গাজায় ইসরায়েলি অভিযানে আরও ৫৩ ফিলিস্তিনি নিহত, ক্ষুধায় মৃত্যু ছাড়াল ৪২২

SHARE

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি সামরিক অভিযানে একদিনেই নতুন করে আরও ৫৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে গাজা সিটির ১৬টি ভবন ধ্বংস করা হয়েছে, যার মধ্যে তিনটি আবাসিক টাওয়ার রয়েছে। একইসঙ্গে, অপুষ্টি ও খাদ্যাভাবজনিত কারণে ক্ষুধায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪২২ জনে পৌঁছেছে।

সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।

উত্তর গাজায় নজর ইসরায়েলের

ইসরায়েলি বাহিনী নতুন করে গাজা সিটির উত্তরাঞ্চলে অভিযান চালাচ্ছে, যেটিকে নগর কেন্দ্র দখল ও জনগণকে জোরপূর্বক উৎখাতের চেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে জানা গেছে, রোববার নিহতদের মধ্যে অন্তত ৩৫ জনই গাজা সিটির বাসিন্দা।

গাজা সিটির রেমাল এলাকায় অবস্থিত আল-কাওসার টাওয়ার পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে এক বিমান হামলায়। ফলে আবারও হাজারো মানুষ আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে।

ক্ষুধা ও দুর্ভিক্ষে মৃত্যু

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দুজন শিশু অপুষ্টিতে মারা গেছে। এই নিয়ে চলমান যুদ্ধ ও অবরোধে ক্ষুধা ও অপুষ্টিজনিত মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪২২ জনে।

“কোথাও নিরাপদ নয়”

জাতিসংঘ, ইউএনআরডব্লিউএ এবং ইউনিসেফ বলছে, গাজায় আর কোনো নিরাপদ জায়গা নেই।
ইউএনআরডব্লিউএ প্রধান ফিলিপ লাজারিনি জানিয়েছেন, শুধু গত চার দিনেই গাজা সিটিতে তাদের ১০টি স্থাপনায় হামলা হয়েছে, যার মধ্যে সাতটি স্কুল ও দুটি ক্লিনিক রয়েছে— যেখানে হাজারো বাস্তুচ্যুত মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলেন।

“এটি গণহত্যামূলক যুদ্ধ”

গাজার সরকারি গণমাধ্যম অফিস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ইসরায়েল প্রকৃতপক্ষে “পদ্ধতিগত বোমাবর্ষণ” চালিয়ে গণহত্যা ও জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করার নীতি অনুসরণ করছে।

তাদের দাবি, ইসরায়েলের লক্ষ্য স্কুল, মসজিদ, হাসপাতাল, মানবিক সংস্থার দপ্তর ও সাধারণ বাসস্থান— যা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের সামিল।

“আমরা জানি না কোথায় যাব”

বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি নাগরিক মারওয়ান আল-সাফি বলেন, “আমরা জানি না কোথায় যাব। এই পরিস্থিতির একটা সমাধান দরকার… আমরা এখানে মরছি।”

আহমেদ আওয়াদ, যিনি উত্তর গাজা থেকে পালিয়ে এসেছেন, বলেন, “মধ্যরাতে এসে দেখি পানি নেই, টয়লেট নেই, খোলা আকাশের নিচে থাকতে হচ্ছে।”

শরণার্থী অঞ্চলেও নিরাপত্তাহীনতা

ইসরায়েল ঘোষিত তথাকথিত “নিরাপদ অঞ্চল” আল-মাওয়াসিরেও চলছে বিমান হামলা। ইউনিসেফ বলেছে, ওই অঞ্চলটির পরিস্থিতিও দ্রুত অবনতির দিকে যাচ্ছে।

সংস্থার মুখপাত্র টেস ইঙ্গ্রাম জানান, এক নারীকে রাস্তায় সন্তান জন্ম দিতে হয়েছে, কারণ তার কাছে পৌঁছানোর মতো কোনো সহায়তা ছিল না। তিনি বলেন, “এখানে হাজারো পরিবার বেঁচে থাকার ন্যূনতম চাহিদা পূরণেও লড়ছে।”