কাশ্মীরের পহেলগামে জঙ্গি হামলায় নিহত ২৬

SHARE

গতকাল, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ভারতের জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের অনন্তনাগ জেলার পহেলগাম শহরের কাছে বেইসারান মেঘা এলাকায় সন্ত্রাসী হামলায় অন্তত ২৬ জন নিহত ও ২০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ২৪ জন ভারতীয় পর্যটক, ২ জন স্থানীয় বাসিন্দা এবং ২ জন বিদেশি নাগরিক রয়েছেন। আহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর।

পহেলগাম, যা ‘মিনি সুইজারল্যান্ড’ নামে পরিচিত, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত একটি পর্যটন কেন্দ্র। বেইসারান মেঘা এলাকায় পর্যটকরা সাধারণত পিকনিক, ঘোড়ার পিঠে চড়া এবং স্থানীয় খাবার উপভোগ করেন। গতকাল দুপুর ২:৩০টার দিকে, সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা ওই এলাকায় প্রবেশ করে পর্যটকদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হামলাকারীরা প্রথমে পুলিশ পরিচয়ে পর্যটকদের কাছ থেকে নাম জানতে চায় এবং পরে হঠাৎ করে গুলি চালায়। তারা মুসলিম নয় এমন পর্যটকদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়।​

হামলার পর, ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (TRF) নামক একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী এই হামলার দায় স্বীকার করেছে। তারা দাবি করেছে, জম্মু ও কাশ্মীরে ৮৫,০০০-এরও বেশি বাইরের লোকের বসবাসের ফলে জনসংখ্যার ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে, যা তাদের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক পরিচয়ের জন্য হুমকি।​

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই হামলাকে ‘অমানবিক ও কাপুরুষোচিত’ বলে অভিহিত করেছেন এবং হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি তার সৌদি আরব সফর সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফিরে এসেছেন। ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনও হামলার নিন্দা করেছেন এবং দ্রুত তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।​

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এই হামলাকে ‘নিন্দনীয়’ বলে অভিহিত করেছেন এবং ভারতকে তাদের পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসও হামলার নিন্দা করেছেন এবং বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলাকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে উল্লেখ করেছেন।​

এই হামলা জম্মু ও কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এটি ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর সবচেয়ে বড় হামলা, যা ভারতের নিরাপত্তা পরিস্থিতি এবং পর্যটকদের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠিয়েছে।​

ভারত সরকার ইতোমধ্যে হামলার তদন্ত শুরু করেছে এবং হামলাকারীদের খুঁজে বের করতে নিরাপত্তা বাহিনী অভিযান শুরু করেছে। পাহলগাম ও আশেপাশের এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে এবং পর্যটকদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।​

এই হামলা কাশ্মীরের চলমান সংঘাতের নতুন মাত্রা যোগ করেছে এবং অঞ্চলটির ভবিষ্যত নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।