যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চুক্তি হয়েছে যার ফলে জনপ্রিয় ভিডিও-শেয়ারিং অ্যাপ টিকটক যুক্তরাষ্ট্রে চালু থাকবে। এমন কথাই জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
নতুন মালিকানায় যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগকারীরাই প্রাধান্য পাবেন। বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
হোয়াইট হাউস থেকে যুক্তরাজ্যে রাষ্ট্রীয় সফরে যাওয়ার পথে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, “টিকটক নিয়ে আমাদের চুক্তি হয়েছে। আমি চীনের সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছেছি। শুক্রবার প্রেসিডেন্ট শি’র সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি চূড়ান্ত করব।”
এর আগে চীনা কোম্পানি বাইটড্যান্সের মালিকানাধীন এই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে যুক্তরাষ্ট্রের কার্যক্রম বিক্রি করতে বা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি নিতে বলা হয়েছিল।
তবে জানুয়ারি থেকে কয়েক দফা টিকটক নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিলেও ট্রাম্প তা বারবার পিছিয়ে দিয়েছেন। মঙ্গলবারও তিনি সময়সীমা বাড়িয়ে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত করেছেন। ট্রাম্প জানান, শিগগিরই নতুন ক্রেতার নাম ঘোষণা করা হবে।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের খবরে বলা হয়, আলোচনার অংশ হিসেবে টিকটকের যুক্তরাষ্ট্র শাখার মালিকানা যাবে একটি বিনিয়োগকারী কনসোর্টিয়ামের হাতে। এতে প্রযুক্তি কোম্পানি ওরাকল, প্রাইভেট ইকুইটি ফার্ম সিলভার লেক এবং ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফার্ম আন্দ্রেসেন হরোভিৎজ অংশ নেবে।
চুক্তির অধীনে নতুন একটি মার্কিন প্রতিষ্ঠান গঠিত হবে। এতে প্রায় ৮০ শতাংশ শেয়ার থাকবে মার্কিন বিনিয়োগকারীদের হাতে। বোর্ডেও প্রাধান্য থাকবে আমেরিকানদের, যেখানে একজন সদস্য মনোনীত করবে মার্কিন সরকার।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবহারকারীরা চলে যাবেন নতুন একটি অ্যাপে, যা পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে। এই অ্যাপটি বাইটড্যান্সের প্রযুক্তি লাইসেন্স নিয়ে টিকটকের কনটেন্ট-রেকমেন্ডেশন অ্যালগরিদম ব্যবহার করবে। অ্যাপটির সাফল্যের মূল কারণই এই অ্যালগরিদম।
সিএনবিসি জানায়, চুক্তিতে বর্তমান ও নতুন বিনিয়োগকারীদের মিশ্রণ থাকবে এবং তা ৩০ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে সম্পন্ন হবে। এর মধ্যে ওরাকল যুক্তরাষ্ট্রে টিকটকের সার্ভার হোস্ট করার বিদ্যমান চুক্তি বহাল রাখবে। মার্কিন আইনপ্রণেতাদের প্রধান উদ্বেগই ছিল চীনের সঙ্গে তথ্য ভাগাভাগি হওয়ার আশঙ্কা।
সোমবার মাদ্রিদে চলমান বাণিজ্য আলোচনার মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি দল চীনের সঙ্গে একটি “ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি”র কথা জানায়। চীনও চুক্তির কাঠামোতে সম্মতি জানায়, তবে তাদের কোম্পানির স্বার্থের বিনিময়ে কোনো সমঝোতা হবে না বলেও জানায়।
চীনের সাইবারস্পেস প্রশাসনের উপপ্রধান ওয়াং জিংতাও এক সংবাদ সম্মেলনে ইঙ্গিত দেন, এই চুক্তিতে অ্যালগরিদম ও মেধাস্বত্ব ব্যবহারের অনুমতি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তিনি বলেন, “টিকটক সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তি রপ্তানি এবং মেধাস্বত্ব লাইসেন্স ব্যবহারের বিষয়গুলো আইন অনুযায়ী চীন সরকার পর্যালোচনা ও অনুমোদন দেবে।”
প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের প্রথম মেয়াদে ট্রাম্প টিকটক নিষিদ্ধ করার পক্ষে থাকলেও এখন তিনি অবস্থান পরিবর্তন করেছেন। এর আগে জানুয়ারিতে মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট গত বছরের এপ্রিল মাসে পাস হওয়া আইন বহাল রাখে, যেখানে বলা হয়েছিল বাইটড্যান্স তাদের মার্কিন শাখা বিক্রি না করলে টিকটক নিষিদ্ধ হবে।
মার্কিন বিচার বিভাগ বলেছে, টিকটক মার্কিন ব্যবহারকারীদের তথ্যের কারণে “গভীর ও ব্যাপক জাতীয় নিরাপত্তা হুমকি” তৈরি করছে। তবে বাইটড্যান্স বারবার বলেছে, তাদের যুক্তরাষ্ট্রের কার্যক্রম সম্পূর্ণ স্বাধীন এবং কোনো তথ্য চীনা সরকারের সঙ্গে শেয়ার করা হয় না।
এর আগে জানুয়ারিতে টিকটক সাময়িকভাবে একদিনেরও কম সময়ের জন্য বন্ধ হয়েছিল, তবে নিষেধাজ্ঞা পরে স্থগিত হয়। এরপর থেকে চারবার সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে। সর্বশেষ সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত।