বাংলাদেশ ও ভারতের বন্ধুত্ব এখন নতুন উচ্চতায় পেঁৗছে গেছে। ঢাকায় দ্বিপক্ষীয় ও একান্ত বৈঠক শেষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয়ে শাপলা হলে আয়োজিত যৌথ সংবাদ ব্রিফিংয়ের অনুষ্ঠানে পৃথক বক্তৃতায় ছিল অভিন্ন মেজাজ, অভিন্ন সুর। গতকাল শনিবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয়ে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন নরেন্দ্র মোদির সফরসঙ্গীরা এবং বাংলাদেশের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও উপদেষ্টারা।
নরেন্দ্র মোদি তার বক্তৃতায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দক্ষিণ এশিয়ার মহান নেতা উল্লেখ করে শ্রদ্ধাবনত চিত্তে তাকে স্মরণ করেন এবং বলেন, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা সার্থক হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতৃত্বে। শেখ হাসিনা তার বক্তৃতায় মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অকুণ্ঠ ও আন্তরিক সহায়তার কথা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন এবং স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
মোদি তার বক্তৃতায় বলেন, বাংলাদেশে প্রথম সফর আমার জন্য ‘বিশেষ মুহূর্ত’। এখন আমরা উন্নয়নের সফল সহযাত্রী। আমি ভারতের জন্য যে স্বপ্ন দেখি, বাংলাদেশের জন্যও অভিন্ন ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা করি। এদিকে শেখ হাসিনা বলেন, দু’দেশের জনগণের মধ্যে নিবিড় যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা বাংলাদেশ সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার।
দু’জনে আঞ্চলিক কানেক্টিভিটির ওপরও বিশেষ জোর দেন। বিকেল ৩টা ৪২ মিনিটে ভারতের প্রধানমন্ত্রী পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে শেখ হাসিনার তেজগাঁও কার্যালয়ে আসেন। তাদের স্বাগত জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর পর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় চত্বরে শেখ হাসিনা, মোদি ও মমতা যৌথভাবে আগরতলা-ঢাকা-কলকাতা এবং ঢাকা-শিলং-গৌহাটি বাস সার্ভিসের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। এর পর দুই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে দু’দেশের মধ্যে স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নে অনুসমর্থনের দলিল বিনিময় করেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক ও ভারতের পররাষ্ট্র সচিব এস জয়শঙ্কর।
দলিল বিনিময়ের পর তারা ৪০ মিনিটের একান্ত বৈঠকে মিলিত হন। এ বৈঠকের পর শিমুল মিলনায়তনে দুই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ বৈঠকে বাণিজ্য চুক্তি নবায়ন, নৌ চলাচল প্রটোকল, মানব পাচার ও জাল মুদ্রা পাচার প্রতিরোধ, ব্যান্ডউইথ রফতানি, বিদ্যুৎ খাত সহযোগিতা চুক্তিসহ মোট ১৯টি চুক্তি, প্রটোকল ও সমঝোতা স্মারক সই হয়। পরে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক বিনিময়ের পর প্রথমে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আলাদা আলাদা উদ্দীপনাময় বক্তব্য রাখেন।
নরেন্দ্র মোদি: ইংরেজিতে দেওয়া বক্তৃতায় নরেন্দ্র মোদি বলেন, প্রথমবার ঢাকা সফর তার জীবনের জন্য বিশেষ মুহূর্ত। এ সফরে অর্জিত অভিজ্ঞতা তার চিন্তা ও দৃষ্টিকে সমৃদ্ধ করবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০২১ ও ২০৪১ বাস্তবায়ন কর্মসূচির মাধ্যমে বাংলাদেশ উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাবে বলে আশা করেন এবং এ কর্মসূচি বাস্তবায়নে বাংলাদেশের জনগণের পাশে থাকার ঘোষণা দেন তিনি।
মোদি বলেন, স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নে সংবিধান সংশোধনে ভারতের সব রাজনৈতিক দলের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত প্রমাণ করেছে, ভারতের জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবেই বাংলাদেশের জনগণের পাশে আছে। তিনি আরও বলেন, ভারত ও বাংলাদেশ শুধুই প্রতিবেশী নয়, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, ভাষা এবং ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা একসূত্রে গাঁথা। দুই দেশের মানুষ একে অপরকে অন্তর দিয়ে আপনজন হিসেবেই জানে এবং এ কারণেই দুটি দেশ যৌথভাবে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাওয়ার ধারণায় বিশ্বাস করে। তার ভাষায়, আমাদের মধ্যে সংগ্রাম ও উৎসর্গের আবেগঘন আবেদন রয়েছে। নরেন্দ্র মোদি সার্কের উল্লেখ করে বলেন, এ সংস্থা বাংলাদেশের পক্ষ থেকে একটি উপহার।
