ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজা উপত্যকায় প্রায় দুই বছর ধরে চলমান যুদ্ধে নতুন কৌশল নির্ধারণে মঙ্গলবার জ্যেষ্ঠ নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। নেতানিয়াহুর দপ্তরের এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। দেশটির গণমাধ্যম জানায়, নেতানিয়াহু গাজার পুরো ভূখণ্ড সামরিকভাবে দখলের পক্ষে মত দিয়েছেন।
স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানান, গাজার উত্তরে জাতিসংঘের ত্রাণ সহায়তার জন্য অপেক্ষারত অবস্থায় ইসরায়েলি গুলিতে অন্তত ২০ জন নিহত হয়েছেন।
দক্ষিণ গাজার রাফাহর কাছে মরাগ স্কয়ারে ত্রাণ নিতে আসা আরো ২০ জন গুলিতে আহত হয়েছেন। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় অনাহার ও অপুষ্টিতে আরো ৮ জন মারা গেছেন। সর্বশেষ ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৮০ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
নেতানিয়াহুর কার্যালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, তিন ঘণ্টাব্যাপী ‘সীমিত নিরাপত্তা আলোচনায়’ সামরিক প্রধান আইয়াল জামির গাজায় অভিযান চালিয়ে যাওয়ার বিভিন্ন পথ তুলে ধরেন।
এর আগে এক ইসরায়েলি কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানান, প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ ও কৌশল বিষয়ক মন্ত্রী রন ডারমারও এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। দেশটির ক্যাবিনেট বৃহস্পতিবার বিকেল ৬টায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে বৈঠকে বসবে।
ইসরায়েলি চ্যানেল ১২ জানায়, নেতানিয়াহু গাজার পুরো দখল নিতে রাজি আছেন। এটি ২০০৫ সালের সেই সিদ্ধান্তকে উল্টে দেবে, যখন ইসরায়েল গাজা থেকে সেনা ও নাগরিকদের প্রত্যাহার করেছিল।
ডানপন্থী রাজনীতিকদের মতে, সেই সিদ্ধান্তই হামাসকে গাজায় ক্ষমতায় এনেছিল। তবে নেতানিয়াহু দীর্ঘমেয়াদি দখল চান, নাকি স্বল্পমেয়াদে হামাসকে ধ্বংস ও জিম্মিদের মুক্ত করতে চান— তা এখনো স্পষ্ট নয়। চ্যানেল ১২–এর প্রতিবেদনে নেতানিয়াহুর দপ্তর মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানায়।
সামরিক প্রশিক্ষণ শিবিরে নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত সেনাদের উদ্দেশে নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমাদের এখনো শত্রুর বিরুদ্ধে বিজয় অর্জন, জিম্মিদের মুক্তি এবং গাজা যেন আর কখনো ইসরায়েলের জন্য হুমকি না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। আমরা এই লক্ষ্যগুলো থেকে সরে আসছি না।
’
জাতিসংঘ নেতানিয়াহুর সম্ভাব্য পূর্ণ সামরিক দখলের সিদ্ধান্ত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং বলেচেন, এ ধরনের উদ্যোগ সত্যি হলে তা হবে ‘গভীর দুশ্চিন্তার বিষয়।’ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা এখন চেষ্টা করছি মানুষকে খাবার পৌঁছে দিতে। এর বাইরে যা হচ্ছে, সেটা ইসরায়েলের বিষয়।’
হামাস সম্প্রতি এক ভিডিও প্রকাশ করে, যেখানে ২০২৩ সালে অপহৃত ইসরায়েলি জিম্মি এবিয়াতার ডেভিডকে কঙ্কালসার অবস্থায় একটি টানেলে দেখানো হয়। ভিডিওটি ইসরায়েলে শোক এবং বিশ্বজুড়ে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।
ফিলিস্তিনি এক কর্মকর্তা জানান, গাজার পূর্ণ দখলের প্রস্তাব আসলে হামাসের ওপর চাপ তৈরির কৌশলও হতে পারে। ফিলিস্তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি এই প্রস্তাব গুরুত্ব দিয়ে দেখার আহ্বান জানিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই তথাকথিত ফাঁস বা পরিকল্পনা সত্যি হোক বা চাপের কৌশল— যাই হোক, আন্তর্জাতিক সমাজকে এখনই হস্তক্ষেপ করতে হবে।’
ইসরায়েলের ইতিহাসে সবচেয়ে ডানপন্থী জোট সরকার গাজা ও পশ্চিম তীরের দখল চায় এবং ফিলিস্তিনিদের স্থানত্যাগে উৎসাহ দেয়। আন্তর্জাতিক বিচার আদালত ২০২৪ সালে রায় দেয় যে, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলি দখল বেআইনি এবং তা দ্রুত বন্ধ হওয়া উচিত।
যুদ্ধের কারণে গাজার দুই মিলিয়ন অধিবাসীর প্রায় সবাই গৃহহীন হয়েছেন। জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বলছে, গাজায় ‘মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ’ সৃষ্টি হয়েছে। গাজার কর্তৃপক্ষ জানায়, এখন পর্যন্ত ক্ষুধায় প্রাণ গেছে ১৮৮ জন ফিলিস্তিনির, যার মধ্যে ৯৪ জন শিশু। গতকাল মঙ্গলবার ইসরায়েলি ট্যাংকগুলো গাজার কেন্দ্রীয় অংশে ঢুকে পড়ে। যদিও এটি বড় ধরনের স্থল অভিযান কি না— তা স্পষ্ট নয়।
গাজার এক কাঠ ব্যবসায়ী আবু জেহাদ বলেন, ‘যদি ট্যাংক ঢুকে পড়ে, আমরা যাব কোথায়? সমুদ্রে? এটি পুরো জনগণের জন্য মৃত্যু পরোয়ানা হয়ে দাঁড়াবে।’
সূত্র : রয়টার্স