কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কি সত্যিই চাকরি কেড়ে নিচ্ছে?

SHARE

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই কি সত্যিই মানুষের চাকরি কেড়ে নিচ্ছে? এই প্রশ্ন এখন কর্পোরেট দুনিয়ার বড় আলোচ্য বিষয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অ্যামাজন সম্প্রতি প্রায় ১৪ হাজার করপোরেট কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, এআই–এর সুযোগ কাজে লাগিয়ে তারা আরও ‘দক্ষভাবে’ পরিচালিত হতে চায়।

অ্যামাজনের এই ঘোষণা যেন নতুন করে আতঙ্ক তৈরি করেছে টেক খাতে। এর আগে অনলাইন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চেগ এআই–এর ‘নতুন বাস্তবতা’ উল্লেখ করে কর্মী সংখ্যা ৪৫ শতাংশ কমিয়েছে। সেলসফোর্স ৪ হাজার কর্মী ছাঁটাই করে জানিয়েছে, তাদের জায়গায় কাজ করছে এআই–চালিত কাস্টমার সার্ভিস এজেন্ট। ইউপিএসও জানিয়েছে, তারা গত এক বছরে ৪৮ হাজার চাকরি কমিয়েছে।

তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, সব ছাঁটাইয়ের পেছনে এআই দায়ী নয়। ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট ল্যাবের নির্বাহী পরিচালক মার্থা গিম্বেল বলেন, “সবাই এখন এআই নিয়ে এত উদ্বিগ্ন যে, কোনো কোম্পানি কর্মী কমালেই আমরা ধরে নিই সেটি এআইয়ের প্রভাব। কিন্তু বাস্তবে অনেক সময় এটি কেবল ব্যবসায়িক পুনর্গঠনের ফল।”

অর্থনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, করোনার সময় যুক্তরাষ্ট্রে সুদের হার শূন্যের কাছাকাছি নামানো হলে প্রযুক্তি খাতে ব্যাপক নিয়োগ হয়। এখন সেই অতিরিক্ত কর্মীসংখ্যা কমানোর ধারা চলছে, যা অনেকাংশেই স্বাভাবিক অর্থনৈতিক চক্রের অংশ।

সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০২২ সালের পর থেকে যেসব পেশায় এআই ব্যবহারের হার বেশি, সেসব ক্ষেত্রে বেকারত্বও বেড়েছে। তবে পিটসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মরগান ফ্র্যাঙ্ক বলেন, “চ্যাটজিপিটি চালুর পর কেবল প্রশাসনিক ও অফিস সহায়তাকারী কর্মীরাই বেকারত্বে পড়েছেন। টেক পেশাজীবীদের ক্ষেত্রে তেমন পরিবর্তন দেখা যায়নি।”

তবে অ্যামাজন এখনো ভালো ব্যবসা করছে। তাদের ২০২৪ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকের আয় আগের বছরের তুলনায় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬৭.৭ বিলিয়ন ডলার।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, অ্যামাজনের মতো বড় প্রতিষ্ঠান একদিকে যেমন এআই প্রযুক্তির উদ্ভাবক, তেমনি বড় ব্যবহারকারীও। ফলে তারা সহজেই কিছু কাজ স্বয়ংক্রিয় করতে পারছে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এখনো নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না যে এআই–এর কারণে বড় ধরনের বেকারত্ব তৈরি হয়েছে। তবে এক বিষয় স্পষ্ট যে, চাকরির ধরন বদলে যাচ্ছে। কেউ চাকরি হারাচ্ছেন, কেউ আবার নতুন ভূমিকা পাচ্ছেন।