মোদি বলেন, দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগের ক্ষেত্রে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে। একদিকে সড়ক যোগাযোগে আগরতলা-ঢাকা-কলকাতা এবং ঢাকা-শিলং-গৌহাটি বাস সার্ভিস চালু হয়েছে, অন্যদিকে উপকূলীয় ও অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচলের ব্যাপারেও সমঝোতা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে দুই দেশের যৌথ অর্থনৈতিক করিডোর চালু হলো, যৌথ উন্নয়নের যাত্রাও শুরু হলো। তিনি বলেন, যোগাযোগ খাতে এ উন্নয়ন শুধু ভারত-বাংলাদেশ নয়, এমনকি শুধু ভারতের উত্তর-পূর্ব অংশের সঙ্গে যোগাযোগের উন্নয়নই নয়, এ পদক্ষেপ দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
মোদি বলেন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের সাফল্য বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত হয়েছে। একই সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক নিরাপত্তা এবং নিরাপদ সমুদ্রসীমা গড়ে তুলতেও বাংলাদেশ একই ধরনের ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশা করেন।
মোদি বলেন, শুধু স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নই নয়, গত বছর দুই দেশের আন্তর্জাতিক সীমানা নির্ধারণের মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয়েছে, দুটি দেশ আন্তর্জাতিক রীতি ও আইন মেনে চলার ক্ষেত্রেও নিজেদের দৃঢ় অঙ্গীকার এবং ইতিবাচক সিদ্ধান্তের প্রমাণ দিয়েছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন, সমুদ্রসীমা নির্ধারণ, যৌথ যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে দুই দেশের সম্পর্কে গভীর আস্থা ও দৃঢ় বিশ্বাসের প্রতিফলন ঘটেছে। বাণিজ্য চুক্তি নবায়ন এবং বাংলাদেশের ভেড়ামারা ও মংলায় ভারতের জন্য অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা দু’দেশের বাণিজ্য সম্পর্ক উন্নয়নেও নতুন যুগের সূচনা করবে বলে তিনি আশা করেন। তিনি বলেন, এর মধ্য দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও জোরদার হবে।
মোদি বলেন, নতুন বর্ডার হাট দু’দেশের ঐতিহ্য ও স্থানীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক অবদান রাখবে। তিনি সমুদ্রভিত্তিক অর্থনীতি (ব্লু ইকোনমি) গড়ে তুলতেও সহায়তার আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, ব্লু ইকোনমি দু’দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে নতুন মাত্রা যোগ করবে।
মোদি বলেন, দু’দেশের মধ্যকার বাণিজ্য ঘাটতি সম্পর্কে তিনি সচেতন। শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত সুবিধা থাকলেও বাংলাদেশের মাত্র ২৫টি পণ্য ভারতে প্রবেশ করে। তবে তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে এ ঘাটতি দূর করতে আশ্বস্ত করেছেন।
পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণে দু’দেশের সমঝোতা স্মারক, ভারত থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রফতানির পরিমাণ ৫০০ থেকে এক হাজার ১০০ মেগাওয়াটে উন্নীত করার ঘোষণা দিয়ে মোদি বলেন, এই উন্নয়ন দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কেরই প্রতিফলন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের আইন ও নিয়মকানুন মেনেই রামপালে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে এটা নতুন মাত্রা যোগ করবে।
মোদি বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নে ভারত সব সময়ই পাশে ছিল, থাকবে। তিনি এর আগে ১০০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ-সহায়তার কথা উল্লেখ করে নতুন আরও ২০০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ-সহায়তার ঘোষণা দেন।মোদি বলেন, দু’দেশের নদীর পানিপ্রবাহ উভয় দেশের জনগণের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। এই পানির ওপর কৃষি, পরিবেশ, প্রতিবেশ এবং জীবিকা নির্ভরশীল। তিনি বলেন, এ সবকিছুই তার বিবেচনায় রয়েছে। স্থল সীমান্ত বাস্তবায়ন সমস্যার যেমন সমাধান হয়েছে, তেমনি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের সমর্থন নিয়ে তিস্তা ও ফেনী নদীর পানি নিয়ে যে সমস্যা আছে, তারও ন্যায্য সমাধান অচিরেই হবে।
