ইরান সোমবার জানিয়েছে, তাদের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলার জন্য ভবিষ্যতে যেকোনো আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রকে দায় নিতেই হবে। তবে তারা ওয়াশিংটনের সঙ্গে সরাসরি আলোচনার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছে।
গত ২২ জুন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়। ওই হামলার মাধ্যমে তারা ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধে অল্প সময়ের জন্য যুক্ত হয়।
ওই যুদ্ধের কারণে তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে চলমান আলোচনা ভেস্তে যায়।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাকাই এদিন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘ভবিষ্যতে সম্ভাব্য যেকোনো আলোচনায়…ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর সামরিক আগ্রাসনের দায়ে যুক্তরাষ্ট্রকে জবাবদিহির আওতায় আনা ও ক্ষতিপূরণ দাবি করা আলোচ্য বিষয়গুলোর মধ্যে থাকবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরান সরাসরি আলোচনায় অংশ নেবে কি না জানতে চাইলে বাকাই বলেন, ‘না।’ অন্যদিকে ওয়াশিংটন ক্ষতিপূরণ চাওয়ার এই দাবিকে ‘হাস্যকর’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।
গত জুনের মাঝামাঝি সময়ে ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় ইসরায়েল নজিরবিহীন হামলা চালায়, যার আওতায় আবাসিক এলাকাও আঘাতপ্রাপ্ত হয়। ১২ দিন স্থায়ী ওই যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ফোরদো, ইসফাহান ও নাতাঞ্জে অবস্থিত পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালিয়ে ইসরায়েলের পাশে দাঁড়ায়।
এই যুদ্ধ চলাকালে ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের পরিত্যক্ত ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সংক্রান্ত ঐতিহাসিক চুক্তি নিয়ে শুরু হওয়া উচ্চ পর্যায়ের আলোচনা ব্যাহত হয়। এ ছাড়া যুদ্ধের পর তেহরান জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষক সংস্থার (আইএইএ) সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিত করে এবং ভবিষ্যতে আলোচনায় বসার আগে সামরিক হামলার বিরুদ্ধে নিশ্চয়তার দাবি জানায়।
বাকাই সোমবার আরো বলেন, ইরান পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তির (এনপিটি) প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, তবে তিনি আইএইএর ‘রাজনৈতিক ও অপেশাদার আচরণের’ সমালোচনা করেন। তিনি জানান, সংস্থাটির উপপ্রধান আগামী ১০ দিনের মধ্যে ইরানে সফর করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
পরে ইরানের পার্লামেন্টের জাতীয় নিরাপত্তা কমিশনের প্রধান ইব্রাহিম আজিজি একই দিনে বলেন, সফররত আইএইএ প্রতিনিধিদলকে শুধু ‘প্রযুক্তিগত ও বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে আলোচনা’ করার অনুমতি দেওয়া হবে। তিনি বার্তা সংস্থা তাসনিমকে বলেন, ‘কোনো অবস্থাতেই ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে শারীরিক প্রবেশাধিকার দেওয়া হবে না এবং এই প্রতিনিধিদল বা অন্য কোনো বিদেশি সংস্থার কোনো পরিদর্শনের অনুমতি থাকবে না।’
গত মাসে ইরান বলেছিল, জাতিসংঘের সংস্থাটির সঙ্গে ভবিষ্যৎ সহযোগিতা ‘নতুন রূপে’ গড়ে তোলা হবে।
এদিকে চলতি বছরের ২৫ জুলাই যুদ্ধের পর প্রথমবারের মতো ইরানি কূটনীতিকরা জার্মানি, ব্রিটেন ও ফ্রান্সের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এই তিনটি ইউরোপীয় দেশ ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তির অংশীদার, যা ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাহারের ফলে ভেস্তে যায়।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ইউরোপীয় এই দেশগুলো হুমকি দিয়েছে, ইরান যদি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ও জাতিসংঘ পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে সহযোগিতায় নতুন কোনো চুক্তিতে পৌঁছতে ব্যর্থ হয়, তবে তারা নিষেধাজ্ঞা পুনরায় আরোপ করবে। ইরান বারবার এই নিষেধাজ্ঞাকে ‘অবৈধ’ আখ্যা দিয়ে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার অধিকার দাবি করেছে।
ইসরায়েল ও পশ্চিমা দেশগুলো অভিযোগ করে আসছে, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে চায়, যদিও তেহরান বরাবরই এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।