ওয়ারেন্ট পেলেই খালেদাকে গ্রেফতারের প্রক্রিয়া

SHARE

khaleda22রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে যাত্রীবাহী বাসে পেট্রোল বোমা মেরে মানুষ হত্যা ও আহতের ঘটনার মামলায় দাখিলকৃত চার্জশিটের ভিত্তিতে আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা (ওয়ারেন্ট) পেলেই খালেদাকে গ্রেফতারের প্রক্রিয়া শুরু করবে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার  দুপুরে ডিবি কার্যালয়ে এমন তথ্য নিশ্চিত করেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম।

মনিরুল ইসলাম বলেন, কথিত অবরোধ এবং হরতাল চলাকালে গত ২৩ জানুয়ারি রাতে যাত্রাবাড়ীর মাতুয়াইলে কাঠেরপুল এলাকায় গ্লোরি পরিবহনের যাত্রীবাহী বাসে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ এবং অগ্নিসংযোগ করা হয়। ওই ঘটনার পরপরই পুলিশের একটি টহল দল এবং স্থানীয় সকলে মিলে বোমা নিক্ষেপকারীদের ধাওয়া করেন। ওই ঘটনায় বেশ কিছু বাসযাত্রী অগ্নিদগ্ধ ও আহত হন।

তাদের মধ্যে কেউ কেউ প্রথমিক চিকিৎসা নেন, আবার কেউ কেউ দীর্ঘদিন হাসপাতালে মারাত্মক ইনজুরি নিয়ে ভর্তি ছিলেন। এতে আহতের সংখ্যা ছিলো অন্তত ২৯ জন। এর মধ্যে নূরে আলম নামের এক বৃদ্ধ যাত্রী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মারা যান।

ডিবি’র যুগ্ম কমিশনার জানান, ওই ঘটনায় দু’টি মামলা দায়ের করা হয়। একটি বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে এবং আরেকটি হলো  বিশেষ ক্ষমতা আইনে। যেহেতু বিস্ফোরকের ব্যবহার হয়েছিলো সেই হিসেবে বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে মামলা হয়। বিস্ফোরকদ্রব্য আইনের মামলাটিতে মূলত ২০ দলীয় নেতা এবং বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে এজাহারভুক্ত আসামি করা হয়। তার ঘোষিত কর্মসূচির কারণেই মূলত ঘটনাটি তার দলের নেতাকর্মীরা সংঘটিত করেন।

মনিরুল জানান, ওই ঘটনায় যাত্রাবাড়ী থানায় বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে দায়েরকৃত ৫৮ নম্বর মামলার চার্জশিট তদন্ত শেষে বুধবার (৬ মে) আদালতে দাখিল করা হয়েছে। চার্জশিটে ৩৯ জনের সম্পৃক্ততা থাকলেও একজন আসামি ইতোপূর্বে মারা গেছেন। বাকি ৩৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। তবে এ মামলায় এজাহারভুক্ত আসামির সংখ্যা অনেক ছিলো।

এ মামলায় মোট ৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে ৭ জনের জবানবন্দি, বিশেষ করে আদালতে ৪ জনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির প্রেক্ষিতে, প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য এবং যারা জখম হয়েছিলেন তাদের সাক্ষ্য অনুযায়ী সবকিছুর ভিত্তিতে ৩৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ পুলিশের তদন্তে প্রমাণিত হয়। একজন মারা যাওয়ায় ৩৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়ছে।

তিনি জানান, আসামিদের মধ্যে ৩১ জন এখন পর্যন্ত পলাতক রয়েছেন। ৩১ জনের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারির জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে। মামলাটিতে প্রধান আসামি এবং মূল পরিকল্পনাকারী ও নির্দেশদাতা হিসেবে রয়েছেন ২০ দলীয় জোট নেত্রী বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। এছাড়া বিভিন্ন পেশারও কিছু লোক রয়েছেন। যারা তাদের বক্তৃতা-বিবৃতিতে এ ঘটনা ঘটিয়েছিলেন।

পুলিশের তদন্তে ঘটনাস্থলে ৫ জনের সরাসরি সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে। ওই ৫ জনের মধ্যে ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিলো। তাদের মধ্যে একজন পুলিশের ওপর হামলা করায় পুলিশের পাল্টা প্রতিরোধে ঘটনাস্থালেই নিহত হন।

তিনি জানান, এ কাজে যারা অর্থ দিয়েছেন, তাদেরকেও অভিযোগপত্রে আসামি করা হয়েছে। বাকি একটি মামলার অভিযোগপত্রও প্রস্তুত করা হচ্ছে দাখিলের জন্য।

মনিরুল জানান, খালেদা জিয়াকে ১ নম্বর আসামি করা হয়েছে। নির্দিষ্ট স্বীকাররোক্তি ও সাক্ষ্যের ভিত্তিতে তাকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়াও অন্য যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে, তাদেরকেও এ মামলার আসামি করা হয়েছে। সে হিসেবে বিশদলীয় নেতা ও বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার নাম এসেছে।

খালেদা জিয়া ও পলাতক অন্যদের গ্রেফতারের ব্যপারে জানতে চাওয়া হলে গোয়েন্দা কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বলেন, পলাতক আসামিদের গ্রেফতারের ব্যাপারে তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে আবেদন জানিয়েছেন। আদালতের ওয়ারেন্ট পেলেই গ্রেফতার প্রক্রিয়া শুরু হবে।