শেখ হাসিনা :প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ভারত বাংলাদেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী। একই সঙ্গে দুই দেশ পরস্পরের উন্নয়ন সহযোগী। কানেক্টিভিটি শুধু এ দুই দেশেরই নয়, এ অঞ্চলের উন্নয়নের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। ঢাকা সফররত ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে বাংলাদেশ-ভারতের দ্বিপক্ষীয় সব বিষয়ে খোলামেলা ও ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
শেখ হাসিনা বাংলায় বক্তব্য রাখেন। বক্তব্যের শুরুতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদানের কথা গভীর কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করে তিনি বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আজ আমাদের মাঝে পেয়ে আমরা সত্যিই আনন্দিত ও গর্বিত। এ এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। আমরা যৌথভাবে আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে নতুন সম্ভাবনার যুগে ও অধিকতর উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘কিছুক্ষণ আগে আমরা স্থল সীমানা চুক্তি ১৯৭৪ অনুসমর্থনের পত্র বিনিময় করেছি। এর মাধ্যমে ৬৮ বছরের মানবিক সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান হওয়ায় আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী মোদির নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করছি। আমরা ভারতের জনগণ এবং ভারতের সব রাজনৈতিক দলকে এ চুক্তির প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জানানোর জন্য কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’ এ ক্ষেত্রে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ঐতিহাসিক ভূমিকা এবং ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির অবদানের কথাও স্মরণ করেন তিনি।
ভারতের প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ভারত কয়েক বছরে অর্থনৈতিকভাবে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিও সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। গত ছয় বছরে ৬ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে বাংলাদেশ। আমরা সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার প্রায় সবই অর্জন করতে পেরেছি।
নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের আলোচনা ছিল অত্যন্ত গঠনমূলক। আমরা পরস্পরের উদ্বেগ ও অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো নিয়ে অবগত রয়েছি। দ্বিপক্ষীয় সব বিষয় নিয়ে আমাদের মধ্যে খোলামেলা আলোচনা হয়েছে।
ভারতের সঙ্গে সম্পন্ন হওয়া বিভিন্ন চুক্তির বিষয় তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ভারতের সঙ্গে উপকূলীয় নৌ চলাচল চুক্তি, বাণিজ্য চুক্তি নবায়ন, অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন প্রটোকল স্বাক্ষর এবং এর সঙ্গে সঙ্গে নতুন বাস সার্ভিসগুলোর উদ্বোধন এ অঞ্চলের যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার প্রতি আমাদের অঙ্গীকারের দৃষ্টান্ত। এর মধ্য দিয়ে এ অঞ্চলে একটি বৈষম্যহীন সমাজব্যবস্থা আনা সম্ভব। চুক্তিগুলোতে যে নতুন বিষয় সনি্নবেশিত হয়েছে, তার মাধ্যমে বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও ব্যবসা প্রসারে নতুন নতুন ক্ষেত্র তৈরি হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আমাদের দুই দেশের ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য ঘাটতির বিষয়টি উপলব্ধি করেছেন এবং এ বিষয়ে তার সরকারের সার্বিক সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য সমতা আনার জন্য বাংলাদেশ ও ভারতীয় বিনিয়োগের জন্য মংলা ও ভেড়ামারায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে আমরা সম্মত হয়েছি। আমরা আশা করছি, এর ফলে বাংলাদেশে বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে।
