সুন্দরবনে ৫০০ মেট্রিক টন সার নিয়ে জাহাজডুবির ঘটনায় পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
তেলবাহী ট্যাঙ্কার জাহাজ ‘সাউদার্ণ স্টার সেভেন’ ডুবির বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই সুন্দরবনে ৫০০ মেট্রিকটন এমওপি সার নিয়ে ‘জাবালে নূর’ নামের লাইটারেজ জাহাজ ডুবির ঘটনা ঘটল। মঙ্গলবার বিকেল ৫টার দিকে পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের ভোলা নদীর বিমলের চর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার পর পরই জাহাজের মাস্টার ও নাবিকরা পালিয়ে যায়।
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে জানাগেছে, মেসার্স আল এহসান শিপিং লাইন্স এর এম-৬৯৪৩ নম্বরের এ জাহাজটি গত ৩ মে মংলার হারবাড়িয়া থেকে সার বোঝাই করে সিরাজগঞ্জের বাঘাবড়ি ঘাটের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। জাহাজটি ছেড়ে আসার পর ওই দিন বাগেরহাটের শরণখোলা রেঞ্জের ভোলা নদের বিমলের চর এলাকায় এলে বিপরিত দিক থেকে আসা একটি জাহাজকে সাইড দিতে গিয়ে ওই জাহাজটি প্রথমে ডুবো চরে আটকে পড়ে। পরে ঢেউয়ের আঘাতে সেটি ফেটে মঙ্গলবার বিকালে ডুবে যায়।
মালেকের সূত্র আরো জানায় ডুবে যাওয়া জাহাজটি প্রথমে চরে আটকে যাওয়ার খবর শুনে তার মালিক মো. নূরুল হক সেটি উদ্ধারের জন্য তাদের ঘটনাস্থলে পাঠান। ঢেউয়ের কারনে জাহাজটি মাঝখান থেকে ফেটে পানিতে ডুবে যায়।
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের শরণখোলা স্টেশনের সহকারী স্টেশন কর্মকর্তা মো. মাসুদুর রহমান র্দূঘটনাস্ধলে বসে জানান, ডুবে যাওয়া জাহাজটিতে ৫শ মেট্রিকটনের মতো লাল রঙের এমওপি সার রয়েছে। জাহাজটির কিছু পিছনের অংশ ছাড়া সম্পূর্ণটাই পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। সারের লাল রং পানিতে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। ওই জাহাজের সংরক্ষিত তেলও পানিতে ছড়িয়ে পড়তে পারে এমন আশংকা কিন্তু রয়েছে । তবে, ডুবো জাহাজের মাস্টার ও নাবিক কোউই ঘটনাস্থলে নেই।
বেসরকারি গবেশনা সংস্থা সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেমনের চেয়ারম্যান ড.শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, সারের রাসায়নিক বিষক্রিয়ায় বিরল প্রজাতির ডলফিন, শুশুক, বিভিন্ন প্রজাতির মাছসহ সুন্দরবনের অন্যান্য জলজ প্রাণী আবারও মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছে।
খুলনা বিশ্ব বিদ্যালয়ের এ্যাগ্রো টেকনোলজি বিভাগের প্রফেসর সরদার সরিফুল ইসলাম জানান, সার গলে পানির গুণগত মান ও জলজ প্রাণির ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। সারবাহী জাহাজ ডুবির ঘটনাটি সুন্দরবন বিপর্যয়ের আরেকটি প্রধান কারণ বলে তিনি মন্তব্য করেন।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী বলেন, ডুবে যাওয়া পটাশ (এমওপি) জাতীয় এসারের বিষক্রিয়ায় গাছপালার চেয়ে জলজ প্রাণির ক্ষতির আশঙ্কা বেশি। জাহাজটি উদ্ধারের জন্য চেষ্টা চলছে বলে তাকে মালিক পক্ষ জানিয়েছে। তবে, গলিত সার পানিতে ফেলা হলে জাহাজটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এরআগে গত ৯ ডিসেম্বর পূর্ব সুন্দরবনের বাগেরহাটের চাঁদপাই রেঞ্জের শ্যালা নদীতে ফার্নেস তেলবাহী ‘সাউদার্ণ স্টার সেভেন’ নামের একটি জাহাজ ডুবে যায়। সেই জাহাজের ক্ষতিকর ফার্নেস অয়েলে সুন্দরবনের নদ-নদী প্রাবন ভূমিতে মিশে বনে মারাত্মক বিপর্যয় ঘটে। সুন্দরবন বাচাঁতে ছুটে আসে জাতীসংঘের বিষেজ্ঞরা। সেই থেকে এক মাস সুন্দরবনের অভ্যন্তর থেকে সব ধরণের জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকে। বিকল্প পথ না থাকায় পুনরায় জাহাজ চলাচল শুরু হয়। ওই ঘটনার ৫ মাসের মাথায় সুন্দরবনে ফের সারবাহী জাহাজ ডুবির ঘটনা ঘটল।