

কেন? সে ব্যাখ্যাও তুলে ধরতে দ্বিধা করেননি৷ মুস্তাফিজুরের মতে, কোহলিই এই মুহূর্তে বিশ্বের এক নম্বর ব্যাট৷ তাই সেই উইকেটটা চাই-ই৷

এমনিতে দুটো আন্তজার্তিক ম্যাচে মুস্তাফিজের ঝুলিতে শাহিদ আফ্রিদি, রোহিত শর্মার উইকেট৷ তবে সন্ত্তষ্ট হওয়ার বান্দা তিনি নন৷ লম্বা রেসের ঘোড়া৷

মাশরাফির গলায় মুস্তাফিজকে নিয়ে অনেক আশা, ‘আমি ওকে নেটে দেখেই বুঝেছিলাম ওর কাটারগুলো খেলা একেবারে অসম্ভব৷ যেন স্পিনারদের থেকে বেশি টার্ন করাতে পারে৷ কে কী মনে করেন জানি না, আমার মুস্তাফিজের উপর বিশ্বাস ছিল৷ সে জন্য প্রথম ওভারটাই ওর হাতে তুলে দিয়েছিলাম৷’

মুস্তাফিজ পেরেছেন৷ সামনে অনেক লম্বা পথ৷ তবে তিনি পারবেন বলেই মনে করছে বাংলাদেশের ক্রিকেট মহল৷ প্লাস্টিক বল থেকে টেনিস বলে খেলতে খেলতে যে ছেলে শুরুতেই ভারত, পাকিস্তানের মতো টিমকে উড়িয়ে দিতে পারে, তিনি এখানেই থামার পাত্র নন৷

শুক্রবার দুপুরে সোনারগাঁও টিম হোটেলের বাইরে দেখা হল বাংলাদেশের ম্যানেজার খালেদ মাহমুদের সঙ্গে৷ তিনি কিন্ত্ত মুস্তাফিজুরের উঠে আসাকে বাংলাদেশ ক্রিকেটের বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে মনে করতে নারাজ৷

হাল ফ্যাশনের সানগ্লাসটা মাথার উপরে তুলতে তুলতে খালেদের সাফ কথা, ‘আমাদের দেশের ক্রিকেটে জুনিয়র ক্রিকেটারদের তুলে নিয়ে আসার একটা প্রক্রিয়া আছে৷ মুস্তাফিজুর সেই সিস্টেমেরই অংশ৷ আরও অনেক জুনিয়র ক্রিকেটার বিশ্ব ক্রিকেটে এসে চমকে দিতে পারে৷’

স্পট ফিক্সিং কাণ্ডের পরও পাকিস্তানের পেসার মুহম্মদ আমেরই আদর্শ বাংলাদেশের ‘ছোট বাঘ’-এর৷ অনুচ্চ স্বরে শোনা গেল, ‘আমি তো শুধু ওর বোলিং ফলো করি৷ আর কিছু নয়৷’

আবার ম্যাচে নিজের স্লোয়ারগুলো দেওয়া নিয়ে অদ্ভুত এক গল্প শোনালেন, ‘নেটে বিজয় ভাই (এনামুল হক) আমাকে স্লোয়ারটা দিতে বলেছিল৷ ওর ব্যাটিং প্র্যাক্টিসের জন্য৷ আমি ওকে ওই ডেলিভারিতে আউট করেছিলাম৷ তারপর থেকেই ম্যাচে ওটা চেষ্টা করি৷’

নিজের সেজো ভাইয়ের বাইকে চেপে ৪০ কিলোমিটার দূরে প্র্যাক্টিসে যেতেন মুস্তাফিজ৷ তাই বড় সাফল্যের দিনে সেজো ভাইয়ের কথাই সবচেয়ে বেশি মনে পড়ছিল৷ ভোলেননি পেস বোলিং প্রতিযোগিতা থেকে অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে ন’উইকেট নেওয়ার স্মৃতি৷

মুস্তাফিজুরের সহজ সরল অভিব্যক্তি মনে করিয়ে দেবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের পেসার  মুহম্মদ সামির প্রথম জীবনের কথা৷ সাহসপুর গ্রামে উইকেটের পিছনে খাটিয়া লম্বা করে রেখে বোলিং প্র্যাক্টিস করতেন সামি৷ আজ ভারতের অন্যতম সেরা পেসার৷

নিজে হাতে উইকেট আঁকা লিটল স্টারের জন্য এখন তেমনই স্বপ্ন দু’চোখে আঁকছেন বাংলাদেশের মানুষ৷

রূপক বসু: ভারতীয় সাংবাদিক