জাতীয় সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশনে মরহুম সংসদ সদস্য এ কে এম নাসিম ওসমানের অকাল মৃত্যুতে শোক প্রস্তাবের ওপর দীর্ঘ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। পিনপতন নিরবতায় সহকর্মী মরহুম সংসদ সদস্যের কর্মময় জীবনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে সবাই আবেগপ্রবন হয়ে পড়েন। মরহুমের অনুজ একেএম শামীম ওসমানও অশ্রুশিক্ত নয়নে আবেগময় বক্তব্য রাখেন। নারায়ণগঞ্জ ৪ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমানকে অচিরেই মন্ত্রীপরিষদেরর সদস্য করা হতে পারে। শামীম ওসমানের অগ্রজ এ কে এম নাসিম ওসমানের অকালমৃত্যুর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমবেদনার নিদর্শন স্বরূপ শামীম ওসমান মন্ত্রীত্ব পেতে পারেন বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
অশ্রুসজল সংসদনেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার অত্যন্ত স্নেহভাজন নাসিম ওসমানের মৃত্যু আমাকে এতটাই মর্মাহত করেছে যে, আমি কিছুক্ষণ বাকরুদ্ধ থাকি। ইন্ডিয়া যাওয়ার কয়েকদিন আগে আমার সঙ্গে দেখা করে গেছে। আমি নাসিম ওসমানের হাতে সেসময় একটি কোরআন শরীফ তুলে দেই। আওয়ামী লীগের সঙ্গে ওসমান পরিবারের রক্তের সম্পর্ক। ওর বাবা জোহা সাহেবকে আমি চাচা ডাকতাম। চাচি বেঁচে থাকতে নাসিম মারা গেলেন।
এ শোক ‘মা’ কি করে সহ্য করছেন আমি উপলব্ধি করি। বিয়ের পর পর নাসিম ওসমান বঙ্গবন্ধু হত্যার বদলা নিতে ভারতে পাড়ি জমিয়েছিল। আওয়ামী লীগের শক্তিকে দুর্বল করতেই কিছু হলেই ওসমান পরিবারের নামে অপপ্রচার চালানো হয়। জোহা চাচা ছিলেন বাবার অত্যন্ত ঘনিষ্ট নিবেদিত প্রাণ। প্রধানমন্ত্রী সংসদকে আশ্বস্ত করে বলেন, এ পরিবারের অবদানের মূল্য অবশ্যই দেয়া হবে। আমার সুদৃষ্টি অব্যহত থাকবে।’ প্রধানমন্ত্রীর সহানুভূতিপূর্ণ ভাষণ পর্যালোচনা করে কেও কেও বলছেন, শামীম ওসমানের আশা পূরণ দ্বারপ্রান্তে।
উল্লেখ্য, নারায়ণগঞ্জবাসীর দীর্ঘদিনের দাবী নারায়ণগঞ্জ থেকে ন্যুনতম একজনকে মন্ত্রীপরিষদেরর সদস্য করা হোক। নাসিম ওসমানের অকালমৃত্যু শামীম ওসমানের মন্ত্রী হওয়ার পথকে সুগম করেছে বলে পর্যবেক্ষকদের বিশ্বাস।
ওসমান পরিবারকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মূল্যায়ন ও বক্তব্যের অংশবিশেষ
রাজনীতি করতে এসে অপরাধ করেনি এমন কেউ নেই। কিন্তু কিছু কিছু পরিবারকে মহল বিশেষ টার্গেট করে অপপ্রচার করে। অনেকে অনেক বড় অপরাধ করলেও তা লেখা হয় না, অনেকের দোষ চোখে পড়ে না। আবার কেউ সামান্য কিছু করলেই সেটি বড় করে দেখানো হয়। তবে কেউ অন্যায় করলে তার বিচার হবে। আইন তার নিজস্ব গতিতেই চলবে। তবে কেউ যদি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে কাউকে বা কোন পরিবারকে হেয় করতে চায় এ ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়ন ও আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নারায়ণগঞ্জের ‘ওসমান’ পরিবারের অবদানের কথা স্মরণ করে এসব কথা বলেন।
৩ জুন মঙ্গলবার বিকেলে দশম জাতীয় সংসদের দ্বিতীয় অর্থাৎ বাজেট অধিবেশনের শুরুর দিন এই সংসদেরই নির্বাচিত জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য নাসিম ওসমানের মৃত্যুতে উত্থাপিত শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের পরিবারের সঙ্গে ওসমান পরিবারের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। কারণ আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠাই হয়েছিল ওসমান পরিবারে।
সেই ওসমান পরিবারের বড় ছেলে সদ্যপ্রয়াত জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য নাসিম ওসমানের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনককে সপরিবারে হত্যার একদিন আগে ১৪ আগস্ট বিয়ে করেছিল নাসিম ওসমান। সেই বিয়েতে আমার ভাই শেখ কামালসহ অনেকেই গিয়েছিল। পরদিন বঙ্গবন্ধু হত্যার খবর শুনে নবপরিণিতা স্ত্রীসহ পরিবারের কারোর দিকে তাকায়নি নাসিম। বঙ্গবন্ধুর হত্যার প্রতিশোধ নিতে সবাইকে ছেড়ে ঢাকায় প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করে এবং পরে ভারতে গিয়ে খুনিদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে সবাইকে সংঘটিত করার চেষ্টা করে।