শেখ হাসিনা বলেন, আজ আমরা দ্বিপক্ষীয় বেশ কয়েকটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছি, যা আমাদের পারস্পরিক সহযোগিতার বিভিন্ন ক্ষেত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। এর মধ্যে রয়েছে- অর্থনৈতিক সহযোগিতা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, নিরাপত্তা, অবকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, তথ্যপ্রযুক্তি, সংস্কৃতি ও ব্লু ইকোনমি। সহযোগিতার এ বিস্তৃত ক্ষেত্র আমাদের সম্পর্কের গভীরতার ব্যপ্তি এবং পরিপকস্ফতার নিদর্শন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সীমান্ত শান্তিপূর্ণ রাখা এবং এ বিষয়ে পারস্পরিক সহযোগিতা বজায় রাখার বিষয়ে আমরা আমাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছি। সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থার বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির বিষয়ে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আমরা উভয় দেশের ৫৪টি অভিন্ন নদীর ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে একসঙ্গে কাজ করার বিষয়ে আলোচনা করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুই দেশের জনগণের মধ্যে নিবিড় যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা আমাদের অন্যতম অগ্রাধিকার। এটি দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সবচেয়ে শক্তিশালী বন্ধন। আমরা গৌহাটিতে বাংলাদেশ মিশন এবং খুলনা ও সিলেটে ভারতীয় মিশন খোলার ব্যাপারে সম্মত হয়েছি। এটা আমাদের ক্রমবর্ধমান পারস্পরিক বিশ্বাস ও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আরও বিস্তৃত করার অঙ্গীকারের প্রতিফলন। এসব পদক্ষেপ আমাদের সম্পর্ককে আরও বিস্তৃত ও গণমুখী করবে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করার জন্য যে অঙ্গীকার করেছি, তা সফর শেষে যৌথ ঘোষণায় প্রকাশ পাবে। আমাদের এই যৌথ ঘোষণার অঙ্গীকারগুলো বাস্তবে রূপদান করাই সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে উদ্দেশ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমি এ ক্ষেত্রে আমাদের পক্ষ থেকে আপনাকে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দিচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী (মোদি) আপনার সফর আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে নতুন আশা ও গতির সঞ্চার করেছে। ঢাকায় আপনার সফর সফল হোক, আনন্দময় হোক।
নরেন্দ্র মোদি গতকাল সকালে ৩৬ ঘণ্টার রাষ্ট্রীয় সফরে ঢাকায় পেঁৗছার পর তাকে লালগালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়। ভারতের বিমানবাহিনীর বিশেষ উড়োজাহাজটি মোদিকে নিয়ে সকাল সোয়া ১০টার দিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পেঁৗছে। এর পর মোদিকে দেওয়া হয় লালগালিচা সংবর্ধনা।
নরেন্দ্র মোদি জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি এবং ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। বিকেল সোয়া ৩টায় সোনারগাঁও হোটেলে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর মঙ্গে ১৫ মিনিট একান্ত বৈঠক করেন। রাতে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া নৈশভোজে অংশ নেন তিনি।
আজ সকালে ঢাকেশ্বরী মন্দির ও রামকৃষ্ণ মন্দির পরিদর্শন, বারিধারায় চ্যান্সেরি ভবন উদ্বোধন, দুপুরে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ, ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারি বাজপেয়িকে দেওয়া স্বাধীনতা সম্মাননা গ্রহণ, রাষ্ট্রপতির দেওয়া মধ্যাহ্নভোজে অংশগ্রহণ, সোনারগাঁও হোটেলে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ বিশিষ্ট নাগরিকদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ এবং সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জনবক্তৃতা শেষে আজ রোববার রাতেই দিলি্ল ফিরে যাবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
নৈশভোজ: বাসস জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোনারগাঁও হোটেলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সম্মানে এক নৈশভোজের আয়োজন করেন। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী সদস্যরা নৈশভোজে যোগ দেন। পরে শেখ হাসিনা, নরেন্দ্র মোদি ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলাদেশি শিল্পীদের পরিবেশনায় একটি বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। শিল্পীরা নৈপুণ্যের সঙ্গে বাংলাদেশ ও ভারতের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য তুলে ধরেন।