আজ মে মাসের দ্বিতীয় রোববার। বিশ্ব মা দিবস। পৃথিবীর সবচেয়ে দৃঢ় সম্পর্কের নাম `মা`। সবচেয়ে পবিত্র ও মধুর শব্দের নাম `মা`।
যদিও মাকে ভালোবাসা-শ্রদ্ধা জানানোর কোন দিনক্ষণ ঠিক করে হয় না- তবুও মাকে গভীর মমতায় স্মরণ করার দিন আজ।
জগতে মায়ের মতো এমন আপনজন আর কে আছে! তাই প্রতি বছর এই দিনটি স্মরণ করিয়ে দেয় প্রিয় মায়ের মর্যাদার কথা।
কালে কালে একটি কথাই চিরায়ত সত্যিতে পরিণত হয়েছে, আর সেটি হচ্ছে- পৃথিবীতে মা শব্দের চেয়ে অতি আপন শব্দ আর দ্বিতীয়টি নেই। সন্তানের কাছে সবচেয়ে আপন, সবচেয়ে প্রিয় হচ্ছেন তার মা।
মায়ের গর্ভে সন্তান যেমন রক্ত শুষে নিরাপদে ধীরে ধীরে বড় হয়, তেমনি জন্মের পরও তিল তিল করে মা-ই কেবল তার নাড়ি ছেঁড়া ধনকে তিলে তিলে বড় করে তোলেন আগামীর সম্ভাবনাময় একজন মানুষ হিসেবে।
জীবনের চরম সংকটকালে পরম সান্ত্বনার স্থল হিসেবে যার কথা প্রথম মনে পড়ে তিনি মমতাময়ী মা। মা প্রথম পৃথিবীর রং-রূপ-শব্দ-গন্ধ-চেনান-দেখান-শেখান। যুগে যুগে কবি-সাহিত্যিকগণ মা বন্দনা করে কত ভালোবাসাই না ঝরিয়েছেন।
কবি কামিনী রায় তার ‘কত ভালবাসি মা` কবিতায় মাকে বন্দনা করে লিখেছেন, `জড়ায়ে মায়ের গলা শিশু কহে আসি,-/মা, তোমারে কত ভালোবাসি!/”কত ভালোবাস ধন?” জননী শুধায়।/”এ-ত বলি দুই হাত প্রসারি` দেখায়।/ তুমি মা আমারে ভালোবাস কতখানি?/মা বলেন “মাপ তার আমি নাহি জানি।”/”তবু কতখানি, বল।”/”যতখানি ধরে/তোমার মায়ের বুকে।”
আব্রাহাম লিংকন মাকে স্মরণে এনে বলেছিলেন, `আমি যা কিছু পেয়েছি, যা কিছু হয়েছি, অথবা যা হতে আশাকরি তার জন্য আমি আমার মার কাছে ঋণী`। ইংরেজ কবি রবার্ট ব্রাউনিং বলেছেন, `মাতৃত্বেই সকল মায়া-মমতা ও ভালবাসার শুরু এবং শেষ।`
মাকে ভালোবাসা আর তার প্রতি হৃদয় নিংড়ানো শ্রদ্ধার বিষয়টি পবিত্র ধর্মগ্রন্থগুলোতে অত্যধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ইসলামে মায়ের পদতলে সন্তানের বেহেশতের কথা বলা হয়েছে। অন্যান্য ধর্মেও মাতৃভক্তি আর তার প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞান সবার ওপরে স্থান দেওয়া হয়েছে।
ভার্জিনিয়ার আনা জার্ভিসকে বলা হয় মা দিবসের প্রবর্তক। মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য ১৯১৪ সালের ৮ মে মার্কিন কংগ্রেস মে মাসের দ্বিতীয় রোববারকে মা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এভাবেই শুরু হয় মা দিবসের যাত্রা।
এরই ধারাবাহিকতায় আমেরিকার পাশাপাশি মা দিবস এখন বাংলাদেশসহ অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, চীন, রাশিয়া ও জার্মানসহ শতাধিক দেশে মর্যাদার সঙ্গে দিবসটি পালিত হচ্ছে।
ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদী সমাজে বিশেষ করে ইউরোপ-আমেরিকায় এটি বিশেষ গুরুত্ব পেয়ে আসছে। সেখানে উদযাপনের জনপ্রিয়তায় বড়দিন এবং ভালোবাসা দিবসের পর মা দিবসের অবস্থান।
সেই বিবেচনায় বাংলাদেশে এ দিবসটি ঘটা করে পালনের ইতিহাস খুব বেশি দিনের নয়। যদিও মাকে সম্মান, শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা দেখাতে নির্দিষ্ট দিনক্ষণ ঠিক করে নেওয়ার যুক্তি অনেকের কাছেই সেভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। তবে অনেকেই মনে করেন মাকে সম্মান দেখাতে, তাকে গভীরভাবে স্মরণ করতে আন্তর্জাতিকভাবে পালিত বিশ্ব মা দিবসের গুরুত্ব রয়েছে। যে কারণে বিশেষত নাগরিক জীবনে দিনটি পালনের ক্ষেত্রে বেশি সাড়া মিলেছে কয়েক বছর ধরে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো আজ বাংলাদেশেও দিবসটি নানা আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে পালন করা হবে।