গাজা সম্মেলনের ঘোষণাপত্র প্রকাশ, স্বাক্ষর করেছে ৪ দেশ

SHARE

হোয়াইট হাউস সোমবার মিসরের শার্ম আল শেখে অনুষ্ঠিত গাজা শান্তি সম্মেলনের ফলাফল হিসেবে প্রণীত পূর্ণাঙ্গ ঘোষণাপত্র প্রকাশ করেছে। এই ঘোষণায় স্বাক্ষর করেছেন চার দেশের শীর্ষ নেতা।

ঘোষণাপত্রটির নাম রাখা হয়েছে ‘ট্রাম্প ডিক্লারেশন ফর এন্ডিউরিং পিস অ্যান্ড প্রসপারিটি’ বা ‘টেকসই শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য ট্রাম্প ঘোষণা’। মূলত মধ্যপ্রাচ্য ও গাজায় স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে করা হয়েছে এটি।
এতে স্বাক্ষর করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি, কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি এবং তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান। হোয়াইট হাউস কর্তৃক প্রকাশিত সম্পূর্ণ অংশটি নীচে দেওয়া হল।

ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে—আমরা স্বাক্ষরকারীরা ট্রাম্প শান্তি চুক্তির সকল পক্ষের ঐতিহাসিক প্রতিশ্রুতি ও বাস্তবায়নকে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানাই। এই চুক্তি দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা গভীর দুর্ভোগ ও ক্ষতির অবসান ঘটিয়ে আশা, নিরাপত্তা এবং শান্তি ও সমৃদ্ধির এক যৌথ দৃষ্টিভঙ্গিতে সংজ্ঞায়িত একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে।

আমরা গাজায় যুদ্ধের অবসান ও মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আন্তরিক প্রচেষ্টাকে সম্পূর্ণ সমর্থন জানাই এবং তার পাশে আছি। আমরা একসঙ্গে এই চুক্তি এমনভাবে বাস্তবায়ন করব, যাতে ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলি উভয় অঞ্চলের সকল মানুষের জন্য শান্তি, নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের সুযোগ নিশ্চিত হয়।

ঘোষণাপত্রে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, আমরা বুঝতে পারছি স্থায়ী শান্তি তখনই সম্ভব হবে, যখন ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলি উভয় জনগোষ্ঠী তাদের মৌলিক মানবাধিকার সুরক্ষিত রেখে, নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রেখে সমৃদ্ধির পথে আগাতে পারবে। আমরা বিশ্বাস করি, অর্থবহ অগ্রগতি শুধুমাত্র সহযোগিতা ও ধারাবাহিক সংলাপের মাধ্যমেই অর্জিত হয়।
জাতি ও জনগণের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করা আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

তাতে বলা হয়েছে, আমরা এই অঞ্চলের গভীর ঐতিহাসিক ও আধ্যাত্মিক গুরুত্ব স্বীকার করি—যেখানে খ্রিস্টধর্ম, ইসলাম ও ইহুদি ধর্মসহ বিভিন্ন বিশ্বাসের শিকড় গভীরভাবে রয়েছে। শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের প্রতি আমাদের অঙ্গীকারের অংশ হিসেবে আমরা এই পবিত্র সম্পর্কগুলোর প্রতি শ্রদ্ধা জানাব এবং ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক স্থাপনাগুলোর সুরক্ষাকে সর্বাগ্রে রাখব।

এ ছাড়া বলা হয়েছে, আমরা সব ধরনের উগ্রবাদ ও চরমপন্থা নির্মূলের প্রতিশ্রুতিতে ঐক্যবদ্ধ। কোনো সমাজই বিকশিত হতে পারে না, যদি সহিংসতা ও বর্ণবাদকে স্বাভাবিক বলে মেনে নেওয়া হয়, অথবা উগ্র মতাদর্শ নাগরিক জীবনের ভিত্তিকে হুমকির মুখে ফেলে।
আমরা উগ্রবাদের জন্ম দেয় এমন সব পরিস্থিতি মোকাবিলার অঙ্গীকার করছি এবং শিক্ষা, সুযোগ সৃষ্টি ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাকে স্থায়ী শান্তির ভিত্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।

আমরা ঘোষণা করছি যে, ভবিষ্যতের যেকোনো বিরোধ আমরা বলপ্রয়োগ বা দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতের পরিবর্তে কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করব। আমরা স্বীকার করি, মধ্যপ্রাচ্য আর দীর্ঘ যুদ্ধ, স্থগিত আলোচনা বা অসম্পূর্ণ শান্তিচুক্তির পুনরাবৃত্তি সহ্য করতে পারে না। গত দুই বছরের ট্র্যাজেডিগুলো আমাদের জন্য একটি কঠোর শিক্ষা— ভবিষ্যৎ প্রজন্ম অতীতের ব্যর্থতার চেয়ে আরো ভালো ভবিষ্যতের দাবিদার।

আমরা সহনশীলতা, মর্যাদা ও প্রতিটি মানুষের জন্য সমান সুযোগ কামনা করি, যাতে এই অঞ্চলটি এমন এক জায়গায় পরিণত হয়, যেখানে জাতি, ধর্ম বা বর্ণ নির্বিশেষে সবাই শান্তি, নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির সঙ্গে তাদের স্বপ্ন পূরণ করতে পারে। আমরা পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও যৌথ নিয়তির নীতির ভিত্তিতে এই অঞ্চলে শান্তি, নিরাপত্তা ও যৌথ সমৃদ্ধির একটি বিস্তৃত দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণ করছি।

আরো বলা হয়েছে, এই চেতনা থেকেই আমরা গাজা উপত্যকায় ব্যাপক ও টেকসই শান্তি ব্যবস্থার অগ্রগতি এবং ইসরায়েল ও তার প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ পারস্পরিকভাবে উপকারী সম্পর্কের বিকাশকে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানাই। আমরা এই অর্জন বাস্তবায়ন ও টিকিয়ে রাখতে একযোগে কাজ করার অঙ্গীকার করছি, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম শান্তিতে একসঙ্গে উন্নতি করতে পারে এমন এক দৃঢ় প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি তৈরি হয়। আমরা স্থায়ী শান্তির ভবিষ্যতের প্রতি নিজেদের সম্পূর্ণভাবে অঙ্গীকারবদ্ধ করছি।

সূত্র : আলঅ্যারাবিয়া।